• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

জালে ইলিশ, জেলেদের মুখে হাসি

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২০  

মঙ্গলবার সকাল ১১টা। চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট। সমুদ্র ফেরত জেলেদের হাঁকডাক। হাতে ইলিশ বোঝাই খাঁচা। মুখে হাসি। চারপাশে রুপালি ইলিশের ছড়াছড়ি। কথা বলারও ফুরসত নেই কারও। কথা হয় বাঁশখালীর জেলে রঞ্জিত দাশের সঙ্গে। বললেন, 'করোনায় বড় দুর্দিন কেটেছে। বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।'

এ ধরনের মন্তব্য চট্টগ্রাম থেকে মাছ ধরতে যাওয়া প্রায় সব জেলেরই। সাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। গত দু'দিনে সাগর থেকে ফেরা ট্রলার ও জেলেদের নৌকা ছিল ইলিশে ভর্তি। বাজারে দাম ভালো থাকায় খুশিও তারা। তবে দাম এখনও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে।

ট্রলার মালিক ও জেলেরা বলছেন, মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। পরিবেশ ভালো হলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। দাম থাকবে হাতের নাগালে। প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন সাগরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। করোনা মহামারির কারণেও গত মার্চ থেকে সাগরে যেতে পারেননি জেলেরা। দীর্ঘদিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকার সুফল মিলছে- বলছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক ড. রাশেদ উন নবী বলেন, 'এখনই ইলিশ মাছ ধরা পড়ার প্রকৃত সময়। ইলিশ লবণাক্ত পানির মাছ। কিন্তু এই মাছ মিঠা পানিতে ডিম দেয়। ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে প্রবেশ করে। ডিম ফুটে গেলে ও বাচ্চা বড় হলে ইলিশ সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাওয়ার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে। এ সময় বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা- মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনা থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ে। তাছাড়া দীর্ঘদিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।'

চট্টগ্রামের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারি ঘাটে গত মঙ্গলবার দেখা গেছে, চারদিকে সাগর থেকে আসা ইলিশের স্তূপ। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম ছিল ঘাট। ট্রলার মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, গত দু'দিনে ফিশারি ঘাটে অন্তত ৩০ থেকে ৫০টি ছোট-বড় ট্রলার ভিড়েছে। আকার ভেদে প্রতিটি ফিশিং বোটে ৫০ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত ইলিশ এসেছে। ফিশারি ঘাটের মতো একই অবস্থা দক্ষিণ কাট্টলীর রাসমণি ঘাটেও। তবে বুধবার থেকে মূলত সাগরের ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো ভিড়বে বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
ফিশারি ঘাটে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম ছিল ৫০০ টাকা, সাতশ' থেকে আটশ' গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা করে। রাসমণি ঘাটে ৮০০ টাকায় ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ পেয়েছেন ক্রেতারা। কয়েকশ' ট্রলার এখনও সাগরে আছে। এগুলো ফিরে এলে এ দাম আরও কমবে বলে জানা গেছে। পাইকারি ক্রেতার পাশাপাশি অনেক মৌসুমি ক্রেতা গাড়ি নিয়ে মাছ কিনতে এসেছেন। বাজারে ইলিশের দাম ভালো থাকায় বেজায় খুশি জেলেরা।

ফিশারি ঘাট মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলী বলেন, 'মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জালে ভালো মাছ ধরা পড়ছে। প্রতিটি ট্রলারে ১৫০ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত মাছ ধরা পড়ছে। দামও কম আছে।' উত্তর চট্টলা উপকূলীয় জলদাস সমবায় কল্যাণ সমিতির সভাপতি লিটন দাশ বলেন, 'এবার করোনায় লকডাউনের কারণে মার্চ থেকে জেলেরা সাগরে যেতে পারেননি। এরপর ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় গরিব জেলেরা খুব অসহায় দিনযাপন করেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি বরাদ্দ চাল ছাড়া কিছুই পাইনি। চার মাসের বেশি সময় রোজগার নেই। ধার করে অনেকে সাগরে যাচ্ছেন। এভাবে মাছ ধরা পড়লে ধার শোধ করে কিছু আয় হবে।' সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, 'পরিবেশ ভালো হলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি। এখন কিছু কিছু মাছ ধরার ট্রলার আসছে। বুধবার বিকেল থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত আরও বেশি ট্রলার মাছ নিয়ে আসবে। তখন হয়তো দাম আরও কমবে।'

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা