• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

পুলিশে ডিএসপি পদ সৃষ্টির উদ্যোগ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২০  

প্রত্যাশা অনুযায়ী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি হচ্ছে না। অথচ যোগ্যতা অর্জন করে শত শত ইন্সপেক্টর পদোন্নতির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষমাণ। কারণ, সংরক্ষিত পদের তুলনায় পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি।

এ সংকট নিরসনে পুলিশবাহিনীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ইন্সপেক্টরদের জন্য ক্যারিয়ার প্রণোদনা হিসেবে ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) পদ অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ডিএসপি পদধারীরা শর্তসাপেক্ষে এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পদ শূন্য না হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন বহু ইন্সপেক্টর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। সরাসরি এসআই পদে প্রবেশ করে চাকরি ৩০ বছর পার করলেও ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির দেখা মিলছে না অনেকের। এ কারণে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ তীব্রতর হচ্ছে। কেউ কেউ প্রাপ্য পদোন্নতি না পাওয়ার মানসিক কষ্ট নিয়ে চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছেন।

গত ১৮ জুলাই পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে ডিএসপি পদের বিষয়ে এক স্থানে বলা হয়, ক্যারিয়ার প্রণোদনা এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনে সার্বিক বিচেনায় ইন্সপেক্টরদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং সন্তোষজনক চাকরিকাল বিবেচনায় নিতে ‘ডিএসপি’ পদবিতে এএসপির দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে।

তবে ডিএসপি পদবি বাস্তব কোনো পদোন্নতি নয়, এটি ইন্সপেক্টরদের উচ্চতর পদে সাময়িক দায়িত্ব পালনকালীন পদবি মাত্র। পুলিশের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আনতে ডিএসপি অফিসারদের জ্যেষ্ঠতা, মেধা, দক্ষতা ও সার্ভিস রেকর্ড বিবেচনায় নিয়ে অস্থায়ীভাবে এএসপি পদে দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে।

যা হবে প্রয়োজনীয়তা ও পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে। সে ক্ষেত্রে ডিএসপি অফিসাররা র‌্যাংক ব্যাজ হিসেবে ২টি পিপস পরবেন এবং সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপিরা মৌলিক প্রশিক্ষণকালে ২টি পিপস এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর ৩টি পিপস পরবেন। এর ফলে ডিএসপি এবং এএসপিদের সঙ্গে র‌্যাংক ব্যাজের কোনো অসামঞ্জস্যতা তৈরি হবে না।

ডিএসপি পদে দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ৫টি শর্ত প্রযোজ্য হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইন্সপেক্টররা ডিএসপি পদবিতে সাময়িকভাবে এএসপি পদের দায়িত্ব পালন করলেও এএসপি পদে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে কোনো ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা পাবেন না। ডিএসপির দায়িত্ব জ্যেষ্ঠতা এবং সার্ভিস রেকর্ডের ভিত্তিতে দেয়া হবে।

একজন অফিসার ডিএসপি পদ থেকে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী অন্যান্য সব শর্ত পূরণসাপেক্ষে এএসপি পদে ক্যাডারভুক্ত হবেন। ডিএসপি পদবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টরদের বেতন গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হবে না এবং তারা কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবেন না। এ ছাড়া পঞ্চম শর্তে বলা হয়, যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এএসপি পাওয়া গেলে ডিএসপি অফিসারদের তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে।

এদিকে ডিএসপি পদে পদায়ন করে এভাবে শর্তসাপেক্ষে দায়িত্ব পালন করার ঘোর বিরোধী বেশিরভাগ ইন্সপেক্টর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ইন্সপেক্টর রোববার প্রতিবেদককে বলেন, ‘সিনিয়র স্যারদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এভাবে প্রণোদনা পদায়ন চাই না। যদিও শূন্যপদের তুলনায় পদোন্নতিপ্রত্যাশী যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক।’ তারা বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সার্ভিসে ক্যাডার কর্মকর্তারা প্রাপ্য পদোন্নতি সময়মতো নেয়ার জন্য শত শত সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করেছেন।

তাহলে আমাদের জন্য সেটি সৃষ্টি করতে বাধা কোথায়। পদ খালি হলে তিনি এএসপির রেগুলার পদে পোস্টিং পাবেন। এর আগ পর্যন্ত এএসপি হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন। অর্থাৎ সুপারনিউমারারির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তারা সেটি চান। কিন্তু এভাবে জোড়াতালি দিয়ে ডিএসপি পদ তারা চান না। এটি মর্যাদার প্রশ্ন। অনেকে ২৫-৩০ বছর চাকরি করছেন। সরাসরি এসআই পদে যোগ দিয়ে পরবর্তী সময়ে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু অনেকে ২০-২২ বছর ইন্সপেক্টর পদে পড়ে আছেন। কেউ কেউ অবসরে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা প্রকৃত সম্মান চান।’

অবশ্য কারও কারও ভিন্ন মতও আছে। তারা বলেন, আপাতদৃষ্টিতে এএসপির মূল পদ কিংবা ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির কোটা বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। সে কারণে তারা চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ডিএসপি পদের মতো সান্ত্বনাপুরস্কার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান। কিন্তু তারা ৫নং শর্তের ঘোর বিরোধী। এটি বাদ দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, পুলিশে বর্তমানে ইন্সপেক্টর পদসংখ্যা ৬ হাজার ৮৬৯টি এবং সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদ ১ হাজার ৩৮০টি। এএসপি পদের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৪৪১টি পদ ইন্সপেক্টরদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য, যা ইন্সপেক্টর পদের মাত্র ৬.৪২ ভাগ। ফলে ৯৩ ভাগ কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর পদ থেকেই অবসরে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া ইন্সপেক্টর পদ থেকে যারা অবসরে যান তাদের বেশিরভাগ পুলিশে এসআই পদে যোগ দেয়া কর্মকর্তা। চাকরিজীবনে তারা গড়ে ৮ বছর এসআই পদে চাকরি করার পর ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অর্থাৎ বাকি ২৫-৩০ বছর তাদেরকে একই পদের ঘানি টানতে হয়েছে। মূলত এ কারণেই পুলিশের নীতিনির্ধারক মহল ইন্সপেক্টরদের ক্যারিয়ার প্রণোদনা হিসেবে ডিএসপি পদে পদায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা