• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

কৃষিতে পরিবারে স্বামীর পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন উপকূলের নারীরা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২  

ছাগল-ভেড়া পালন ও শাক-সবজি চাষে পরিবারে স্বামীর পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা। পুরুষ নির্ভর হতদরিদ্র পরিবারের নারীরা শাক-সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালন করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন। ফলে স্বচ্ছলতা ফিরেছে উপকূলের হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলোতে।

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলীয় সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মাটি লবনাক্ত হওয়ায় হতদরিদ্র পরিবারগুলোর পুরুষরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধান কাটা ও ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ এবং খুলনা ও ঢাকাসহ দেশের বড়শহরগুলোতে রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে এসব পরিবারের নারীদের প্রয়োজনীয় কিছু পেতে দিনের পর দিন পুরুষদের উপর নির্ভর করে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো। এই অপেক্ষার পালাকে আরো ভারী করে তোলে প্রতি বছরের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বর্তমানে দিন বদলের যাত্রায় এসব অঞ্চলের নারীরা এখন পরিবারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এমনকি সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহনও করছেন অনেক নারীরা। জাতীয় পর্যায়ের একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক বেসরকারি উন্নয়ন মূলক সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের সহযোগিতা নিয়ে দুই উপজেলার নারীরা এখন স্বাবলম্বী। অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ। এখন তারা স্বামীর আয়ের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না থেকে টুকিটাকি খরচ নিজেরাই বহন করছেন। অনেকেই পুরো সংসারই পরিচালনা করছেন।

ট্রানজিশন ফান্ড প্রজেক্ট (এএসডি) এর মাধ্যমে আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, প্রতাপনগরের গোকুলনগর, সোনাতন কাটি, চাকলা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী, ঝাপা, সোনাখালী, চন্ডিপুর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মিরগাং, পার্শেখালী, টেংরাখালী গ্রামের জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয় গৃহিণীদের ছাগল, ভেড়া, মৌসুম ভিত্তি বছরে ২ বার বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি বীজ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসব ছাগল, ভেড়া পালন এবং শাক-সবজি চাষ করে নারীরা স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হচ্ছেন।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের অরুণ মন্ডলের স্ত্রী পুতুল রানী জানান, স্বামীর উপার্জনের উপরই নির্ভর করে সংসার চলতো। ফ্রেন্ডশিপের এএসডি প্রকল্পের সহযোগিতা নিয়ে প্রথমে বাড়ির অঙ্গিনায় সবজী চাষ করেছিলাম। সবজির ফলন ভালো হওয়ায় নিজেরা খাওয়ার পর বাজারে বিক্রয় করে গত বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১২-১৪ হাজার টাকা হাতে এসেছে। চলতি শীত মৌসুমে বড় পরিসরে বাড়ির আঙ্গিনাসহ পাশের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছি। এখন সংসারে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে পারি। নিজের উপার্জনের টাকা থেকে সন্তানের লেখাপড়ার কিছু খরচও দিতে পারি।

একই ইউনিয়ানের পাতাখালী গ্রামের মোঃ আব্দুল ওয়াহিদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, অভাবের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির স্বামীর উপর নির্ভরশীল ছিলাম। বর্তমানে ফ্রেন্ডশিপের দেওয়া ছাগল পালন শুরু করে অনেক লাভবান হয়েছি। একটি ছাগল থেকে ১৪টি ছাগলের মালিক হয়েছিলাম। তা থেকে ৪টি ছাগল একসঙ্গে বিক্রি করে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে নরম কাঁকড়া উৎপাদনের পয়েন্ট করেছি। স্বামী এবং বড় ছেলের এখন আর সুন্দরবন বা ইটভাটায় যেতে হয় না। ফলে আমাদের দরিদ্র সংসার অনেক স্বচ্ছল হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ মাহবুর রহমান বলেন, তারা বিনামূল্যে ছাগল-ভেড়া ও হাসঁ বিতরণ করছেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। আধুনিক পদ্ধতিতে প্রাণীসম্পদ পালনের প্রশিক্ষণ আমরা ইতিমধ্যে দিয়েছি। এছাড়া যখন যে টিকা আমাদের হাতে আসবে তা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ লতিফুল হাসান বলেন, লবণাক্ত এলাকায় উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি বীজ বিতরণ করছে ফ্রেন্ডশিপ সংস্থাটি। আমরাও ইতিমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষন নিয়ে উপকূলের অনেক নারী বাড়ির আঙ্গিনায় নানা রকম সবজি চাষ করছে।

ফ্রেন্ডশিপের প্রজেক্ট ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা দুই বছর যাবত একটি পরিবারকে বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়ে থাকি এবং পর্যবেক্ষণ করি। তাদের মূলধন গঠনে আমরা অবদান রাখার চেষ্টা করি। নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার অনেকই এখন স্বাবলম্বী। আগামী দিনগুলোতেও আমরা এধরণের কার্য়ক্রম নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবো।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা