• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

পূর্ণতার পথে পদ্মা সেতু

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২০  

মাওয়া গোলচত্বর থেকে প্রকল্প এলাকায় ঢোকার পথে খুব কড়াকড়ি ছিল আগেও। তবে সপ্তাহ দুয়েক ধরে বিশেষ অনুমতির সঙ্গে লাগছে আগত ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা। মাস্ক পরা চীনা পরীক্ষকরা আগত লোকজনের কপালের সামনে যন্ত্র ধরে তাপমাত্রার পাঠ দেখে তবেই যেতে দিচ্ছিলেন। গত বুধবার

বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে মাওয়া প্রকল্প এলাকায় পরীক্ষণ শেষে ঢুকেই চোখে পড়ল মাওয়া প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলো। তার আগে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসংলগ্ন সেতুর সংযোগ অংশও কাড়ল নজর। পদ্মা নদীর পারে তৈরি করে রাখা হয়েছে স্প্যান, রেলপথে বসানোর জন্য রেলওয়ে স্ল্যাব। সেতুটি হবে দোতলা—নিচে রেলপথে বসানো হবে ৩০০০ রেল স্ল্যাব, এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে ৫১২টি। প্রায় এক কিলোমিটার অংশে রেলপথের এ অবকাঠামো বসানো হয়েছে।

পদ্মা সেতুর জন্য ৪২টি পিয়ারের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৩৯টির। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২৫টি বসানো হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে সেতু চালু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পদ্মা সেতু চালু হলে দৈনিক গড়ে সাত হাজার গাড়ি পারাপার হবে।

এ পর্যন্ত সেতুর প্রায় চার কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে হচ্ছে এই পদ্মা সেতু। প্রকল্প এলাকায় এক লাখ ৫৮ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তা, চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা, চীনের সাংবাদিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও অন্য গণমাধ্যমকর্মী সঙ্গে মাওয়া থেকে জাজিরার দিকে যেতে ফেরিতে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট দেখা গেল পদ্মা সেতুর স্প্যানগুলো। কিছুদিন আগেও যা স্বপ্ন ছিল, তা চোখের সামনে দেখে মুগ্ধ সবাই। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও বিমুগ্ধ। বেশির ভাগই স্থির ও চলমান চিত্র ধারণ করছিলেন ক্যামেরায়। মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদেরও ছিলেন দলে। মুখে নীলাভ মাস্ক, শরীরে জড়ানো বেগুনি রঙের জীবন রক্ষাকারী পোশাক, মাথায় নিরাপত্তা টুপি। দূরে চোখ প্রসারিত করে বললেন, সেতু তো হয়েই যাচ্ছে। রামপাল থেকে বিদ্যুৎ আসবে, নদীর ওপর সরবরাহ লাইনও হচ্ছে। লাইনগুলো বসানোর জন্য কী কাজ হয়েছে তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন আঙুল দিয়ে।

ফেরির ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর দর্শনার্থী সবার মাথায় লাল রঙের নিরাপত্তা টুপি, শরীরে জড়ানো জীবন রক্ষার পোশাক, মুখে মাস্ক। প্রকল্পের শুরু থেকেই নিবিড়ভাবে যুক্ত আবদুল কাদেরের মুগ্ধতা শেষ হয় না। বললেন, প্রকল্পে চীনের ৯৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখনো ফেরেননি ১৭২ জন। তাঁদের বেশির ভাগ দক্ষ কর্মী। জানা গেল, চীন থেকে দক্ষ কর্মীর সংকট মোকাবেলায় শতাধিক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চীন থেকে ফিরতে না পারা কর্মীরা দক্ষ। তাঁদের কাজ বিকল্প পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। যেমন স্প্যান তৈরির জন্য যেসব অংশ জোড়া লাগাতে ঝালাইয়ের দরকার তার জন্য চীনা দক্ষ কর্মীর বদলে রোবেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঢাকায় অবস্থানরত চীনা নাগরিক ও সাংবাদিক আনন্দী ইউ ছিলেন দর্শনার্থীদের দলে। নিজের চোখে প্রথমবারের মতো সেতুর অবকাঠামো দেখে ভীষণ খুশি তিনি।

৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর প্রায় চার কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১০ মার্চ সেতুর ২৬তম স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে। ২৭তম স্প্যানও বসানো হবে এ মাসেই।

প্রকল্পের সব শেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৮৬.৫০ শতাংশ এবং নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৭০ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। জাজিরা অংশে ১৩টি এবং মাওয়া অংশে ১২টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে এরই মধ্যে। বাকি খুঁটিগুলোর ওপর বসানো হবে ১৬টি স্প্যান। এ কাজ আগামী জুলাইয়ে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ উন্নয়নকাজ এগিয়েছে ৮১ শতাংশ,  ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৭৯৩টি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা