• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

কষ্টে চলছে মাটির চুলার কারিগরদের জীবন

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২২  

বাগেরহাটে ভৈরব নদের পাড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মাটির চুলা তৈরি করা হচ্ছে। নারীরা নিজেদের দক্ষতা আর সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে চুলা তৈরি করছেন। ওই নদের পাড়ে সাজিয়ে রেখে চুলা বিক্রি করা হয়। কয়েক যুগ ধরে শহরের ভৈরব নদের পাড়ে এই মৃৎশিল্পের দেখা মেলে। সেই চুলা তৈরির কারিগরদের কষ্টের শেষ নেই। নদীর পাড়ে ঝুঁপড়ি ঘরেই তাদের সংসার। সরকারের কাছে বারবার সহায়তার দাবি জানাচ্ছেন তারা। 

জানা গেছে, এলাকায় মাটি দিয়ে তৈরি করা চুলার ঐতিহ্য রয়েছে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় রান্না-বান্নার মূলভিত্তি ছিল মাটির চুলা। শহর-বন্দর-গ্রাম থেকে সর্বত্রই চুলার ব্যবহার রয়েছে। হউক সে মাটির চুলা বা অন্য কোন চুলা। চুলা ছাড়া রান্না অসম্ভব। বাগেরহাট ভৈর নদের চর থেকে মাটি তুলে শহর রক্ষা বাঁধের পাশে তৈরি করা হচ্ছে গ্রামীণ মাটির চুলা। কারিগড়রা একমুঠো দুইমুঠো করে একের পর এক মাটি সাজিয়ে তৈরি করেন চুলা। নিপুন হাতের ছোয়ায় ধীরে ধীরে মাটির চুলায় সৌন্দয্য পায়। শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান আর বাসাবাড়িতে যারা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে তারাই মাটির চুলা ক্রয় করে। ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় এক একটি মাটির চুল। শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান আর বাসাবাড়িতে যারা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে তারাই মাটির চুলা ক্রয় করে। দেশে নানা ধরণের চুলার ব্যবহার থাকলেও মানুষের কাছে এখনও মাটির চুলার কদর রয়েছে। আর যারা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করেন তাদের রান্নার জন্য মাটির চুলাই ভরসা। 

চুলা তৈরির কারিগর রাজিয়া বেগম প্রায় দুই যুগ ধরে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। রাজিয়ার মা'ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভৈরব নদের পাড়ে ঝুঁপড়ি ঘরে থেকে চুলা তৈরি করেছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজিয়ার স্বামী কামরুল ইসলাম নিরুদ্ধেশ রয়েছেন। এক ছেলে নিয়ে রাজিয়ার সংসার। চুলা বিক্রি করে তার সংসার চলে। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবারের জন্য রাজিয়াকে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়।
মাটির চুলা তৈরির আর এক কারিগর জোসনা বেগম। সেও ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা। প্রায় ৩০ বছর ধরে জোসনা বেগম মাটির চুলা তৈরি করছেন। ৮ বছর আগে তার স্বামী আসলাম হওলাদার মারা গেছেন। তারও সংসার চলে চুলা বিক্রির টাকায়। শুধু রাজিয়া আর জোসনা বেগম নয় আরো বেশ কয়েকজন নারী ভৈরব নদ থেকে মাটি তুলে চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। গ্রামীণ মাটির চুলা তৈরির এসব কারিগরদের সংসার চলে অনেক কষ্টে।

মাটির চুলা তৈরির কারিগর রাজিয়া বেগম জানান, নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে একমুখ ও দুই মুখসহ বিভিন্ন সাইজ এবং নানা ডিজাইনের চুলা তৈরি করে। একটি চুলা বিক্রির উপযোগী হতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। একটি চুলা ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদের পাড়ে ঝুঁপড়ি ঘরে থেকে সে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছে। স্বামী নিরুদ্দেশ থাকায় এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবার জোটেনা। নিজের ঘর না থাকায় নদের পাড়ে ঝুঁপড়ি ঘরে তার জীবন চলছে। একটি ঘরের জন্য দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও আজও পর্যন্ত ঘর মেলনি।  সরকারের কাছে একটা ঘর দাবী করেন রাজিয়া।

জোসনা বেগম জানান, আমাদের কষ্টের কোন শেষ নেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করে আসছি। অনেক কষ্টে দিন চলছে। এখনো মানুষের কাছে মাটির চুলার কদর রয়েছে। সরকারি সহযোগীতা পেলে মাটির চুলা বিক্রি করে তারা সাবলম্বী হতে পারে। 

মাটির চুলার ক্রেতা চা দোকানি আলমগীর হোসেন এবং গৃহবধূ নাজমা বেগম জানান, এখনো তারা জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করেন। একারণে রান্নার জন্য মাটির চুলাই তাদের ভরসা। বিভিন্ন সময় তারা ভৈরব নদের পাড়ে এসে চুলা ক্রয় করে নিয়ে যান।

মাটির চুলা ক্রেতা লাবণী বেগম ও কুলসুম বেগম জানান, তাদের বাসা বাড়িতে প্রধান জ্বালানী হিসেবে গ্যাস রয়েছে। রান্না করতে করতে হঠাৎ গ্যাস শেষ হলে বিকল্প হিসেবে তারা মাটির চুলায় রান্নার কাজ সারেন। এজন্য তাদের বাসায় গ্যাসের চুলার পাশাপাশি মাটির চুলার ব্যবহার রয়েছে। 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজু রহমান জানান, যে সব নারীরা মাটির চুলা তৈরি বিক্রি করছেন তারা এক ধরণের শিল্পী। তাদের ওই শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হলে ক্ষুদ্র ঋণ এবং প্রশিক্ষণ ও তৈরি করা চুলা বাজারজাত করণে সহযোগীতা করা হবে। 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা