• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ইয়াসে বেশি বিপন্ন সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ,৪টি মৃত-২টি জীবিত উদ্ধার

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২১  

ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে অধিক বিপন্ন অবস্থায় পড়ে সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত কয়েকটি ঝড়ের তুলনায় এবার বেশি হরিণের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে ম্যানগ্রোভ এই বনের ওপর দিয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। যা পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত উঠে যায়। এতে হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি তাদের আশ্রয় হারিয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বেশি সংকটে পড়েছে স্ত্রী প্রজাতির চিত্রল হরিণ।

গত দুই দিনে দুটি জীবিত ও চারটি মৃত হরিণ উদ্ধার হয়েছে লোকালয় থেকে। যার সবগুলোই স্ত্রী হরিণ। বানের পানির তোড়ে বনসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ভেসে আসে এসব হরিণ। জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণির আরো ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা করছে বনবিভাগ ও বন সুরক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠন।

অপরদিকে, ঝড়ের তান্ডবে পূর্ব সুন্দরবনের অবকাঠামো, সড়ক, জলযান, গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে ক্ষয়ক্ষতির মূল্য ৬০লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে প্রভাবে সুন্দরবনের কোথাও পাঁচ ফুট আবার কোথাও সাত ফুট পর্যন্ত জোয়ারের পানি উঠে যায়। পানির ¯্রােতে হরিণসহ বন্যপ্রাণি ভেসে যায়। এপর্যন্ত চারটি মৃত ও দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে।

এসিএফ জানান, বৃহস্পতিবার (২৭মে) সকালে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদসংলগ্ন চাল রায়েন্দা এলাকা থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এছাড়া, পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোড় ইউনিয়নের উলুবাড়িয়া ও আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রাম থেকে দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়। আগেরদিন বুধবার দুপুরে সুন্দরবনের দুবলা ও কচিখালী থেকে দুটি এবং বিকেলে শরণখোলা উপজেলা সদরের রাজেশ্বর গ্রামের বলেশ্বর নদ থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার হয়। উদ্ধার হওয়া জীবিত ও মৃত সবগুলো হরিণই স্ত্রী হরিণ। এবং সবগুলোই গর্ভবতী। জীবিত হরিণ দুটি বনে অবমুক্ত করা হয় এবং মৃতগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

এসিএফ জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঝড়ে শরণখোলা রেঞ্জের দুটি রেস্ট হাউস, দুটি বন অফিস, একটি ব্যারাক, একটি ফুট ট্রেইল, ১০টি জেটি, ১৫টি সড়ক, মিষ্টি পানির চারটি পুকুর, একটি জলযান ও গাছপালার ক্ষতির হিসাবে ৩০লাখ টাকার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরী করা হবে।

সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) শরণখোলার সহসভাপতি এম ওয়াদুদ আকন ও ওয়াইল্ড টিমের মাঠ কর্মকর্তা মো. আলম হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গত বছরের আম্ফান ও এর আগের কয়েকটি ঝড়ের চেয়ে এবার ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়েছে। যার কারণে হরিণ মারা গেছে বেশি। তাছাড়া বনের অন্যান্য বন্যপ্রাণিরও মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আরো বন্যপ্রাণি মারা যেতে পারে। শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে প্রাথমিকভাবে ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের আওতাধীন বনের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সকল বনরক্ষীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা