• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বেড়িবাঁধ ও ৩১টি স্লুইস গেট এখন শরণখোলাবাসীর গলার কাটা!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ এবং ৩১টি স্লুইস গেট এখন শরণখোলাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেটগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি নামছে না। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ফসলের মাঠ, সবজি ক্ষেত, পুকুর, ঘের, রাস্তা-ঘাট, এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার (২৭জুলাই) থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।


প্রায় এক সপ্তাহেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে সবাই। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর একটি টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য আন্দোলন করেছে যে মানুষগুলো তারাই এখন বলছে এমন মরার বাঁধ তাদের দরকার নেই। স্বাধীনতার পর এতো পানি তারা আর দেখেনি কোনোদিন।

এদিকে, শনিবার (৩১জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ শরণখোলায় পরিদর্শন করেন। এমময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানিবন্দি শত শত মানুষ দ্রুত পানি নিষ্কাশন এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা থেকে দ্রুত ফসল, সহায়সম্পদ, ঘরবাড়ি রক্ষা করতে বহু কাঙ্খিত সেই বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ারও দাবি করেন ক্ষুব্ধ জনতা। বিষয়টি উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে অবহিত করে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন পাউবোর এই কর্মকর্তা। অপরদিকে, এদিন রাত ৮টায় শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলমান সংকট নিরসনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জনপ্রতিনিধি, পাউবোর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ভোলা-বলেশ্বর নদ বেষ্টিত বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় ষাটের দশকে বেড়িবাঁধ নির্মান হয়। সেই থেকে নদী ভাঙনের ফলে বাঁধ স্থানান্তর হয় কয়েকদফা। ভাঙনের কবলে পড়ে একপর্যায়ে বাঁধ এবং নদীর পানি একই লেবেলে চলে আসে। সামান্য জোয়ার হলেই তলিয়ে যেতো সবকিছু। ২০১৫সালের ১৫নভেম্বর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বাঁধসহ শরণখোলার সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এর পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিআইপি-১) মাধ্যমে ২০১৬ সালে ২৬ জানুয়ারি শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে চায়নার (সিএইচডব্লিউই) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪টি নতুন ও দুইটি মেরামতসহ ১৬টি ড্রেনেজ স্লুইস গেট এবং ১২টি নতুন ও ৩টি মেরামতসহ ১৫টি প্লাশিং স্লুইস গেটসহ মোট ৩১টি গেট নির্মাণ করা হয়। যা এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত না। তাছাড়া, বাঁধের কাজ এখনো চলমান থাকায় এসব গেটের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সচল হয়নি। যার ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে পানি নিষ্কাশনের পরিমানও কম হওয়ায় দুর্ভোগ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এদিকে, বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা ২০১১ সাল থেকেই এলাকা জরিপ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে। কিন্তু এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধি কারোর সঙ্গেই আলোচনা বা মতামত গ্রহন করেনি তারা। এমনকি বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে এপর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। এ কারণে শুরু থেকেই নানা অনিয়নের অভিযোগ উঠলেও বাঁধের ডিজাইন বা এর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারেনি আজও।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁধ শুধু উচু হয়েছে, কিন্তু তা অন্তসার শূন্য। কাজের মান খুবই খারাপ। গোপনে এলাকা জরিপ করে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। ৬২ কিলোমিটার বাঁধে কমপক্ষে ৫০টি স্লুইস গেট প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে করা হয়েছে মাত্র ৩১টি।


উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন, খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন, রায়েন্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রশিদ আকন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, শরণখোলাবাসী এমন জলাবদ্ধতা কখনো দেখেনি। সবজি ও অন্যান্য ফসল শেষ হয়ে গেছে। আর দু-একদিন এমন থাকলে আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ পঁেচ যাবে। বৃষ্টির পানিতে উপজেলার অন্তত ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। অপরিকল্পিত স্লুইসগেটের কারনে এমনটি হয়েছে। দ্রুত পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণ করা না হলে শরণখোলার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, নির্মাণাধিন বেড়ি বাঁধের স্লুইসগেটগুলো আগের তুলনায় অনেক ছোট এবং অপর্যাপ্ত। তাই একটি লকগেট এবং আরো স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, অতিবৃষ্টিতে বর্তমানে শরণখোলায় ৫৫ হাজারের বেশী মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এঅবস্থা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরী করা হয়েছে। সুপারিশগুলো জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে সোমবার একনেকের সভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একটি সুপারিশ প্রেরন করা হবে।

বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোারেলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, সংকট নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারদের দ্রুত প্লান তৈরী করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা