• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

মরা গাছের উপর কোরআনের রেহালের নান্দনিক ভাস্কর্য

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২২  

বাগেরহাটে অর্ধশত বছর বয়সী মৃত মেগনি গাছের উপরে মুসলিম ধর্ম গ্রন্থ আল কোরআনের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। নান্দনিক এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা। ব্যতিক্রমী এই ভাস্কর্য দেখে খুশি সকলে। শুধু মুসলিম নয় বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষেরা আসছেন এখানে। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এই ভাস্কর্য তৈরি করেছেন সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এম এ মতিন।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মতিন। এরপর থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে জনকল্যাণমুখী এবং শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গড়তে নানারকম পদক্ষেপ নেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আধুনিক মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদের ম্যাপ, শহীদ মিনারসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেন তিনি। এরইমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে থাকা অর্ধশত বছর বয়সি রেইনট্রি অর্থাৎ মেগনি গাছ মারা যায়। বিশালাকৃতির মৃত মেগনি গাছকে কেটে বিক্রি না করে সৃজনশীল কিছু করার উদ্যোগ নেন চেয়ারম্যান। পরিষদের সকল সদস্যের সম্মতিতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে  মৃত গাছের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআনের রেহালের ভাস্কর্য তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। খুলনা ও বরিশাল এলাকার ৫ জন কাঠ মিস্ত্রি ৯ মাসের চেষ্টায় তৈরি করেছেন ১৫ ফুট উচ্চতার রেহাল। এদের সাথে কয়েকজন রাজ মিস্ত্রিও কাজ করেছেন কিছু দিন। নান্দনিক রেহালটিতে কোরআনের দুটি আয়াত, কালিমায়ে তৈয়্যেবা এবং কালিমায়ে শাহাদৎ লেখা রয়েছে। গাছের চার পাশে ঘীরে দেওয়া হয়েছে মারভেল পাথর দিয়ে। সুসজ্জিত আলোক সজ্জায় রাতের আধারেও উপভোগ করা যায় রেহালের সৌন্দর্য্য। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লী ও দর্শনার্থীরা আসেন রেহাল দেখতে। আকর্ষনীয় ও ব্যতিক্রমী এই রেহালের ভাস্কয্র্ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সদ্য বিদায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মতিন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরকে অনেক অর্থবহ করে সাজিয়েছেন। চত্বরে একটি মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, ম্যাপ ও পরিষদে প্রবেশদ্বারে একটি আধুনিক গেট তৈরি করেছেন। সর্বশেষ চত্বরে মৃত মেগনি গাছের উপর কোরআন শরীফের রেহালের একটি প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। এটির এক পাশে কলেমা তৈয়াবা, সূরা ফাতিহাসহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত লিখেছেন। যা দেখলে মানুষের মধ্যে পরকালের চিন্তা ভাবনা আসে। এই ধরনের সৃজনশীল কাজ স্বাভাবিক দেখা যায় না। ব্যতিক্রমী এই ইসলামীক ভাস্কর্য্য দেখতে অনেক লোক আসেন এখানে।

কচুয়া থেকে রেহাল দেখতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, শুনেছি যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি কাঠের রেহাল তৈরি হয়েছে। তাই দেখতে আসলাম। স্থাপনাটির রং, শরীরের লেখা ও নির্মান শৈলি আমাদের মুগ্ধ করেছে। কাঠের উপর এমন আকর্ষনীয় নির্মান শৈলি সহজে দেখা যায় না।

যাত্রাপুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ রেহাল দেখতে আসেন। আমাদের খুবই ভাল লাগে।

রেহাল দেখতে আসা শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, কাঠের উপর এত সুন্দর ভাস্কর্য্য হয় এখানে না আসলে তা বুঝতাম না। বন্ধুদের সাথে এখানে এসে আমাদের খুব ভাল লেগেছে।

সদস্য বিদায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মতিন বলেন, ২০১১ সালে জনগনের প্রতক্ষ ভোটে আমি এখানের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এরপর থেকে ইউনিয়ন বাসীর কল্যানসহ উন্নয়ন মূলক কাজ করেছি নিরবে। পরিষদ চত্বরে মসজিদের সামনে থাকা দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি রেইনট্রি গাছ হঠাৎ করে মারা যায়। গাছটি মারা যাওয়ার পরে না কেটে এটিকে সৃজনশীল কাজে লাগানোর চেষ্টা করি আমরা। এক পর্যায়ে সবার সম্মতিতে এই গাছের উপর সৌদি আরবের কোরআন গেটের আদলে কোরআনের রেহালের ভাস্কর্য্য নির্মান শুরু করি আমরা। ৫-৬ জন শ্রমিক ৮-৯ মাস চেষ্টা করে এই রেহাল তৈরি করে। এই কাজ সমাপ্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।

এমএ মতিন আরও বলেন, ভৈাস্কর্য্যটি তৈরি হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে দেখতে আসেন। ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। এই রেহালকে কেন্দ্র এই চত্বরটি এক সময় দর্শনীয় স্থানে রুপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বেগ এমদাদুল হক বলেন, বিদায়ী চেয়ারম্যান এমএ মতিন ইউনিয়ন পরিষদকে অনেক ভালভাবে সাজিয়েছেন। কাঠ দিয়ে রেহাল তৈরির ফলে পরিষদের সৌন্দর্য্য অনেকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এমএ মতিনকে আমি স্বাগত জানাই। এই রেহাল দেখতে প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থীরা আসছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরও বেশি দর্শনার্থী আসেন। ইউনিয়ন পরিষদকে জনকল্যান মুখি ও দর্শনার্থী বান্ধব করে আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা