• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে প্রণব ঘোষ জমি দিলেন মসজিদে, মিজানুর রহমান শ্মশানে

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২২  

বাগেরহাটের ফকিরহাটে দুই ধর্মের দুইজন ব্যক্তি বিপরীত ধর্মের উপসানালয়ের জন্য জমি দান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সম্প্রতি তাদের সম্মাননা দিয়েছে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সমাদৃত হচ্ছে তাদের মহৎ কর্ম।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফকিরহাট বিশ্বরোড সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন কোনো মসজিদ ছিল না। স্থানীয় মুসল্লিরা অনেক দূরের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন। মুসলমানদের এই সমস্যা সমাধানে ২০০৯ সালে মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য ৩৫ শতক জমি দেন ফকিরহাট কাজী আজহার আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রণব কুমার ঘোষ। জমি বাবদ নাম মাত্র মূল্য নেন তিনি। এরপর থেকে স্থানীয় ও যাত্রাপথে থাকা অসংখ্য মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। এছাড়া মসজিদে নারীদের নামাজের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। 

অন্যদিকে তিন বছর আগে একই এলাকায় ভৈরব নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের শ্মশান। ফলে শেষকৃত্য করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছিল সনাতন ধর্মালম্বীদের। এই অবস্থায় ফকিরহাট উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দান করেন। তবে কতটুকু জমি দিয়েছেন তা জানাতে রাজি হননি তিনি। 

মসজিদের জন্য জমিদাতা ফকিরহাট কাজী আজহার আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, আমরা এই এলাকায় হিন্দু-মুসলমানরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। সবাই সুখ-দুঃখ পরস্পর ভাগাভাগি করে নেই। ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মার্কেট এলাকায় দীর্ঘ দিন মুসলমান ভাইদের জন্য মসজিদ ছিল না। আমি তখন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলি কিছু জমি দান করি। পরবর্তীতে এখানে নারীদের নামাজের জায়গা করা হয়েছে। 

শ্মশানের জন্য জমিদাতা শেখ মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগে ভৈরব নদ পুনঃখননের কারণে প্রায় দুইশ বছরের পুরাতন শ্মশানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে হিন্দু ভাই-বোনদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। আমি অন্য ধর্মের লোক হলেও তাদের এই সমস্যা আমার অনুভূতিতে আঘাত করে। তখন নদীর পাশে থাকা আমার জায়গা শ্মশানের জন্য উৎসর্গ করি। 

মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. গাউসুল আলম বলেন, আমাদের এই বিশ্বরোড এলাকার কাছাকাছি মসজিদ না থাকায় আমাদের নামাজ পড়তে বেশ অসুবিধা হতো। পরবর্তীতে প্রণব বাবু নিজ উদ্যোগে নাম মাত্র মূল্য নিয়ে মসজিদের জন্য জায়গা দিয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

হাঙ্গার প্রজেক্টের উপজেলা পিএফজি (পিস ফ্যাসিলেটেটর গ্রুপ) কমিটির সমন্বয়কারী মো. আরিফুল হক বলেন, ফকিরহাট উপজেলায় হিন্দু ধর্মের মানুষের মসজিদে এবং মুসলমানের শ্মশানের জন্য জমিদান সত্যিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের এই মহত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৩ এপ্রিল হাঙ্গার প্রজেক্টের মাধ্যমে সম্মাননা দেওয়া হয়। 

ফকিরহাট আজাহার আলী কলেজের শিক্ষক আবুল আহসান টিটু বলেন, ভৈরব নদ পুনঃখননের ফলে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্মশানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেসময় এখানে মরদেহ সৎকারের জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন স্থানীয় শেখ মিজানুর রহমান শ্মশানের জন্য জায়গা দান করেন। অন্যদিকে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী মসজিদের জন্য জায়গা দিয়েছেন। দুটি ঘটনাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত। 

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ বলেন, আমাদের পরিচিতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঞ্চল হিসেবে। এখানের মানুষ একদিকে যেমন স্ব-স্ব ধর্মে নিষ্ঠাবান, অপরদিকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহযোগিতায়ও ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী। তারই প্রতিফলন ঘটেছে একজন সনাতন ধর্মালম্বীর মসজিদে ও একজন মুসলমানের শ্মশানে জমিদানের মধ্যদিয়ে। আমি তাদের এ ধরনের মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি পারস্পরিক সহমর্মিতার এই নিদর্শন যেন সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয় সেই অনুরোধ জানান তিনি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা