• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

স্বপ্নের পদ্মা সেতুঃ সুদিন আসবে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২  

অপার সম্ভাবনার পদ্মাসেতু নিয়ে স্বপ্ন বুনছে দেশবাসী। স্বপ্ন দেখছে দুই বিশ্ব ঐতিহ্যের জেলা বাগেরহারে মানুষও। সেতু উদ্বোধণের সাথে সাথে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে পর্যটন খাতে। কর্মসংস্থান হবে কয়েক হাজার মানুষের। ইনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাটের ১৭ স্থাপনা ও সুন্দরবন ঘীরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। সেতুর চালুর ফলে দিনে দিনে ঘুরে যাওয়ার সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাবে এই অঞ্চলে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন জেলার সরকারি-বেসরকারি পর্যটন খাতের আয় ব্যপ্তি বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুন।

জেলা প্রশাসন ও প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটিই অবস্থিত বাগেরহাটে। একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে রয়েছে অপরদিকে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মজসিদসহ ইউনেস্কো ঘোষিত ১৭টি স্থাপনা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে পর্যটক এসেছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার জন। এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় এসেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এসেছেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার দর্শনার্থী। রাজস্ব আয় হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

সুন্দরবন টুরিস্ট ক্লাবের শেখ শাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দূর্ভোগে পড়তে হত মানুষদের। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা রুপ একেবারেই পাল্টে যাবে। ঘুরে দাড়াবে সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প।

মোংলার ট্রলার ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ইকো টুরিজমকেন্দ্র ও বন্য প্রাণি প্রজননকেন্দ্র করমজলকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা। মোংলা থেকে আধাঘন্টা ট্রলার চালিয়ে করমজল যাওয়া যায়। কিন্তু সড়ক পথে ভোগান্তি থাকার কারণে দর্শনার্থী কম আসত। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুন্দরবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের আয়ও বৃদ্ধিপাবে আল্লাহর রহমতে।

মোংলা জয়মনির ঘোল এলাকার বিজন কুমার রায় বলেন, সুন্দরবনের নিকটেই আমাদের  বসবাস। যার ফলে বন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সাথে আমাদের অনেকেই জড়িত। পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের পাশাপাশি সুন্দবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হলে আমাদেরও ব্যবসা বানিজ্য ভালো হবে, দর্শনার্থীরাও এসে বেশি আনন্দ পাবে।

স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সোহেল হোসেন বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বাগেরহাটে যে পরিমান দর্শনার্থী বর্তমানে ঘুরতে আসে, পদ্মা সেতু হলে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। দর্শনার্থী বাড়লে গাইডের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। ফলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

খানজাহান আলী (রঃ) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, পথের ভোগান্তির কারনে বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারনে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। পদ্মা সেতু খুলে দিলে, বছর জুড়ে পর্যটকদের আগমন ঘটবে বাগেরহাটে। চাপ থাকবে হোটেল-মোটেল গুলোতেও। নতুন নতুন হোটেল-মোটেল তৈরী হবে ফলে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও।

ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সেতু চালু হলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমবে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি হবে। এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

বাগেরহাট প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মোঃ যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু যে অমীত সম্ভাবনা দেখাচ্ছে তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারনার চেয়েও বেশি হবে। ফলে স্থানীয়রা দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা (হোম স্টে) করতে পারলে বেশ লাভবান হবে। এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরী করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার মোড়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ইতমধ্যে শেষ হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে এই সংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি সুন্দরবনকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে  অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষনাবেক্ষনের পাশাপাশি যাতায়েত ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি পদ্মা সেতুর হাত ধরে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এই খাতে ব্যাক আর্থিক উন্নতি ঘটবে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা