• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল পাচ্ছেন নারী শিশু ও কিশোরীরা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২২  

বাগেরহাটে কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছেন গ্রামের অবহেলিত নারী শিশু ও কিশোরীরা। গ্রামের হতদরিদ্র মহিলা শিশু ও কিশোরীরা এখন হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। বেশির ভাগই হতদরিদ্র ও গরিব শ্রেণির পরিবারের নারী, কিশোরীসহ অন্যান্য সদস্যরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন। সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে সরকারি ওষুধ। কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামের নারী, কিশোরীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে হাসপাতাল নামে পরিচিত। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সি.এইস.সি.পি) ছাড়া ডাক্তারদের ক্লিনিকে পাওয়া যায় না বলে জানান স্থানীয়রা। কমিউনিটি ক্লিনিক যেন বন্ধ না হয় এবং চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ করা হয় এ জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন এলাকাবাসী।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গ্রামের হতদরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে দুইদিন করে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, সপ্তাহে ৬ দিন বসেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এবং তিনদিন বসেন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও তিনদিন করে বসেন পরিবার কল্যাণ সহকারী। ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সে অনুসারে বাগেরহাটের ৯টি উপজলায় আছে ১৫০টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে ছুটির দিন ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হয়ে থাকে। নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা, কৈশোর সমস্যা সেবা ছাড়া ও ইপিআই কর্মসূচির সকল কার্যক্রম এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বাস্তবায়ন করা হয়।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইসসিপি) সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি কার্টুনে ৩০ পদের ওষুধ দুইমাসের জন্য নির্ধারণ করা থাকে। প্রতিমাসে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ১৫০০ পিস, এন্টাসিড ১২৫০ পিস, হিস্টাসিন ৫০০ পিস, এ্যামক্সসিলিন ২৫০ পিস, কট্রিম ৫০ পিমস, প্যারাসিটামল সিরাপ ২৪ পিস, মলম ৫০০গ্রাম এবং চোখের ড্রপ ১০পিস। সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি ও এলার্জি রোগীর সংখ্যাই প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে বেশি। আর এ ওষুধগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সিপলোসিন বেশি লাগে। তাই এ ধরনের ওষুধের চাহিদা বাড়ানো দরকার। এছাড়া চাকরি রাজস্ব খাতে না হওয়ায় কর্মঠ ও দক্ষ সিএইসসিপিরা চাকরি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন। যাতে মেধাবী ও দক্ষ কর্মী হারাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। চাকরি দ্রুত রাজস্ব না করলে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা প্রবল হয়ে উঠেছে। সিএইসসিপিদের প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয়। এ চাকরি রাজস্ব খাতে নেয়া হলে ডাক্তার, স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ), পরিবার কল্যাণ সহকারীরা (এফডবিউএ) নিয়মিত ক্লিনিকে আসবেন। চাকরি রাজস্ব না হওয়া এইসব কর্মকর্তা ক্লিনিকে না এসে সিএইসসিপিদের দিয়েই খাতায় উপস্থিতি স্বাক্ষর করানো হয় বলেও অনেকে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিএইসসিপি জানান, আমরাই একমাত্র ক্লিনিকের ভরসা। যদিও ডাক্তার, স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ), পরিবার কল্যাণ সহকারীদের (এফডবিউএ) ক্লিনিকে নিয়মিত আসার কথা থাকলেও তারা প্রায়ই আসেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে সবই করতে হয় আমাদের। মাস শেষে ক্লিনিকে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর এবং কেউ কেউ অগ্রিম স্বাক্ষরও করে নেন।
সরেজমিনে সদর উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে ক্লিনিক গুলোতে ওষুধের তীব্র সংকট। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বাইরে অপেক্ষা করছেন। আর ভিতরে সিএইসসিপি সালমা বেগম (৩৫) নামে রোগীর পেশার দেখছেন। মাসুদা সর্দি, জ্বর ও এলার্জিতে ভুগছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে দিলেন প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে। তিনি গতমাসে ৭৪৭জন রোগী দেখেছেন।
ওই ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক আল জোবারের হোসেন জানান, খানপুর ইউনিয়নে দুইটি কমিনিউটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ শতাধীক নারী ও কিশোরীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি একই ক্লিনিকের মাধ্যমে কিশোরীদের বিভিন্ন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে , যার ফলে মাতৃ মৃত্যুর হার অনেক অনেকাংশে কমে এসেছে।
রাখালগাছী ইউনিয়নের সুনগর কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা যায় সিএইসসিপি চঞ্চল মাহমুদ দুইনারী রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি গত মাসে ৮৬৮ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা মুসলিমা খাতুন সাথি (১৫) সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সমস্যার চিকিৎসা নিতে এসেছেন। উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসা দেয় কিনা জানতে চাইলে জানান তাকে কখনও দেখিনি। সিএইসসিপিদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যেতে হয়।
সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের দক্ষিন খানপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি কিশোর কুমার পাল জানান, দুই মাস পরপর ওষুধ পাওয়া যায়। একটি কার্টুনে ৩০ পদের ওষুধ থাকে। চাহিদার তুলনায় সরকার শতকরা ২৫ ভাগ ওষুধ সরবরাহ করতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিটি কমিনিউটি ক্লিনিকে আরো ওষুধ বরাদ্ধ দেওয়ার প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। গত মে মাসে তিনি ৬৩৪ জন রোগীকে সেবা প্রদান করেছেন।
জেলার ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি আল আমিন জানান, গ্রামের অধিকাংশ কিশোরী ও নারীরা বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন গত মে মাসে গর্ভবতী, শিশু ও সাধারণ রোগীসহ প্রায় ১ হাজার ৩০ জনকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি। চিকিৎসা নিতে আসা সাধনা রানী বিশ^াস (৪৫) জানান, ওষুধ কম হওয়ায় চাহিদা মত পাই না। এছাড়া বড় ডাক্তারাও এখানে তেমন একটা আসেন না। শুধু সিএইসসিপিরাই এসে থাকেন। তার কাছ থেকেই চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে থাকি।
চিকিৎসা নিতে আসা জয়নাব বেগম জানান, এখন আর কষ্ট ও টাকা খরচ করে শহরের হাসপাতালে যেতে হয় না। যদি বড় ডাক্তাররা ক্লিনিকে নিয়মিত আসতো চিকিৎসা আরো ভাল হতো। সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা এখান থেকেই নেই। ওষুধ নিতে টাকা দিতে হয় না। এছাড়া সরকার যেন বেশি বেশি করে ওষুধ সরবরাহ করেন বলেও তার দাবী।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মোল্লা জালাল উদ্দিন জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় ২০৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। জেলায় ২০৭টিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইসসিপি) আছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী দিয়েও সেবার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের নিয়মিত মনিটরিং করা হয় এবং সব গুলোতে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা