• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

অযত্ন অবহেলায় শাখারিকাঠী গণহত্যার স্মৃতি স্তম্ভ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২২  

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে রাজাকারেরা কচুয়ার শাখারীকাঠী বাজারে একটি গণহত্যা সংগঠিত করে। দীর্ঘদিন অযত্ন অবহেলায় ছিল গণ-হত্যার স্থানটি। বর্তমানে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও সেটি অযত্ন অবহেলায় রয়েছে।
প্রতি বছর ৫ নভেম্বর বাংলা ১৮ই কার্ওিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিমাই চন্দ্র দাসের উদ্যোগে শহীদদের উদ্দেশ্যে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়, সেখানে বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আসলেও আজ পর্যন্ত কোন উন্নতি হয়নি স্মৃতি স্তম্ভের।
নিহতদের পক্ষে আলোকদিয়া গ্রামের নিহত মতিলাল দাসের ছেলে আনন্দ মোহন দাস,মসনী গ্রামের নিহত কালিপদ দাসের স্ত্রী দুলালী রানী দাস বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত সরকারি ভাবে তেমন কোন অনুদান আমরা পায়নি। আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অধিকার পাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন। শাখারিকাঠি বাজারে হত্যা যজ্ঞের বিচার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা চির কৃতজ্ঞ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিমাই চন্দ্র দাস বলেন,১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর (বাংলা ১৭ই কার্ওিক) রাতে মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাঠীতে রাজাকারদের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা হামলার পরিকল্পনা করে এবং হামলা চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে ব্যর্থ হয়। এর জের ধরে পরদিন ৫ নভেম্বর (বাংলা ১৮ই কার্ওিক) শুক্রবার বিকালে শাখারিকাঠী বাজারে হাটের সময় স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী দোষরদের সহযোগী রাজাকাররা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষ সহ ৯০ জনকে একই সাথে হাতে হাত বেধে সারি বদ্ধভাবে দাড় করে গুলি করে। এদের মধ্যে ঘটনাস্থাল ৪২ জন সনাতন ধর্মীয় লোক শহীদ হন। তাদের মৃতদেহ একই সাথে দড়ি বেধে খালের ভিতর দিয়ে টেনে নিয়ে পাশবর্তী মোড়েলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর বিশখালী নদীর চরে এক সাথে মাটি চাপা দেয়। ওই সময় গুলি লাগার পর যারা পলিয়ে গিয়ে ছিল তারা অঙ্গহীন অবস্থায় কিছু দিন থেকে মারা গেছে।

তিনি আরো বলেন,স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও আজও অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ। ব্যক্তি উদ্যোগে গণ কবরটি ঘিরে রাখা ছিলো।
ঘটনাস্থলে মৃত্যু বরণ করেন, শাখারীকাঠী গ্রামের ভগবান দাসের পুত্র নকুল চন্দ্র দাস, নটবর চন্দ্র দাসের দুলাল চন্দ্র দাস, লক্ষন চন্দ্র দাসের পুত্র গনেশ চন্দ্র দাস, শান্তিরাম দাসের পুত্র মহাদেব দাস, কেনারাম দাসের পুত্র হরিপদ দাস, গোপালচন্দ্র দাসের পুত্র শাতোরাম দাস, মসনী গ্রামের কেনারাম দাসের পুত্র শাতোরাম দাস, প্রিয়নাথ দাসের পুত্র বাসুদেব দাস, রাম চন্দ্র দাসের পুত্র নিত্যা নন্দ দাস, কালিপদ দাস, ফটিক লাল দাসের পুত্র রাম কৃষ্ণ দাস, আলোকদীয়া গ্রামের সোনারাম দাসের পুত্র মনি লাল দাস, অন্যদা চরণ দাসের পুত্র যতিন্দ্র নাথ দাস, মধুসুধন দাসের পুত্র মহাদেব দাস, বিপিন বিহারী দাসের পুত্র অধীর চন্দ্র দাস।
রঘুদত্তকাঠী গ্রামের যোগেন্দ্র নাথ দাসের বসন্ত কুমার দাস, প্রহ্লদ চন্দ্র দাসের শৈলেন্দ্র নাথ দাস, গনেশ চন্দ্র দাসের পুত্র দিজবর চন্দ্র দাস, রাজেন্দ্র নাথ দাসের পুত্র অনিল চন্দ্র দাস, শশিভুষন দাসের পুত্র নিরঞ্জন কুমার দাস, রামচন্দ্রপুর গ্রামের গুরু চরণ দাসের পুত্র মতি লাল দাস, রামচরন দাসের পুত্র নারায়ন চন্দ্র দাস, প্রমোথ দাসের পুত্র বিনোদ বিহারী দাস, কেশব লাল দাসের বাসুদেব চন্দ্র দাস, মনি লাল দাসের পুত্র অমর কৃষ্ণ দাস, বাদখালী গ্রামের শশধর হালদারের পুত্র কৃষ্ণ লাল হালদার, আঠারোগাতী গ্রামের হরসিত কুমার বসুর পুত্র সুবোধ কুমার বসু, নিশিকান্ত করের পুত্র প্রমোথ কুমার কর,বকশি রাল মিত্রের পুত্র নিরঞ্জন চন্দ্র মিত্র, শখি চরণ পাল। মৃত্রডাঙ্গা গ্রামের সতীষ চন্দ্র পালের পুত্র রাধা কান্তা পাল, কালু চরন মিস্ত্রীর পুত্র বিনোদ বিহারী মিস্ত্রী, সুরেন্দ্র নাথ পালের পুত্র শিব চরন পাল।

আবেতা গ্রামের কেদা রাম দাসের পুত্র মঙ্গলময় দাস। শাগরকাঠী গ্রামের মতিলাল সাহার পুত্র দেবেন্দ্র নাথ সাহা, নকুল চন্দ্র সাহার পুত্র সতিষ চন্দ্র সাহা, যোগিন্দ্র নাথ সাহার পুত্র প্রফুল্ল কুমার সাহা, নকুল চন্দ্র সাহার পুত্র অতুল চন্দ্র সাহা, শরৎ চন্দ্র সাহারপুত্র ধীরেন্দ্র নাথ সাহা (কালু), যোগিন্দ্র নাথ সাহার পুত্র নিশিকান্ত সাহা।


ওই সময় আহত হয়ে পরে বিভিন্ন রোগে ভুগে মৃত্যু বরন করেন যারা

মসনী গ্রামের কেদার নাথ দাসর পুত্র কার্ত্তিক চন্দ্র দাস। আলোকদীয়া গ্রামের সোনারাম দাসের পুত্র উপেন্দ্র নাথ দাস। শাখারীকাঠী গ্রামের জদু রাম দাসের পুত্র হরিচরণ দাস। বলভদ্রপুর গ্রামের হরান চক্রবর্তির পুত্র কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তি, কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তির দুই পুত্র শিবু প্রসাদ চক্রবর্তি ও দুলাল চক্রবর্তি, যোগেন্দ্র হালদারের পুত্র মতিলাল হালদার। বিষখালী গ্রামের মনিন্দ্র নাথ চক্রবর্তি। ডেমা বাগেরহাটের মতিলাল ঘটক। বাধালের শরত চন্দ্র ঘোষের পুত্র মৃনাল কান্তি ঘোষ। আফরার আশ্বিনী কুমার দাসের পুত্র আমল কৃষ্ণ দাস সহ আরো অনেকের নাম পাওয়া যায়নি। এছাড়া ও ওই সময় রঘুদত্তকাঠীর অনিল কৃষ্ণ দাসের গরু ছিনিয়ে নেওয়ার এক পর্যায়ে রাজাকারেরা পিটিয়ে মেরেছিল বাড়ির পাশের মাঠে। অনুসন্ধ্যানে এ তথ্য পাওয়া পাওয়া গেছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা