• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে এবার ব্রি হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

বাগেরহাটের শরণখোলায় এই প্রথম শতাধিক বিঘা জমিতে চলতি রোপা  আউশ মৌসুমের প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়ে অধিক ফলনশীল ব্রি হাইব্রিড ধান ৭ জাতের  বাম্পার ফলন হয়েছে।  প্রতি বিঘা  জমিতে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫  মন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। পাশাপাশি অন্য চাষিরা একই পরিমাণ জমিতে সাথীসহ অন্যান্য হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে ফলন পেয়েছেন মাত্র ১৫ মন। এ পার্থক্য দেখে ঐ চাষিরা এখন হতবাক হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার এ প্রতিনিকে জানায়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে রোপা আউশ মৌসুমে ব্রি  হাইব্রিড ধান ৭ জাতের বীজ বিনামূল্যে উপজেলার মধ্য খোন্তাকাটা এলাকার ১১০ জন প্রদর্শণী চাষীকে দেওয়া হয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে চাষীরা নিয়মিত পরিচর্যার কারণে  বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
কৃষকদের পরিশ্রমের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে  মঙ্গলবার শুরু হয় ধান কাটা। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মাঠ দিবসে  ভার্চুয়ালে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা  ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর।  বিশেষ অতিথি ছিলেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নূর-ই আলম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের কৌলিসম্পদ ও বীজ বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  প্রধান  ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবব্রত সরকার,  উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা  মশিউল আলম বাবু ও কৃষক  আঃ হক মেম্বর। 
এ প্রদর্শণী মাঠের নেতৃত্বদানকারী চাষী আবদুস সালাম বলেন তার ২ বিঘা জমিতে ৫৮ মন ধান হয়েছে। এইরকম ধান জমিতে  ফলে এটা আমার বয়সে আমি কখনো দেখিনি। এ ফলন পেয়ে আমরা খুব আনন্দিত। আমাদের পার্শ্ববর্তী চাষিরা অন্য সাথীসহ অন্যান্য হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি মাত্র ১৫ মন ধান পেয়েছে। আমাদের উৎপাদন  দেখে পাশবর্তী যারা অন্য জাতের ধান চাষ করেছে তারা এখন আফসোস করছে। তিনি আগামীতে ও এ ধরনের ধান কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের মাঝে সরবারাহ করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের  ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রধান  ড. মোহাম্মদ  জাহিদুল ইসলাম এফএনএস.কে বলেন, ব্রি হাইব্রিড ধান ৭ রোপা আউশ মৌসুমের প্রথম হাইব্রিড ধানের জাত।  এর কৌলিক সারি  বিআর ২১১২ এইচ এবং ক্রস কম্বিনেশন আইআর ৭৫৬০৮ এ / ব্রি ৩১ আর। জাতটির মাতৃ সারি ইরি (আইআরআরআই) ও পিতৃ সারি ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত। এ ধান  আউশ মৌসুমে খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর অঞ্চলে চাষাবাদের  জন্য জাতীয় বীজ বোর্ড ২০২০  সালে ব্রি  হাইব্রিড  ধান ৭  হিসেবে ছাড়করন  করেন।  অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান ও গবেষনা আধুনিকায়ন প্রকল্পের অর্থায়নে ব্রি হাইব্রিড ধান ৭ প্রদর্শনী বীজ উপজেলার মধ্য খোন্তাকাটা এলাকায়  শতাধিক চাষির মধ্যে  বিতরণ করা হয়।  শরণখোলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় এবং চাষীদের সঠিক নজরধারী ও আন্তরিকতায় চাষকৃত জমিতে  আশানুরূপ বাম্পার ফলন হয়েছে। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। এ ধানের চালে আ্যামাইলোজ ২৩% এবং প্রোটিন ১০% রয়েছে। কিছুটা লবন সহনশীল, রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম।  স্বল্প জীবন বিশিষ্ট এ জাতের ধান চিকন ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় চাহিদা কারণে দামও বেশী। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি বিঘার খড় বিক্রি হয় দুইহাজার টাকা। চলতি আমন মৌসুমে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাষিদেও মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা