• শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ||

  • অগ্রহায়ণ ১৭ ১৪৩০

  • || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

নিম্নচাপে প্লাবিত সুন্দরবন, বন্যপ্রানী নিয়ে শঙ্কায় বন বিভাগ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নি¤œচাপের পরিনত হওয়ার পর পরই মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকুলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহল রেখেছে আবহাওয়া অফিস। ফলে টাকা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে পশুর চ্যানেল ও বনের নদ-নদীতে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিন যাবত প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন সরকারী বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যটক স্পট এবং গোটা সুন্দরবন। করমজলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সুন্দরবনে ভ্রমনে আসা দর্শনার্থীদের।

বন বিভাগ বলছে, রক্ষিত সকল প্রানীই নিরাপদে রয়েছে, তবে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে কেন্দ্রে রাখা প্রানীসহ বনের গহিনের বন্যপ্রানীর ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে তারা। ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস কাজ। ঝুকি নিয়ে নদী ও খাল পাড়ি দিয়ে চলাছল করছে কর্মজীবি সাধারণ মানুষ।

বন্দর সুত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিনত হওয়ায় মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলীয় এলাকায় দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। এছাড়া শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি বর্তমানে চলছে পুর্নিমার গোন। তাই জোয়াররে পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ও বনের করমজলে সরকারী বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রটি। গত তিন দিন ধরে রাতে ও দুপুরের পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয় বনের করমজল ও অন্যান্য পর্যটক স্পর্টগুলোও।

বনের করমজলে বন্যপ্রানী সংরক্ষনের জন্য ১২টি আধা পাকা সেড রয়েছে। যার মধ্যে বাচ্চাসহ ৩৬ টি হরিন, ৯১ টি ছোট বড় কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির ৪৩৬টি বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপ রযেছে। এছাড়াও এর আশপাশে উম্মুক্ত ভাবে রয়েছে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও আজগর সাপ, তক্কতসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রানী ও হরেক রকমের পাখি রয়েছে। এদিকে নদীতে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে আর জোয়ারের পানিতে বন্যপ্রাণী সম্ভাব্য চরম ক্ষতির আশংকা করছেন বন বিভাগ।

বনবিভাগ বলছে, গত শনিবার থেকে এবারের পুর্নিমার গোনে সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশী পানি হয়েছে। ৩-৪ ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে সমগ্র বন প্লাবিত হলেও গত তিন দিন প্রায় চার ফুট পানিতে তলিয়েছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কন্দ্রেসহ পুরো বন। এতে বেশী ক্ষতি হয়েছে যে সকল বন্যপ্রানী গাছে উঠে বসবাস করতে পারেনা এবং মাটিতে ডিম পাড়ে সে সকল বন্যপ্রানী বা তাদের বাচ্চাগুলো মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে জানান তারা। বনে পানি ঢুকে যাওয়ায় উম্মুক্ত ভাবে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বনের মধ্যে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। করমজলেও এসে আশ্রয় নিয়েছে বনের হরিন, বানর, শুকর সহ অন্যান্য প্রানী। তবে এখনও পর্যন্ত বনের কোথাও তেমন কোন প্রাণীর মুত্যু বা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নী।

এদিকে, দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনে পর্যটক আসতে পারছেনা। ফলে গত তিন দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা-কচিখালী, দুবলা, নিলকমলসহ অন্যান্য পর্যটক স্পটগুলো। তবে বিপুল পরিমান দর্শনার্থীদের আসার আগ্রহ রয়েছে বলে জানায় কমরজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার হওলাদার আজাদ কবির।

অপরদিকে, বন্দরে অবস্থারত বিভিন্ন পন্য বোঝাই দেশী-বিদেশী বেশ কয়েকটি বানিজ্যিক জাহাজ পন্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। জাহাজের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চললেও সার ও খাদ্যবাহী জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাই কাজ বৃষ্টির সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

বন্দর কেন্দ্রিক চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান ও সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। মোংলা বন্দরের ও পশুর নদীর দুই পাড়ে কয়েকশ’ পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ ও ট্যুরিষ্ট বোর্ডও নিরাপদে ও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বন্দর সংলগ্ন আশপাশের বিভিন্ন খালেও নৌযানগুলো নিরাপদে নঙ্গর করে রয়েছে।

অন্যদিকে, গত তিন দিন ধরে নি¤œ আয়ের মানুষগুলো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তার পরেও সংসারের অভারের তাড়নায় তিন দিন ধরে টানা মুষলধারে বৃষ্টি আর দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার মধ্যেও ভ্যান-রিক্স এবং আয় রোজগার করার জন্য বাহন নিয়ে বের হয়েছে। বন্দর কেন্দ্রীক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, শ্রমিক ও স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে পশুর নদী ও মোংলা ঘসিয়াখালী ক্যানেল নদী নৌকা ট্রলার দিয়ে পার হচ্ছে। এ নদী দিয়ে বার্জ, কার্গো, লাইটারেজ ও গ্যাসবাহী বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ চলাচল করছে, তার পরেও নারী-পুরুষরা ছুটছে কর্মের সন্ধানে। বৃষ্টির কারণে অনেকই কাজ না থাকায় অলস বসে দিন কাটছে।

এছাড়া সাগর, সুন্দরবন ও মোংলা পশুর নদীতে মাছ আহরণের জন্য আসা জেলেদের আপাতত নদীতে না নামার জন্য মাইকিং করে সাবধানতা অবলম্বন করার আহবান জানায় মোংলা কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা। তাই নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা আশ্রয় নিয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে। পুর্ন নির্দেশানা না দেয়া পর্যন্ত দুর্যোগকালীন সময় কোন জেলে যাতে নদীতে নামতে না পারে বা তাদের ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে কোষ্টগার্ড তাদের টহল জোরদার করেছে।  

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা