• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে বারোমাসি সজনে চাষ শুরু

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২  

বানিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় বাগেরহাটে বারমাসি উন্নত জাতের সজনে চাষ শুরু করেছেন কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু। এক বিঘা জমিতে পুষ্টিকর এ সবজিটি উৎপাদন করছেন তিনি।ইতোমধ্যে তার রোপণ করা ওডিসি-৩ জাতের সজনে গাছে ফুলও এসেছে।  আব্দুল আজিজ টিটুর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেনেগাতি গ্রামে। 

মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকে কৃষিকাজ শুরু করেন আব্দুল আজিজ টিটু। এরই অংশ হিসেবে আট মাস আগে তিনি নিজের এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন ওডিসি-৩ জাতের সজনে গাছে। গাছে ইতোমধ্যে ফুলও আসতে শুরু করেছে। প্রথম বছরেই সজনে বিক্রি করে বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন এই কৃষক। 

এদিকে টিটুর সফলতা দেখে স্থানীয় আরও অনেকে সজনে চাষের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করি। সবজির চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ, দাম ও বিক্রির কৌশল নিয়ে আগ্রহ থাকায় নিয়মিত কৃষি বিষয়ক ভিডিও দেখি। ইউটিউবে ওডিসি-৩ জাতের সজনের গুণাগুণ ও ব্যাপক ফলনের কথা জানতে পারি। এরপর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওডিসি-৩ জাতের চাষ কৌশল আয়ত্বে আনি। ২০২১ সালের শেষের দিকে ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে বীজ আনি। এরপর জমি প্রস্তুত করে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বীজ রোপণ করি। খুব দ্রুত বড় হয়েছে গাছগুলো। মাত্র আট মাসে আমার গাছে ফুল এসেছে। গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভাল। আশাকরি অনেক ফল হবে এবার।’

এক বিঘা জমিতে সজনের চারা রোপণ করেন টিটু 

বীজ ক্রয়, রোপণ ও পরিচর্যার ব্যয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা (৫২ শতক) জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও রোপন করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পরিচর্যা ও আগাছা পরিস্কার করতে আরও ১০ হাজার টাকার মত ব্যয় হয়েছে। যেভাবে ফুল এসেছে আশাকরি এক থেকে দেড় লাখ টাকার সজনে বিক্রি করতে পারবো।’

আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, ‘এই সজনে ক্ষেতকে আমি মাদার ক্ষেত হিসেবে তৈরি করব। এখানে উৎপাদিত সজনে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি, এই সজনে থেকে বীজ উৎপাদন করব। বীজ থেকে চারা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

স্থানীয় রুহুল আমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা প্রচুর সবজি চাষ করি। সবজি ক্ষেতের পাশে দুই-একটা সজনে গাছও থাকে। কিন্তু এভাবে বানিজ্যিকভাবে সজনে চাষের কথা কখনও চিন্তা করিনি। সারা বছর সজনে হয় এটাও জানা ছিল না। আব্দুল আজিজ টিটুর ক্ষেত দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। বীজের ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলেছি। ইনশাআল্লাহ জানুয়ারি মাসের দিকে চাষ শুরু করব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘সজনে একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। বাজারে এই সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর ভালো দামও রয়েছে। এরপরেও বাগেরহাটে বানিজ্যিকভাবে সজনে চাষ নেই বললেই চলে। তবে এখন বেনেগাতি এলাকার কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু বানিজ্যিকভাবে সজনের চাষ করেছেন। তার গাছে ফলও এসেছে। আশাকরি ভাল ফলন হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাকে সব ধরণের কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’

আব্দুল আজিজ টিটু ভাগ্য বদলের আশায় মালয়শিয়া যান। ২০০৯ সালে তিনি সেখান থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেননি। দুই বছর পরে ২০১১ সালে নিজের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রতিবছর সবজি ও ফল চাষের জমি বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তার এক বিঘা জমিতে সজনের চাষ হচ্ছে। এছাড়া দশ বিঘা জমিতে সবজি ও ফলের গাছ রয়েছে তার। তার ক্ষেতে পেপে, লাউ, বেগুন, ঢেড়স, করলা, দুন্দল, কুশি, ঝিঙ্গে, ডাটা, কুমড়া, লেবু, চুইঝালসহ নানা জাতের সবজি রয়েছে। বসত ঘরের সামনে রয়েছে শতাধিক প্রকার চারার ছোট নার্সাসি। সবজি ক্ষেত ও নার্সারি থেকে প্রতিবছর ৫ লাখ টাকার বেশি আয় রয়েছে টিটুর। 

টিটুর কৃষি ক্ষেতে সারা বছর চারজন নারী ও চারজন পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সফল কৃষক হিসেবে পুরুস্কার পান তিনি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা