• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

অন্ধকারে মাস্টারের ভুলেই বন্দর চ্যানেলে সার বোঝাই কার্গো ডুবি

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩  

মোংলা সমুদ্র বন্দরের হারবাড়িয়া নৌ-চ্যানেলে সার বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চালকের গাফিলতিই মূল কারণ পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এ তথ্য পেয়েছেন কমিটি। প্রতিবেদন দু’একদিনের মধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর মূল চ্যানেল রেখে গাফিলতির অভিযোগে দায়ী মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ। তবে এ মুহূর্তে নৌ দুর্ঘটনায় বন্দরের নৌ-চ্যানেলে দেশি-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বুধবার মধ্যরাতে হারবাড়িয়া এলাকায় সার নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেসের মাস্টার (চালক) ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই সময় ঘন ককুয়াশা থাকায় মাস্টারের উচিত ছিল কার্গো জাহাজটি না চালিয়ে কোন এক জায়গায় অবস্থান করা। কিন্ত মাস্টার সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হারবাড়িয়া-৯ এ অবস্থান করা ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ নামে বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ টন সার বোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এরপরে পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৫ এ অবস্থান করা অন্য আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘সুপ্রিম ভ্যলো’র টার্ণ করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে সেটিতে ধাক্কায় লাগায় শাহাজালাল এক্সপ্রেস কার্গোটি। ওই সময়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কার্গোটি ডুবে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার সকালে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কিন বয়া (লাল সতর্ক বয়া) বসিয়ে তদন্ত শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাৎ হোসেন, পাইলট ফারুক আহম্মেদ এবং মেরিন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রিয়াদ খাঁন এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এমভি শাহাজালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের মালিক আজাহার সিদ্দিক দাবি করেন, কার্গোটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাস্টার ওবায়দুর রহমানের কোন গাফিলতি ছিল না। সে একজন দক্ষ চালক। বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার যে কারণ উল্লেখ করেছেন, তার ব্যাখা দিয়ে আজাহার সিদ্দিক বলেন, কোনও বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই হওয়ার পর সেখানে এক মুহূর্তে থাকতে দেওয়া হয় না শ্রমিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরকে। কার্গো বোঝাইয়ের পর সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘন কুয়াশায়ও মাস্টারের কার্গোটিকে চালাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই জাহাজটি উঠানো সম্ভব না, কারণ হারবাড়িয়া এলাকা অনেক গভীর। তাই অনেক সময় লাগবে। ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে সার অপসারণ করতে এখনও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হারবাড়িয়া নৌ-চ্যানেলে সারবাহী কার্গো জাহাজ ডুবির ফলে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি ছাড়াও ওই জাহাজে থাকা যে জ্বালানী তেল রয়েছে, তা সুন্দরবনের আশেপাশের পরিবেশকে দূষণ করবে। একই সঙ্গে বারবার এসব ট্যাঙ্কার, লাইটার বা কার্গো জাহাজ ডুবির ফলে বন্দরের নাব্যতা সংকট বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোংলা বন্দরে হারবাড়িয়া চ্যানেলে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে শাহাজালাল এক্সপ্রেক্স কার্গো  জাহাজটি ডুবে গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ওই জাহাজে থাকা মাস্টারসহ ৮ নাবিক। কার্গো জাহাজটিতে বহন করা সার বাংলাদেশ এগ্রিকালচার কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বলে জানা গেছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা