• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে টমেটো এখন কৃষকের গলারকাটা, প্রতি কেজি দুই টাকা 

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি টমেটো বাম্পার ফলন হয়েছে। এমন ফলনে জেলার টমেটো চাষিদের খুশি হওয়ার কথা থাকলেও এই টমেটোই এখন কৃষদের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। জেলার পইকারি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে। এমন চিত্র জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাটসহ সর্বত্র। নিত্য পণ্যের উদ্ধগতির বাজারে মাত্র দুই থেকে তিন টাকা দরে টমেটো বিক্রি হওয়ায় জেলার টমেটো চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তষ। এমন অবস্থায় ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার শ্রমিক খরচই উঠাতে পারছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৫শ টন টমেটো। তবে কৃষি বিভাগ বলছে লক্ষমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি ও বাজারে সরবরাহের বেশি থাকায় দাম কমেছে টমেটোর।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় এ বছর ১৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ৪০ হাজার ৭শ টন। যেখানে বাগেরহাট জেলায় এ বছর ১৯শ ৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৯শ টন টমেটো। এর মধ্যে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়েছে জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলায়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে মৌসুমের প্রথমদিকে আগাম জাতের টমেটো চাষ করে ভালো মূল্য পেয়েছে কৃষকরা।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, প্রায় মাস খানের আগেও যে টমেটোর কেজি ছিলো ৪০ থেকে ৩০ টাকা সেই টমেটো পাইকারি বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে। এমন অবস্থায় জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলার টমেটো চাষিরা ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার শ্রমিক খরচই উঠাতে পারছেন। যার ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে মনকে মন টমেটো। আর ন্যায্য মূল্য না মেলায় রাগ ও ক্ষোভে অনেক কৃষক তাদের টমেটো ফেলে দিচ্ছেন নদী ও খালে।
চিতলমারী উপজেলার বাখরগঞ্জ বাজারের টমেটো ব্যবসায়ী মোঃ আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টমেটো চাষ ও ব্যবসার সাথে জড়িত আমি। এ বছর আমাদের চিতলমারীতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথমদিকে দামও ভালো পেয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তবে মৌসুমের শেষ দিকে টমেটোর দাম একটু কমে যায়। কিন্তু এতকম আমি আমার ব্যবসার জীবনে দেখি নাই। মাত্র ২/৩ টাকা কেজি বিক্রি করে কি ভাবে কৃষক ও ব্যবসায়ী বাঁচবে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে হলে সরকারিভাবে টমেটো সংরক্ষনের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবী জানান তিনি।
জেলার কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক মিলন মন্ডল বলেন, আমরা মূলত ঘের পাড়ের আইলে টমেটোর চাষ করি। এ বছর বিভিন্ন এনজিওসহ লোকজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খাটিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। এখনও আমার জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। হট্যাৎ করে প্রায় ২০/২৫ ধরে টমেটোর দাম মাত্র দুই, তিন ও সর্বচ্ছ গেলে চার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে পারছি না, কারন শ্রমিকের মজুরি মূল্যও উঠছে না আমাদের। বাধ্য হয়েই ক্ষেতেই টমেটো রেখে দিচ্ছি। সময়ের সাথে সাথে তা পঁচাও শুরু করেছে।
মোল্লাহাট উপজেলার কৃষক ফয়সাল আহমেদ বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, এ বছর আগাম জাতের হাইব্রিড টমেটোর চাষ করেছিলাম। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি প্রথমদিকে দামও ভালো চেয়েছি। কিন্তু বর্তমানে দাম এতটাই কমে গেছে যে, ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ন্যায্য মূল্য না মেলায় নদী-খালে ফেলে দিচ্ছে বাধ্য হচ্ছি। কারন মৌসুমের শেষে টমেটো সব পেঁকে গেছে। এটা তুলে না ফেল্লে ঘেরের পানিতে পরে পানি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মাছ মরে যাওয়ার সংকা থাকে। তাই টমেটো ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়, চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপাজেলায়। অন্যান্য উপজেলায় সিমিত পরিসরে টমেটোর চাষ করা হয়। এ বছর জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষমাত্রর চেয়ে কয়েক হাজার টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলায় টমেটো চাষের জমি ও চাষি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে টমেটো গাছ পরিপক্ক হয়ে যাওয়ার কারনে টমেটো পেঁকে যায়। যার ফলে চাহিদা চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি হচ্ছে। এ কারনে হঠ্যাৎ করে টমেটোর দাম কমে গেছে। যার ফলে কৃষকও কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জেলার কৃষকদের কৃষক বিজনেস স্কুল এর মাধ্যমে সবজির মার্কেটিং এর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা হাতে-কলমে কৃষদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাতে আগামীতে কখন, কি ভাবে চাষ করলে টমেটোর ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি সঠিক মূল্য পাওয়া যায় সে বিষয় গুলো কৃষকরা ভালোভাবে জানতে পারে। আশা করছি কৃষক বিজনেস স্কুল এর মাধ্যমে আগামীতে জেলার সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পেতে পারে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা