• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

মোংলায় দেড় বছরেও শেষ হয়নি ‘বীর নিবাসের’ নির্মাণকাজ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৩  

দেড় বছরেও শেষ হয়নি মোংলায় ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য সরকারিভাবে তৈরি ‘বীর নিবাসের’ নির্মাণকাজ। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধাহত বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। কাজ শুরুর তিন-চার মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও দেড় বছরেও শেষ হয়নি। এ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের স্বজনরা। 

সরেজমিনে উপজেলার চাঁদপাই, চিলা ও বৌদ্ধমারী, কানাইনগর ও হলদিবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য তৈরি ১১টি বীর নিবাসের দেয়াল তৈরি করা হলেও দেওয়া হয়নি ছাদ ও পলেস্তারা। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় পড়ে আছে নির্মাণকাজ। কাজের কোনও অগ্রগতি নেই।
উপকারভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, দেড় বছরেও বীর নিবাসের কাজ শেষ না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে কোনোমতে ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হচ্ছে তাদের। 
সরকারি তালিকা অনুযায়ী মোংলা উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২২০ জন। এর মধ্যে জীবিত আছেন ১১৮ জন। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্পের তালিকায় উপজেলার ২৩ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নাম ওঠে। 
২০২১ সালে প্রথম দফায় ১১ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় ২১ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য সরকারিভাবে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রতিটি নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একতলার এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়িতে একটি উঠান, একটি নলকূপ, গবাদি পশু-হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড থাকার কথা। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া বীর নিবাসের কাজ শেষ হলেও আটকে আছে প্রথম দফায় শুরু করা কাজ।
উপজেলার মৃত মুক্তিযোদ্ধা নরেন সরকারের ছেলে দেবু সরকার বলেন, ‘ ‘ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছি আমরা। বীর নিবাসের ঘরে উঠার অপেক্ষায় আছি। অথচ দেড় বছরেও কাজ শেষ হয়নি। কবে ঘরে উঠতে পারবো, জানি না। একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা।’
মৃত মুক্তিযোদ্ধা সমর মিস্ত্রির স্ত্রী নমিতা মিস্ত্রি বলেন, ‘ভাঙা ঘরে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঝড়বৃষ্টি ও রোদের মধ্যে পথে পথে ঘুরতে হয়। বীর নিবাসের কাজ শেষ হলে সেখানে উঠতে পারতাম। কিন্তু দেড় বছর ধরে শুনছি কাজ হচ্ছে, অথচ শেষ হচ্ছে না।’
তাদের কষ্টের কথা স্বীকার করেছেন বীর নিবাস প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাফর রানা। তিনি বলেন, ‘অসচ্ছল ১১ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে। কিছু পরিবার আছে, তাঁবু দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। সব মিলিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।’
বীর নিবাস নির্মাণ ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না উল্লেখ করে জাফর রানা বলেন, ‘দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে একাধিকবার বলার পরও শেষ করেননি। এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।’
কাজ বন্ধ কেন জানতে চাইলে বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার অম্বরেশ রায় বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত জটিলতায় মামলা হওয়ায় দুটি ঘরের কাজ শুরু করা যায়নি। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাকিগুলোর কাজ শেষ করতে পারিনি। পাশাপাশি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ঠিকমতো বিল না দেওয়ায় কাজ করতে পারছি না আমরা। তাদের কাছে আমাদের বিল বাকি আছে।’ 
প্রকল্পের কাজের তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) দীপংকর দাশ। তিনি বলেন, ‘ওই ঠিকাদার কিছু বিল এখনও না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে পারেননি। তারপরও ওই ১১ বীর নিবাসের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কাজ করছি আমরা। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।’

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা