• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

আগামীকাল থেকে সব ব্যাংকেই আমানতের সুদ ৬%

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

আগামীকাল ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সব ধরনের ব্যক্তি আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ কার্যকর করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা বৈঠক করে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঋণের ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের দুই মাস আগেই ব্যক্তি আমানতের এই নতুন সুদহার কার্যকর হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সার্কুলার জারি করা হয়নি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঋণের নয়-ছয় সুদ কার্যকরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হবে।

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যাবে। এই আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাবে সরকারি সংস্থাগুলো। আর সরকারি ব্যাংকে আমানত রাখলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ শতাংশ সুদ নিতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ বেঁধে দেওয়া হলে আমানতকারীরা নিরুৎসাহ হবে। বিশেষ করে মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখা কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া যারা টাকা রাখবে তাদের পক্ষে প্রকৃত মুনাফা ঘরে তোলা কঠিন হবে বলেও মনে করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তারল্য সংকট আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দুর্বল ভিত্তির ব্যাংকগুলোর। কারণ তখন নতুন-পুরনো সব আমানতকারীই শক্তিশালী ভিত্তির ব্যাংকেই টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী হবে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়বে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকে আমানত রাখা কমলেও সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়তে পারে। এ ছাড়া অতিমুনাফার টোপ দিয়ে ‘হায় হায়’ কম্পানির দৌরাত্ম্য ও বাসাবাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ হলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তি আমানতকারীরা নিরুৎসাহ হবেন। ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমার আশঙ্কা তৈরি হবে। এমনিতেই অনেক দিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, সব আমানতের ক্ষেত্রে সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ যদি হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আরো কম দেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি ৬ শতাংশও দেয়, তাহলেও ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে না মানুষ। কারণ এখন মূল্যস্ফীতির হারই প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি। এর ওপর উৎস কর ও আবগারি শুল্কের বিষয় রয়েছে। সব মিলে ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃত মুনাফা ঘরে তোলা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসে দেশের ৬০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যক্তি আমানতকারীদের থেকে তহবিল সংগ্রহে গড়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি, বিশেষায়িত দুটি, বিদেশি চারটি ও বেসরকারি ১৩টি ব্যাংক। বাকি ৩৩টি ব্যাংক আমানতকারীদের গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আগের মাস ডিসেম্বরে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টি ব্যাংক আমানতকারীদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিয়েছিল। এর মানে এক মাসের ব্যবধানে পাঁচটি ব্যাংক তাদের আমানতের সুদ কমিয়ে এনেছে।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যক্তি আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চাচ্ছি ধাপে ধাপে ব্যক্তি আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে। তবে ১ ফেব্রুয়ারিই সব ব্যাংক ৬ শতাংশে নামাবে কি না সেই নিশ্চয়তা এবিবি দিতে পারে না। কারণ এবিবি কোনো রেগুলেটর না। তাই কাউকে বাধ্য করার ক্ষমতাও এবিবির নেই।’

এ পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকগুলোতে ব্যক্তি আমানত নিরুৎসাহ হবে কি না জানতে চাইলে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সব ব্যাংক আমানতে একই সুদ অফার করলে তেমন একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ সবাই সুদের হার কমালে মানুষ আমানত নিয়ে যাবে কই। বিকল্প হিসেবে সঞ্চয়পত্র থাকলেও সেখানে লিমিট দেওয়া আছে, ইচ্ছামতো কেনা যাবে না। কেউ যদি মনে করে শেয়ারবাজারে যাব, তাহলে সে যাবে, এখানে করার কিছু নেই। কারণ একজন সঞ্চয়কারী তার টাকা কোথায় খাটাবে এটা তারই সিদ্ধান্ত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির আগে ব্যাংকগুলোর ব্যক্তি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকরের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকগুলো এটা করতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলো কম সুদে আমানত সংগ্রহ করার পরেই তো কম সুদে ঋণ বিতরণ করবে।

ব্যাংক মালিকরা নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের জুনে। ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটা এখনো কার্যকর করেননি ব্যাংক মালিকরা। গত বছরের শেষ সময়ে এসে কমিটি গঠন করে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেটা নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকরেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সার্কুলার জারির আগমুহূর্তে এসে ওই সিদ্ধান্তও ঝুলে যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া সব ধরনের আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা