• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

পবিত্র কোরআনের আলো

আত্মবিকাশের স্বার্থে অন্যের আনুগত্য প্রয়োজন

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

সে [মুসা (আ.)] বলল, ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন এবং আপনার কোনো আদেশ আমি অমান্য করব না। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৬৯)

তাফসির : আগের দুই আয়াতে খিজির (আ.)-এর পক্ষ থেকে মুসা (আ.)-এর প্রতি ধৈর্য ধারণের শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। এ শর্ত মেনে নিয়ে খিজির (আ.)-এর কাছ থেকে বিশেষ জ্ঞান লাভ করার অনুমতি চেয়েছেন মুসা (আ.)। আলোচ্য আয়াতে সে প্রসঙ্গ বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, মুসা (আ.) খিজির (আ.)-এর দেওয়া শর্ত মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন।’ এখানে ভাষাগতভাবে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. ভবিষ্যতের কাজের ক্ষেত্রে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। এই পরিভাষা আগের নবীরাও ব্যবহার করেছেন। যেমন—এখানে মুসা (আ.) ব্যবহার করেছেন।

দুই. কথা বলার আদব ও শিষ্টাচার হলো, এমন শব্দ ব্যবহার না করা, যা নিজের ‘আমিত্ব’ ও ‘অহংবোধ’ প্রকাশ করে। এখানে এই শিষ্টাচারের প্রতি খেয়াল রাখা হয়েছে। মুসা (আ.) এটা বলেননি—‘আমি এ কাজ করব।’ বরং তিনি বলেছেন—‘আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন।’ এটাই নবী-রাসুল ও ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। নবী-রাসুল, ওলি-আউলিয়া ও খাঁটি ঈমানদাররা অন্যের কাছে নিজেদের মেলে ধরেন না। তাঁরা নিজেদের সব সাফল্য আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করেন।

মুসা (আ.) খিজির (আ.)-এর শর্ত মেনে নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত এ কথাও বলে দিয়েছেন যে আমি আপনার কোনো আদেশ অমান্য করব না। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে আপনার আনুগত্য করব।

আনুগত্য একটি সংঘবদ্ধ সমাজের প্রাণ। আনুগত্য না থাকলে ওই সমাজ বেশি দিন টেকে না—এটাই বাস্তবতা। আনুগত্য অর্থ মান্য করা, মেনে চলা, আদেশ ও নিষেধ পালন করা, কোনো কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা। কোরআনের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ইতাআত’। ইসলামের দৃষ্টিতে আনুগত্যের ব্যাবহারিক রূপ হলো—‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো এবং যারা তোমাদের মধ্যে (ধর্মীয় ও জাগতিকভাবে) ক্ষমতার অধিকারী, তাদের আনুগত্য করো...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)

ইসলাম ও আনুগত্য অর্থের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। শাব্দিক অর্থের আলোকে ইসলামের অন্তর্নিহিত দাবি অনুধাবন করলে দেখা যায়, এখানে আনুগত্যই মূল কথা। সুতরাং বলা যায়, ইসলাম মানেই আনুগত্য। যেখানে আনুগত্য নেই, সেখানে ইসলাম নেই। যেখানে ইসলাম নেই, সেখানে আনুগত্য নেই।

আধুনিক ধ্যান-ধারণায় এই আনুগত্য ও সামাজিক শৃঙ্খলা থেকে মানুষকে বের করে ফেলার অপচেষ্টা লক্ষণীয়। এই চিন্তা থেকে এসেছে উদারবাদ। উদারবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতা বিকাশের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণকে ‘অশুভ’ বলে গণ্য করে। পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদসহ বহু মতবাদের জন্ম উদারবাদ থেকে। উদারবাদ ব্যক্তিকে সর্বেসর্বা মনে করে। অথচ সমাজজীবনে ব্যক্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে জন্মগতভাবে স্বাধীন বলা হলেও তার জন্মও একটি প্রক্রিয়ার অধীন। তাই ব্যক্তির নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় স্বাধীনতা হলো, ‘মানুষের সেসব অবাধ কাজকর্ম, যা অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতাকে খর্ব না করে সম্পন্ন করা সম্ভব।’

শব্দগত অর্থে স্বাধীনতা বলতে বোঝায় স্ব-অধীনতা। এর অর্থ, পরের বা বাইরের কোনো অধীনতা তাকে স্পর্শ করে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন অবাধ স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। মানুষকে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে বের করে আনার জন্য জীবনের সূচনাতেই মা-বাবা ও শিক্ষকদের আনুগত্যের সবক দেওয়া জরুরি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা