• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২০  

১৯৭২ থেকে ৭৫। এই সাড়ে তিন বছর, স্বাধীন বাংলার স্বীকৃতি আদায় ও দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে বিদেশি সহায়তা লাভে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যেতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। এর বাইরেও তৃতীয় বিশ্বের অবিসংবাদিত এক কণ্ঠস্বর ছিলেন তিনি। বিদেশনীতি প্রশ্নে জাতির জনক বলতেন, 'ভারত, মার্কিন বা চীনপন্থী নন; তিনি কেবলই জনগণের'।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ কোরে পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিকনির্দেশনা দেন। ঘোষণা দেন 'বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড'। জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রথম মুখপাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতি একটি স্মরণীয় অধ্যায়। সর্বোচ্চ বিশ্ব ফোরামে তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেন, বাংলাদেশের নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তখন অভিনন্দন আর আমন্ত্রণ। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য গোটা বিশ্বে বঙ্গবন্ধু অর্জন করলেন, বিশ্বনেতার সম্মান। প্রতিবেশি ভারত সফরে দেশটির সাথে ২৫ বছর মেয়াদি মৈত্রী চুক্তি সাক্ষর করেন। অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নয়াদিল্লির সহায়তা চান জাতির জনক। সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বাধীনতা সংগ্রামে জুগিয়েছে, অকুণ্ঠ সমর্থন। বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত নেতা বেজনেভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য-সহায়তার জন্য সোভিয়েত জনগনকে ধন্যবাদ জানান।

বঙ্গবন্ধু যোগ দেন কমনওয়েলথে। সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শান্তি-সৌহার্দ্য নিয়ে মতবিনিময় করেন। সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন জাতির জনক। রিয়াদের পক্ষ থেকে সদ্য স্বাধীন দেশটির জন্য সম্ভাব্য সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম লড়াইয়ে বাংলাদেশের  কণ্ঠ সবসময়ই সোচ্চার থাকবে। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর আত্মনির্ভরতা এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সেই জোটকে কার্যকর করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জোট নিরপেক্ষ নেতা যুগস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, বঙ্গবন্ধুকে মানবতার অন্যতম পথিকৃত হিসেবে অভিহিত করেন। কিউবা বিপ্লবের জনক, ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধু। ফিদেল বলেছিলেন, আমি হিমালয়কে দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাবে সায় দেন ফিদেল।

লিবিয় নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফিও, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখান। তৎকালীন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের সঙ্গে, পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট আদম মালিকের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক আলোচনা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর, প্রথম জাপান সফরে যান বঙ্গবন্ধু। টোকিওতে প্রথম সফরেই যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে জাপানের সহায়তা চান জাতির জনক। ঢাকার সাবেক মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড।

বঙ্গবন্ধুর অনুরক্ত এই মানুষটির বই ' দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ' বইতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লেখেন, ৭০ এর অক্টোবরে, ব্ল্যাডকে বঙ্গবন্ধু তার বিদেশনীতি প্রশ্নে বলেছিলেন, 'আমি ভারতপন্থী নই, আমেরিকাপন্থী বা চীনপন্থী নই; আমি আমার জনগনপন্থী'। সাম্য-মৈত্রী, গণতন্ত্র রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জীবদ্দশাতেই বিশ্ব শান্তি পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি পান জুলিওকুরি পদক। যা উৎস্বর্গ করেন তৃতীয় বিশ্বের অসহায় মানুষদের।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা