• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

আমাকেই বলা হতো দুই বাংলার নায়ক: ফেরদৌস

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে কলকাতায় দেখা হয়েছিলো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে। কলকাতা নিয়ে তার নস্টালজিয়া, নন্দন থেকে চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা এবং কলকাতার মানুষের ভালোবাসার কথা— সবই বললেন ষাটগম্বুজ বার্তাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে

 

‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবি দিয়ে কলকাতায় পথ চলা শুরু। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
ফেরদৌস: মনে হয় এই সেদিনই হঠাৎ বৃষ্টির শুটিং করলাম। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো সিনেমাও করে ফেললাম। দুই দেশ মিলিয়ে অনেকগুলো কাজ করেছি। আর এখন আমার মনে হয়, আমাদের এতদিনের যে প্রচেষ্টা, তা সার্থক হচ্ছে। আমারা সবসময় চেয়েছি এপার বাংলা-ওপার বাংলা, দুই বাংলার মেলবন্ধন হোক, দুই বাংলা মিলিয়ে ভালো ভালো কাজ হোক। এখন অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতার মধ্যে অর্থাৎ এই বাংলাদেশি ফ্লিম ফেসটিভাল হচ্ছে— এটা একটা নতুন উদ্যোগ, এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে। এখানকার মানুষের ভালো লাগছে বাংলাদেশের সিনেমা, তারা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম, নতুন পরিচালক, নতুন অভিনেত্রী কাজ করছে এবং এখানের মানুষ তা দেখতে পাচ্ছে, এটা খুব ভালো লাগছে। এতদিন আমাকেই বলা হতো দুই বাংলার নায়ক, এখন সেখানে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এখানে কাজ করছে, বাংলাদেশে গিয়ে কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করছে, এই যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, এটা খুবই ইতিবাচক। সারাবিশ্বে ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছে। আমার মনে হয় সারাবিশ্বে এই আবেদনটা ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলা ছবির যে চিরন্তন আবেদনটা আছে তা অক্ষুন্ন থাকবে। বাংলা সংস্কৃতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কারণ সিনেমা কিন্তু সামাজিক প্রেক্ষাপটগুলো তুলে ধরে।
 
অনেক সিনেমা জনপ্রিয় কিন্তু ‘গেরিলা’ ও ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ আজও কলকাতাবাসীর মন কাড়ে এটা কেনো? কী মনে হয় আপনার?
ফেরদৌস: আসলে কিছুকিছু সিনেমা তো এপিক হয়ে যায়, গেরিলা তার মধ্যে একটা। গেরিলাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটায় ভারতের বন্ধুত্বপুর্ণ সহযোগিতার বিষয়ও উঠে এসেছে— এ দুটি কারণেই গেরিলা মনে রাখে তাই আমাকেও মনে রাখে। কিন্তু দেখুন এবারও আমার বেশ কয়টি ছবি এখানে এসেছে। আসলে মানুষের ভালো লাগাটা আটকে যায়, এখনো কলকাতায় এলে হঠাৎ বৃষ্টির কথা বলে, তবে ওর থেকেও আরো ভালো কাজ করেছি কিন্তু মানুষের মন ওখানেই আটকে গেছে।
কলকাতায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে তারকারাচলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের দিনও বলেছিলেন কলকাতার নন্দন (সরকারি প্রেক্ষাগৃহ) আপনার কাছে নস্টালজিয়া, এর কারণ কী?
ফেরদৌস: আসলে নন্দন দিয়ে কলকাতায় আমার পথ চলা শুরু। নন্দনেই হঠাৎ বৃষ্টি রিলিজ হয়েছিলো এবং আন্তর্জাতিক ছবি হিসাবে গেরিলাও এখানেই প্রথম দেখানো হয়েছিলো। এছাড়া আমার অনেক সিনেমাই এখানে রিলিজ হয়। এখানে এলে সেসব কথা মনে পড়ে। আবার বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভাল সেই নন্দনেই হচ্ছে। তাই নন্দন আমার কাছে নস্টালজিয়া।

কলকাতার কোন বিষয়টা আপনাকে টানে?
ফেরদৌস: গোটা কলকাতাই আমাকে টানে। কলকাতা আমাকে ভীষণভাবে টানে। কলকাতার মানুষের আন্তরিকতা, তাদের ভালোবাসা, তাদের সাংস্কৃতিক চিন্তা-ভাবনা সব। আমাকে কখনই অনুভব করতে দেয়নি দেশের বাইরে আছি বা দেশের বাইরে কাজ করছি। আমার সবসময় মনে হয়েছে দেশেই কাজ করছি। মানুষ আমাকে প্রথমদিন থেকেই নিজের করে নিয়েছিলো। আমিও কখনো অনুভব করি না অন্য কোথাও আছি। আমি যখনই এখানে ঘুরে বেড়িয়েছি সবসময় মনে হয় আমি আমার নিজের দেশেই আছি। তাই আমিও মনে করি কলকাতা দেশের বাইরে আমার আর একটা দেশ।

আপনি দ্বিতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব দেখলেন। বিনোদন জগতের মানুষ আপনি। আগামী বছর তৃতীয়বারের মতো শুরু হলে আরো কী কী চাইবেন কলকাতায় আয়োজিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে?
ফেরদৌস: এটা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে এবার দ্বিতীয় বর্ষ। হয়ত এখনো কিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেছে, সামনে হয়তো সেগুলো কাটিয়ে উঠে আরো ভালোভাবে আরো বড় পরিসরে করা সম্ভব। এছাড়া আমি শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম, সেখানে ভিসি (ভাইস চান্সেলর) আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যে, এই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের যদি একটা পার্ট শান্তিনিকেতনে হয়। আমার মনে হয় খুব ভালো রেজাল্ট হবে। আগামীতে বিষয়টা নিয়ে পরিকল্পনা করা যেতেই পারে।

কলকাতার দর্শক আপনাকে নতুন ভূমিকায় কবে পাবে?
ফেরদৌস: সামনেই কলকাতায় একটা ছবি শুরু হচ্ছে, ‘দত্তা’। এটা মার্চ বা এপ্রিল থেকে শুটিং শুরু হবে। এছাড়া আমার আর ঋতুপর্ণার পুরোনো একটা ছবি আছে ‘ঝোড়ো হাওয়া’। আপতত এই দুটো, আর এখন তো সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রচুর সিনেমা আসছে, (হেসে) ক্রমশ প্রকাশ্য!

শেষ প্রশ্ন, ডাক পড়লে রাজনীতির আঙিনায় কি পা রাখবে ফেরদৌস আহমেদ?
ফেরদৌস: দেখুন, আমরা যারা অভিনেতা মানুষের জন্যই কাজ করি। বিনোদনের মাধ্যমে এক ধরনের সেবাই প্রদান করি। অবশ্য সেটাই আমাদের কাজ। প্রত্যেকটা ছবিতেই সামাজিক কিছু না কিছু বক্তব্য থাকে, যেটা সমাজের অনেক অসংগতিকেই তুলে ধরা হয়, ভালো মন্দ দেখানো হয়। সেই হিসাবে কিন্তু আমরা সবসময় মানুষের কাছাকাছিই আছি। (হেসে) রাজনীতিরও একই কাজ, সেখানেও মানুষের সেবা করা। দেখা যাক সময় বলে দেবে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা