• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ইসলামে বড়দের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২০  

ইসলামে বড়দের প্রতি সম্মানের ব্যাপারে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে ডেইলি বাংলাদেশে থাকছে বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে এর শেষ পর্ব। আগের পর্বে ইসলামে বড়দের সম্মানে ব্যাপারে যা যা বলা হয়েছে সেসব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। চলুন আজ ইসলামে এই ব্যাপারে আরো কি কি বলা হয়েছে জেনে নেই- 

স্যার সায়্যিদ আহমাদ খাঁর একটি ঘটনা। এখন তো সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আল্লাহর সঙ্গে হবে তার মুআমালা (বোঝাপড়া)। তবে বাস্তব কথা হলো, সে ইসলামি আকিদা-বিশ্বাসের ভেতরে যে বিকৃতি সাধন করেছে তা বড়ই ভয়ানক। তবে যেহেতু প্রথমে বুযুর্গদের সান্নিধ্যে ছিল এবং আলেমও ছিল, এ জন্য তার চরিত্র ভালো ছিল। একদা সে তার ঘরে উপবিষ্ট ছিল। তার সঙ্গে কতক অকৃত্রিম বন্ধুও ছিল। দূর থেকে এক ব্যক্তিকে আসতে দেখা গেল। আগন্তুক সাধারণ হিন্দুস্তানি পোশাক পরিহিত ছিল। যখন সে কাছে চলে এল, বাইরে এক হাউজের পাশে এসে দাঁড়ালো। তার হাতে একটি থলে ছিল। ঐ থলে থেকে একটি এরাবিয়ান জুব্বা বের করল। আরবীয়রা মাথায় রুমালের উপর যে তাগা বাঁধে তা বের করল এবং উভয়টি পরিধান করল। আবার কাছে আসতে লাগল। স্যার সায়্যিদ আহমাদ দূর থেকে এ দৃশ্য দেখছিলেন। তিনি তার এক সঙ্গীর সঙ্গে কথা বললেন, আগন্তুক লোকটি প্রতারক মনে হয়। কারণ লোকটি সাদাসিদে হিন্দুস্তানি পোশাক পরিহিত ছিল। নিকটে এসে সে তার পোশাক পরিবর্তন করে এরাবিয়ান জুব্বা পরিধান করল। এখন এসে নিজেকে আরব হিসেবে পেশ করবে এবং পয়সা চাবে।

কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি তার কাছে পৌঁছে গেল এবং দরজার কড়া নাড়ল। স্যার সৈয়দ আহমাদ সাহেব দরজা খুললেন এবং সম্মানের সঙ্গে তাকে  ভেতরে নিয়ে গেলেন। স্যার সৈয়দ সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, কোথা থেকে আসছেন। সে উত্তর দিল, আমি শাহ গোলাম আলী রহ. এর হাতে বায়াত। হযরত শাহ গোলাম আলী রহ. একজন উঁচুস্তরের সূফী সাধক ছিলেন। এরপর সে তার কিছু প্রয়োজন তুলে ধরে সাহায্য  প্রার্থনা করল। স্যার সৈয়দ আহমাদ প্রথমে তাকে আদর আপ্যায়ন করলেন এরপর তার প্রার্থিত টাকার চেয়ে কিছু বেশি প্রদান করে স্বসম্মানে বিদায় দিলেন।

তিনি তার আপ্যায়ন করলেন কেন?  
যখন লোকটি চলে গেল, তার সঙ্গী স্যার সৈয়দ সাহেবের কাছে বলল, আপনি বিস্ময়কর মানুষ। আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন-সে তার পোশাক পরিবর্তন করেছে এবং সাধারণ পোশাক খুলে আরবীয় পোশাক পরেছে। এরপর আপনি নিজে বলেছেন, লোকটি প্রতারক, এসে ধোঁকা দেবে, পয়সা চাবে। তা সত্ত্বেও তাকে আদর আপ্যায়ন করলেন, এত এত পয়সাও দিলেন। এর কারণ কী? স্যার সৈয়দ সাহেব উত্তর দিলেন-আসলে একদিকে সে অতিথি হয়ে এসেছিল, এই জন্য আমি তার খাতির যত্ন করেছি। আর পয়সা দেয়ার বিষয়টা, তার ধোঁকার কারণে আমি তার পয়সা দিতাম না। তবে সে এমন এক বুযুর্গের নাম বলেছে, যা শোনার পর আমার অস্বীকার করার সাহস হয়নি। কারণ হযরত গোলাম আলী রহ. আল্লাহর ওলীদের একজন। যদি তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির দূরবর্তী সম্পর্কও থাকে, ওই সম্পর্কের সম্মান করা আমার উপর ফরয ছিল। হয়তো আল্লাহ তায়ালা এ সম্মান করার কারণে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই জন্য আমি তাকে পয়সাও দিয়েছি।

দ্বীনি সম্পর্কের সম্মান করা  
হজরত থানবি (রা.) এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনা বর্ণনা করার পর তিনি বলেন, স্যার সৈয়দ সাহেব একদিকে মেহমানের সম্মান করেছেন। অপরদিকে বুযুর্গানে দ্বীনের নিসবত বা সম্পর্কের সম্মান করেছেন। কারণ আল্লাহর ওলীর সঙ্গে যার সামান্য সম্পর্ক থাকবে, যদি সেই সম্পর্কের সম্মান করা হয়, এর কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনি নিসবতের সম্মান করার তওফীক দান করুন। মোটকথা রাসূল (সা.) এ হাদিসে বলেছেন, কোনো সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি আসলে তাকে সম্মান করো।

সাধারণ জলসায় সম্মানিতদের সম্মান করা   
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি। সাধারণ সমাবেশ, মজলিস বা মসজিদের সাধারণ নিয়ম তো হলো-যে ব্যক্তি মসজিদে বা কোনো মজলিসে বা কোনো সমাবেশে গিয়ে প্রথমে কোনো স্থানে বসে যায়, সে ওই স্থানের অধিক হকদার। যেমন মসজিদের প্রথম সারিতে গিয়ে কেউ বসে যায় তাহলে সেই ওই স্থানের অধিক হকদার। তাকে এ কথা বলার অধিকার কারো নেই যে, ভাই তুমি এখান থেকে সরে যাও, আমি এখানে বসব। বরং যে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসে যাবে। তবে যদি ওই মজলিসে অথবা সাধারণ সমাবেশে অথবা মসজিদে কোনো এমন ব্যক্তি এসে যায় যে তার সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি, তাকে সামনে বসানো বা অন্যদের চেয়ে সামনে জায়গা দেয়াটাও এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়। আমাদের বুযুর্গদের সাধারণ আমল ছিল, যখন কোনো মজলিসে সকলে নিজ নিজ স্থানে বসে যেত, ঐ সময় কোনো সম্মানিত মেহমান এসে যেত, সম্মানিত মেহমানকে নিজেদের নিকট বসাত। আর যদি তাকে নিকটে বসানোর জন্য অন্যদেরকে এ কথা বলতে হয়-‘সামান্য পিছনে সরে যাও’- এতে কোনো অসুবিধা নেই।

এ হাদিসের উপর আমল হচ্ছে  
এ কথা এই জন্য বলছি-এ কর্মপদ্ধতির উপর আমাদের বুযুর্গদের নিয়মিত আমল চলে আসছে। যে কারণে মানুষের অন্তরে প্রশ্ন জাগে-শরীয়তের নির্দেশ তো হলো, যে ব্যক্তি প্রথমে আসে, সে যেখানে জায়গা পাবে সেখানেই বসে যাবে। এখন যদি কেউ বিলম্বে আসে আর পিছনে জায়গা পায়, সে তো পিছনেই বসবে। তবে এ বুযুর্গানে দ্বীন অন্যদের হক নষ্ট করে বিলম্বে আগন্তুকদেরকে সামনে বসাচ্ছেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, বুযুর্গানে দ্বীন আগন্তুকদেরকে সামনে ডাকছেন এ হাদিসের উপর আমল করেন তোমাদের কাছে যখন কোনো গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি আসে, তোমরা তার সম্মান করো।

বরং আমাদের বুযুর্গ হজরত মাসীহুল্লাহ খান সাহেব রহ. (আল্লাহ তায়ালা তার মর্যাদা উঁচু করুন, আমিন) এ বিষয়ে খুব খেয়াল করতেন। এমন কি যদি কোনো বড় ব্যক্তি মসজিদে আসতেন, লোকেরা সামনের সারিতে তাকে জায়গা না দিত, তখন হজরত লোকদেরকে সতর্ক করে বলতেন, এটা কেমন কথা! তোমাদের উচিত নিজেদের স্থান থেকে সরে সম্মানিত লোকদেরকে জায়গা দেয়া এবং একে ন্যায়-নীতির পরিপন্থী মনে না করা। বরং এটাও ওই হাদিসের উপর আমলের একটি অংশ। 

সম্মানিতকে সম্মান করাও সওয়াবের কাজ   
হজরত থানবি (রা.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় একটি চমৎকার বাক্য বলেছেন, যা স্মরণে রাখার মতো। তা হলো, কোনো ব্যক্তি চাই সে কাফের বা ফাসেক হয়, যদি তার আগমনে তাকে সম্মান করা হয় এ হাদিসের উপর আমলের নিয়তে, তাহলে ইনশাআল্লাহ এটাও সওয়াবের কাজ হবে। কারণ রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ পালন করা হচ্ছে। তবে যদি এ সম্মান করার নিয়ত হয়-আমি তাকে সম্মান করলে অমুক জাগায় কাজে আসবে, অমুক সুপারিশ করানো যাবে বা তার দ্বারা অমুক পার্থিব উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে কিংবা পদ লাভ করা যাবে, তাহলে এ সকল সুরতে সম্মান করা জায়েজ হবে না।  

অতএব সম্মান করার সময় নিয়ত ঠিক হওয়া উচিত। রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ পালনের জন্যই সম্মান করছি। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমতে তার উপর আমল করার তওফীক দান করুন। আমিন।   

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা