• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

গরুর করা `অপরাধে` অবরুদ্ধ ১৫ পরিবার

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

অপরাধ করেছে একটি গরু। সে কারণে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে গরুর মালিকসহ ১৫টি পরিবারকে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। সাভাবিক কাজকর্মও করতে পারছে না তারা। তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ ওই পরিবারগুলোর সাহায্যে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কেউই এগিয়ে আসেনি। প্রতিপক্ষের সাফ কথা, ওদেরকে এই পথ দিয়ে হাঁটতে দেওয়া হবে না। এই বেড়া কেউ খোলারও ক্ষমতা রাখে না।

অমানবিক এই ঘটনাটি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের। ওই গ্রামের আনোয়ার জমাদ্দার, ইসমাইল জমাদ্দার ও তাদের পরিবারের লোকেরা এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রতিকার চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভুক্তভোগীদের মধ্য হতে শেফালী বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি থেকে যাতে কেউ বেরুতে না পারে সে কারণে মূল রাস্তার সামনে থেকে সুপারি ও বাঁশের চটা দিয়ে প্রায় দেড় শ ফুট ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বেড়ায় বন্দি পরিবারগুলো অসহায়ের মতো বাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় ঘোরাফেরা করছে। 

কি কারণে অবরুদ্ধ জানতে চাইলে ভ্যান চালক আ. আজিজ কাজি (৫০) ও তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৪৫) জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার আগমুহূর্তে মাঠ থেকে গরু আনার সময় তাদের একটি গরু দড়ি খুলে প্রতিবেশী আনোয়ার জমাদ্দারের কলাই (খেসাড়ি) ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। তেমন কিছু নষ্ট করার আগেই শেফালী বেগম গরুটি আনতে গেলে আনোয়ার জমাদ্দার তাকে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করে। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বেশ ঝগড়াঝাটি হয়। এ ঘটনার জেরে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে লোকজন নিয়ে এসে তারা বাড়ির সীমানা ধরে রাস্তার পাশ থেকে প্রায় দেড় শ ফুট বেড়া দিয়ে আটকে দেয়। যাতে কাজি বাড়ির ১৫টি পরিবারের লোকেরা কোনোভাবে বের হতে না পারে। কেউ তাদের হয়ে কথা বলতে গেলে তাকেও গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তারা।

অবরুদ্ধ কাজি পরিবারের সবচে বয়স্ক ব্যক্তি দৌলত কাজি (৭২)। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ক্রাসে ভর করে চলতে হয় তাকে। তিনি জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে তারা এই বাড়িতে বসবাস করছেন। কিন্তু এমন বিপদে কখনো পড়তে হয়নি। হাসান মেম্বারের চাচাদের ভয়ে তাদের বাড়ির লোকজনকে প্রতিবেশী ফারুক জমাদ্দারের বাড়ির ওপর দিয়ে লুকিয়ে বের হতে হচ্ছে। সাভাবিভাবে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় তাদের পরিবারের ভ্যানচালক ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো ভোগান্তিতে পড়েছে।

প্রতিবেশী ফারুক জমাদ্দার বলেন, গরুর অপরাধে ১৫টি পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করাটা চরম অমানবিক। আমার বাড়ির ওপর দিয়ে তারা লুকিয়ে বাইরে বের হচ্ছে। এ জন্য মেম্বারের চাচা ও তাদের লোকেরা আমাকেও  হুমকি দিচ্ছে।

প্রতিপক্ষের ইসমাইল জমাদ্দার বলেন, কাজী বাড়ির লোকেরা খুব খারাপ। তাদের গরু, ছাগল দিয়ে ইচ্ছে করে আমাদের ক্ষেতখামার নষ্ট করছে। এনিয়ে কিছু বলতে গেলেই দুর্ব্যবহার শুনতে হয়।

আনোয়ার জমাদ্দার বলেন, শেফালীর গরু আমার কলাই ক্ষেতে ঢুকে তছনছ করেছে। একথা জানতে চাওয়ায় সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে আমার গায়ে হাত তুলেছে। এজন্য আমাদের জমির ওপরের রাস্তা দিয়ে তাদেরকে হাটতে দেওয়া হবে না। কেউ এই বেড়া খোলারও ক্ষমতা রাখে না।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাসানুজ্জামান জমাদ্দার বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে একটু বাইরে আছি। এসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বিষয়টি খুবই অমানবিক উল্লেখ করে বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকার বাইরে আছি। বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শুনেছি।

তিনি বলেন, রাস্তার জমি জমাদ্দারদের হলেও এখানে বিভিন্ন সময় এডিপিসহ সরকারি বরাদ্দের টাকায় ইট সলিং করা হয়েছে। এটা এখন কারো ব্যক্তিগত রাস্তা নয়। এই রাস্তা দিয়ে সবার চলার অধিকার রয়েছে। আমি এসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা