• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

চলমান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২০  

করোনা মহামারীর কারণে বাধাগ্রস্ত হওয়া চলমান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের শতকরা হারের ওপর নির্ভর করে ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা সকল প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরুর নির্দেশ দিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়। মেয়াদ বাড়াতে সারাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তবায়নের হার দেখে মেয়াদ বাড়াতে ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে পূর্ত মন্ত্রণালয়। অতি দ্রুতই এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দেয়া হবে বলে পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। চলতি অর্থবছরের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে চলে আসায় ও করোনার কারণে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ চলতি জুন মাসেই শেষ হয়ে যাবে সেসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকার গুরুত্ব বুঝে প্রকল্পের সময় কম বেশি নির্ধারণ করবে।

করেনাকালীন কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক ও ঠিকাদারদের লোকজনের করোনায় মৃত্যু হওয়া, কাজের জন্য শ্রমিক না পাওয়া, মন্ত্রণালয় ও সরকারী অফিস বন্ধ থাকায় সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়া, নির্মাণ উপকরণের জোগান না থাকাসহ নানা কারণে সৃষ্ট সমস্যায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদফতরে দেয়া চিঠির প্রেক্ষিতে সরকার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। শুধু করোনার কারণে যেসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল এমন সব বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলতি অর্থবছরে সময়মতো শেষ করতে না পরার কারণে ও নির্ধারিত সময়ে মানসম্পন্ন কাজ করা সম্ভব না বিধায় এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মোঃ শরীফ আহমেদ। একইসঙ্গে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রকল্পের কাজ চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ত প্রতিমন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনার কারণে সরকারের নেয়া অর্ধশতাধিক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদারগণ। করোনাভাইরাসের এ মহামারীর কঠিন সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিক না থাকা, একটানা দীর্ঘদিন সরকারী ছুটি থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের তদারকি না থাকায় এসব প্রকল্পের কাজ বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারগণ। ফলে সরকারের নেয়া প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থের ছাড় না থাকায়ও অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে অর্থাৎ চলতি বছর জুনে শেষ হবে সেসব প্রকল্পে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসায় দ্বিগুণ শ্রমিক ও সময় ব্যয় করে ঠিকাদারগণকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে অনুরোধ করেছে। তবে দ্রুত কাজ শেষ করতে যেন কাজের মান সমুন্নত রাখা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সরকারের বৃহৎ স্বার্থে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারী হাসপাতালগুলোতে পিসিআর ল্যাবরেটরির অবকাঠামো নির্মাণ, আইসোলেশন ইউনিট, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও করোনা ইউনিট স্থাপন এবং স্থাপনাগুলোতে পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতের কাজ এর মধ্যেও চালু রেখেছে। জানা গেছে, করোনায় নাগরিক জীবন বাঁচাতে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে পূর্তসচিব শহীদউল্লাহ খন্দকার ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলমসহ সকল স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ করোনাকে প্রাধান্য দিয়ে শত সমস্যার মধ্যেও কঠোর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ চালু রেখেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পূর্ত অধিদফতরের দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া আরও ২০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে নতুন করে সরকারী সকল অফিস-আদালত খোলার জন্য সরকারের নির্দেশ পাওয়ার পর পূর্ত মন্ত্রণালয় সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও প্রয়োজনে শিফটিং পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ভাগ ভাগ করে সকল প্রকল্পের কাজ চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত করোনা মহামারীর বর্তমান সময়ে আরাও কতদিন চলবে তার কোন নিশ্চয়তা না থাকায় সরকার বাধ্য হয়ে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের কাজ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পূর্বের দেয়া প্রকল্প এলাকায় প্রকল্প পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ থাকা বাধ্যতামূলক করা নিয়ম প্রতিপালনে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া মেগা প্রকল্পসহ বৃহৎ অনেক প্রকল্পই গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে শুধু শ্রমিক সঙ্কট থাকায় কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কোন কাজই বন্ধ রাখা যাবে না। করোনার মধ্যেই সরকারের টার্গেট পূরণে ও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেন কোন শ্রমিক, ঠিকাদার কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন মৃত্যুবরণ না করেন সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ করোনার কারণে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদারগণ। ফলে কোন ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন না। ঠিকাদারদের আবেদনের ভিত্তিতে ও সার্বিক দিক বিবেচনায় এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৪৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণ প্রকল্প, ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে মুসলিম ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রকল্প, মিরপুরে ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, গণপূর্ত নগর বিভাগের (সিটি ডিভিশন) অধীনে চেয়ারম্যানের বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প, গণপূর্ত নগর বিভাগের অধীনে স্যুট ও ডরমিটরি নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, র‌্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, নগর বিভাগের অধীনে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সচিবালয়ে ২০তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সিলেট গণপূর্ত বিভাগে জেলা হাসপাতাল প্রকল্প, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, আজিমপুরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সচিবালয়ে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগে ২০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্প কাজ বন্ধ রয়েছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা