• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ডিপ্রেশন: ১০ লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা নয়, প্রয়োজন চিকিৎসা!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২০  

প্রত্যেকেই ডিপ্রেশন শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। সবার জীবনেই কমবেশি ডিপ্রেশন থেকে থাকে। তবে মাত্রাতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণে অকালে ঝরে যেতে পারে অনেক প্রাণ। সম্প্রতি অভিনয় জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সুশান্ত সিং রাজপুত এর আত্মহত্যা তেমনি একটি ঘটনা। যার মূল কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে ডিপ্রেশন।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক সমীক্ষা বলছে, এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত (পৃথিবীতে বছরভর মানুষ যত ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে এই মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন)। আর এই রোগের চরম পরিণতি আত্মহত্যা।

সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ শুধু মানসিক অবসাদের কারণেই আত্মহত্যা করেন। তাদের এই সমীক্ষাতে আরো বলেছে পৃথিবীতে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যত মানুষ মারা যায় তাদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই আত্মহত্যা।

আমাদের শরীরের হরমোনের প্রভাবই এর মূল কারণ। আমাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিস্ক থেকে নিঃসৃত সেরাটোনিন, ডোপামিন, নর-এপিনেফ্রিন নামের হরমোন গুলো। যদি কোনো কারণে কারো এই হরমোনের নিঃসরণ ঠিকঠাক না হয় তাহলেই যত উৎপাতের শুরু।

তবে শরীরে সেরাটোনিন, ডোপামিন, নর-এপিনেফ্রিন নামক হরমোনদের ক্ষরণ কমই সব মনের রোগের গোড়ার কথা তা আমরা শুনতেই চাইনা। তার আবার চিকিৎসা! সাইক্রিয়াটিস্ট এর  কাছে যেতে হবে শুনলেই প্রথমে যেটা মনে আসে সেটা দুর বাবা ওতো পাগলের ডাক্তার। আমি কি পাগল? অথচ সারাদিন চুপচাপ থাকি, কারও সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা, মনে হয় যেন আমার কেউ নেই, আমায় কেউ ভালোবাসে না। কিন্তু চিকিৎসার কথা উঠলেই; আর যাইহোক আমিতো পাগল নই। কেন সাইক্রিয়াটিষ্টের কাছে যাব? মেন্টাল ডিসওর্ডার ওসব বড়লোকের রোগ।

শুনলে আশ্চর্য হবেন এই রোগ কিন্তু কাউকেও ছাড়ে না। তার বড় প্রমান প্রতিবছর আত্মহত্যা জনিত কারণে যে পরিমাণ রোগী গ্রামের হাসপাতালে ভর্তি হন তার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা বলছে সারা বছরে এই বিশ্ব যত লোক আত্মহত্যা করেন তার ৭৯% নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই। আর এই মুহর্তে সারা বিশ্বে যত জন মানুষ মানসিক অবসাদের স্বীকার তার ৬৩ শতাংশই মহিলা।

তবে ডাক্তারেরা বলছেন সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।

কীভাবে বুঝবেন আপনার প্রিয় কাছের মানুষটি অবসাদ নামক মারাত্মক রোগের শিকার। মনোরোগ বিষেশজ্ঞরা বলছেন নিচের ১০ কারণের ৫টি কারণ ঘটলে ধরে নেয়া যেতে পারে তার মনের কোনে জমেছে এই রোগ।

> যদি দেখেন কারো কাজকর্মে আগের মতো উৎসাহ নেই। তার সঙ্গের সবাই আনন্দ করছে কিন্তু তার মাঝে সে ভাবছে সে একা।

> খুব সামান্য কারণে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়া, আবার বিরাট কিছু ঘটে গেলেও কোনো অনুভুতি না আসা।

> যদি দেখেন কেউ সারা দিন দুঃখ বা হতাশায় ভুগছে।

> সব কিছুতেই ক্লান্তি বোধ করা।

> নিজেকে অপদার্থ ভাবা। মনে করা আমার দ্বারা কিছুই হবে না।

> কাজ কর্মে মনসংযোগ নেই। সবসময় সিদ্ধান্ত না নিতে পারার গ্লানিতে ভোগা।

> যে কোনো কারণেই সবসময় আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আনা।

> হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে ওজন বা রোগা হয়ে যাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই।

> শত চেষ্টাতেও ঘুম আসে না। সারাদিন ঝিমুনি লাগে।

> কারো ভালো কিছু হচ্ছে দেখলে নিজের মধ্যে হিংসে জাগে, ইচ্ছে হয় সব নষ্ট করে ফেলি।

এসব উপসর্গ আছে এমন মানুষ আমাদের আশেপাশেই অনেক ঘুরে বেড়ায়। একটু যত্ন একটু খেয়াল একটু নিজের করে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিলেই কিন্তু মুক্তি দেয়া যায় মানুষগুলোকে এই সব কঠিন সমস্যা থেকে।

তবে খেয়াল রাখাতে হবে, উপরের কারণগুলো কোনো রকম নেশার দ্রব্য বা ওষুধ খেয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে হলে তার চিকিৎসা আলাদা।

ডিপ্রেশনের রোগীদের সবথেকে বড় সমস্যা হল, আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি সেটা সঠিক সময়ে উপলব্ধি করা। যারা পারিবারিক সাহচর্যে থাকে তাদের পক্ষে বুঝতে পারা যতটা সোজা, যারা একা থাকেন তাদের পক্ষে অনেক অনেক বেশি কঠিন। আরো বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের চিকিৎসা। কারণ এখনো আমাদের ধারনা সাইক্রিয়াটিস্ট মানেই পাগলের চিকিৎসক। রোগীকে বোঝানো দায় হয়ে পড়ে সে ডিপ্রেশন আর পাঁচটা সাধারণ রোগের মতো একটা, আসলে সে পাগল নয়।

তবে এই রোগ কিন্তু নতুন নয়। আজ থেকে প্রায় ২০০০ সাধারণ পূর্বাব্দে মেসোপটিমিয়া সভ্যতায় এর প্রথম প্রমাণ মিলেছে। তখনকার দিনে যুদ্ধ বন্দীরা আক্রান্ত হতেন এই রোগে।

যখনি বুঝতে পারবেন আপনার কাছের লোকটি এই রোগে আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডাক্তার দেখাবার ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে সেই পর্যন্ত যতক্ষণ না সুস্থ হয়। চিকিৎসা চলাকালীন হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করাটাও চিকিৎসকরা বলছেন আরো মারাত্মক। সুশান্ত সিংহ রাজপুত তার অকাট্য প্রমাণ।

ডিপ্রেশন আবার মাত্রা হিসেবে আলাদা। স্বল্পমাত্রার ডিপ্রেশনের রোগীরা মনের কষ্ট নিয়েও স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে পারে। আপনি পাশে থেকেও বুঝতে পারবেন না পাশের লোকটি এই রোগে আক্রান্ত।

তবে যদি অবসাদের মাত্রা বাড়ে বিশেষ করে যেখানে নিয়মিত টার্গেট, ডেডলাইন, কম্পিটিশন ইত্যাদি সময় মতো সম্পন্ন করার চাপ থাকে সব সময় ভয় থাকে আপনি পিছিয়ে যাবেন প্রতিযোগিতা থেকে; ভোকাট্টা হবে নাতো চাকরিটা। তেমন পেশার মানুষরা এই রোগে আক্রান্ত হলে পেশাদারি চিকিৎসা ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুব জরুরি।

লেখক- দেবব্রত সরকার। 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা