• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

দিনটি বাঙালির ‘মুক্তি সংগ্রাম দিবস’ হিসেবে পালিত হোক

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২০  

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, পাখির কলকাকলি আর বাইগার নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। শিক্ষাজীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াতেই। গ্রামের পাঠশালায় প্রথম শিক্ষাজীবন শুরু।

১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় বন ও কৃষিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। তার আগে দাদা, দাদি, মা আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে টুঙ্গিপাড়ায় থাকতেন। ১৯৫৬ সালে ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে।

শহুরে জীবনের চেয়ে গ্রামই তার অধিক প্রিয়। ছুটি পেলেই চলে যেতেন গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায়। গ্রাম হবে শহর- এ স্লোগান তারই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বাইগার নদীর ঢেউ আর পাখির কলকাকলি বেশ উপভোগ করতেন তিনি। সে কথা নিজেই লিখেছেন তার রচনাসমগ্রে।

১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন আর ’৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে।

১৯৬৭ সালেই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি তার শ্রদ্ধার নিদর্শন চেখে পড়ার মতো, যা আমরা তার শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের মুখে বহুবার শুনেছি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে স্কুলজীবন থেকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে।

১৯৬৬-৬৭ সালে ছাত্রলীগ থেকে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ছিলেন রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে অংশ নিয়েছেন।

আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সে কারণে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিশ্বের অন্য যে কোনো নেতার থেকে আলাদা। এখন তিনি শুধু জাতীয় নেতাই নন, বিচক্ষণ বিশ্বনেতাদের অন্যতম। সর্বশেষ ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানটি’র খ্যাতি অর্জন করেছেন।

কারাবন্দি পিতা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে মা, বোন, ছোটভাই রাসেলসহ বন্দি ছিলেন। প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা মুক্তি পান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, শেখ হাসিনা এর মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়েছিলেন জার্মানিতে গবেষণারত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। সেদিন আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশের বাইরে থাকায় দৈবক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা।

স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে পুরো পরিবারকে হারিয়ে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১- এই ছয় বছর প্রবাসে নির্বাসিত ও কষ্টের জীবন কাটাতে হয় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখেন।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। একই বছরের ১৭ মে জিয়াউর রহমানের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। সেই সময় দেশে ফেরা শেখ হাসিনার জন্য সুখকর ছিল না।

ওই সময়ে দেশে জাতির পিতার ছবি এবং জয় বাংলা স্লোগান ছিল নিষিদ্ধ। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ ও বাঙালির প্রয়োজনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। দেশে ফেরার পর থেকেই নিরলসভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

এ পর্যন্ত অসংখ্যবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালায় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। বাংলার মানুষের ভালোবাসায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আঘাত এলেও তিনি কখনও মাথানত করেননি। দেশে ফিরেই তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন।

জনগণ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণেই তিনি সামরিক শাসকের সঙ্গে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। এদেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেননি।

তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কোন নির্বাচন জনগণের অধিকার আদায়ের আর কোন নির্বাচন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দলকে সরকারে আনেন তিনি। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের মানুষের সামগ্রিক মুক্তির যাত্রা শুরু করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর দলের নেতাকর্মীদের ওপর জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। সে হামলায় দলের নেতাকর্মীদের মানববর্ম শেখ হাসিনাকে প্রাণে বাঁচালেও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

২০০৬ সালের পর তাকে গৃহবন্দি করা হয়, জেলে পাঠানো হয় অনৈতিকভাবে। কিন্তু কোনো ঘাত-প্রতিঘাত তাকে দমাতে পারেনি। ষড়যন্ত্র কখনই পিছু ছাড়েনি তার। এতে অবশ্য তিনি কখনই বিচলিত নন। দমে যাননি শেখ হাসিনা। বরাবরের মতোই শোককে শক্তিতে পরিণত করে জনগণের কল্যাণে নিজেকে হিমালয়সম অটল রেখেছেন।

২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা তিনবারসহ চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২০- এই ১১ বছরে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ইতিহাসের এক স্বর্ণযুগে। এক মনে ও ধ্যানে পিতার অঙ্গীকার পূরণে নির্ভীক চিত্তে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

তার অনন্য রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কারণে তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ে থাকার কারণ। তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা, ধারাবাহিকতা এ তিনটি বিষয়ের ওপর গভীর গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক উন্নীত করেছেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে এ তিনটি বিষয়ের মাধ্যমেই এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুদককে তখন বানিয়ে রাখা হযেছিল নখদন্তহীন বাঘ। তিনি দুর্নীতিকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

যদি কোনোভাবে দুর্নীতি ধরা পড়ে সেটি ছোট কিংবা বড় যে পর্যায়েরই হোক, কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এখন দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এর কারণ কোনো দুর্নীতি ধরা পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যা এর আগে আমরা দেখতে পাইনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আমরা দেখেছি দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে; কিন্তু দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। দুদক ছিল নিশ্চুপ। এখন শেখ হাসিনা সিস্টেমই যেন দুর্নীতিকে ধরে ফেলতে পারে সেদিকে ধাবিত হচ্ছেন। সেজন্য তিনি ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর দিচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে সেদিকে যাচ্ছেন।

বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনেও তিনি সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। আগে বিচার বিভাগে সরকার নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করত। শেখ হাসিনা এর পরিত্রাণ ঘটিয়েছেন। এ কারণে এখন উচ্চ আদালত এবং নিুআদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে।

জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে সাধারণ অপরাধীদের বিচার যেভাবে হয় ঠিক সেভাবে। দেশের মানুষের দাবি ছিল জাতির পিতার হত্যাকারীরা যাতে কোনো ধরনের আপিল করতে না পারে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে না পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কোনো রাষ্ট্রনায়ক হত্যার বিচার পর্যবেক্ষণ করলে আমরা সেটাই দেখতে পাব। সেখানে রাষ্ট্রনায়কদের হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হয় এবং অপরাধীদের আপিলের কোনো সুযোগ থাকে না।

কিন্তু শেখ হাসিনা তা করেননি। তিনি আমাদের নিজস্ব বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখেছেন। অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সর্বোচ্চ সুযোগ দিয়েছেন। একই ঘটনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তখনকার গণজাগরণ মঞ্চসহ সাধারণ মানুষের দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করার, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ না দেয়ার।

বিশ্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যেসব ট্রায়াল গঠিত হয়েছিল, সেখানে অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। আমরা যদি নুরেমবার্গ ট্রায়াল দেখি তাহলে এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাব। কিন্তু শেখ হাসিনা সবকিছুকে পেছনে ফেলে বিশ্বে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, যা এর আগে আমরা বিশ্বের কোথাও দেখতে পাইনি।

তিনি প্রশাসনকে ধীরে ধীরে মেধাবীদের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করেছেন। নতুন নতুন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে। তার গৃহীত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের ফলে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তার প্রদত্ত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ বাংলাদেশকে আগামী ১০০ বছর পরে আমরা কেমন দেখতে চাই তার পরিকল্পনাও করে রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেই লক্ষ্যে তিনি ভিশন ২১০০ ঘোষণা করেছেন এবং ২১০০ সালের মধ্যে এর ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯৭৫-এ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলার, বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা তা ২ হাজার ডলারের উপরে নিয়ে গেছেন। দরিদ্র মানুষের অন্নের ব্যবস্থা করতে তিনি ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। চিকিৎসাব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এখানে দুটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন- বিশ্বের অনেক ধনী দেশেও চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা বিনামূল্যে দেয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এ দুটি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে দেয়া হচ্ছে বাড়তি সুবিধা। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে টিফিন ও উপবৃত্তি। মাধ্যমিকেও শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। উচ্চশিক্ষায় দেয়া হচ্ছে স্কলারশিপ। তার ওপর হতদরিদ্রদের জন্য সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রাম তো আছেই।

যে কোনো বৈশ্বিক দুর্যোগে সবার আগে এগিয়ে যান শেখ হাসিনা। এ করোনার সময় আমরা দেখেছি তার নিরলস পরিশ্রমের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেক কম। এ মহামারী থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে একাই লড়ছেন তিনি। সংকট মোকাবেলায় নিয়মিত দাফতরিক কাজের পাশাপাশি দুর্গত মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি সরাসরি তদারকি করেছেন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষায় সুদৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন। একাধিক ভিডিও কনফারেন্সিং করেছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে। আহ্বান জানিয়েছেন বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার।

বিশ্বে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার তুলনা তিনি নিজেই। আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বে তার মতো মানবিক নেতা দেখতে পাইনি। একথা উদাহরণ দিয়ে বলা যায়। করোনাকালীন অনেক দেশ তাদের দেশে যেসব বিদেশি শ্রমিক কাজ করে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আবার অনেক দেশ পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে তিনি ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে রেখে তাদের খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাই।

শেখ হাসিনার কল্যাণে প্রতিটি সেক্টরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে।

দেশ তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন হয়েছে তারই নেতৃত্বে। আজকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ঘরে বসে পৃথিবীর সব খবর পাচ্ছে এদেশের মানুষ, প্রয়োজনীয় কাজও সারছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এ নতুন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা।

তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসোপানে। এখন তার জীবনের একটাই প্রত্যয়- জাতির পিতার ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গড়া। সেই প্রত্যয় নিয়েই এগিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।

শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত মুক্তিসংগ্রাম বাস্তবায়নের শেষপ্রান্তে। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। তিনি দেশের নেতৃত্বে থাকলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে।

শেখ হাসিনা এদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিচ্ছেন। নিশ্চিত করছেন মানুষের সমৃদ্ধ জীবনযাপন। তাই এখন থেকে প্রতিবছর শেখ হাসিনার জন্মদিনটি (২৮ সেপ্টেম্বর) পালিত হোক বাঙালির ‘মুক্তি সংগ্রাম দিবস’ হিসেবে।

ড মুনাজ আহমেদ নূর : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা