• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ফিরে দেখা : ১১ বছরে স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে সরকারের সফলতা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯  

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। রুপকল্প ২০২১ এবং একশ’ বছরের ডেল্টা প্লানকে সামনে রেখে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। উন্নয়নের মহান রুপকার, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাধারা ও যুগোপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশ থেকে দূর হয়েছে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারত্ব। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক পরিবেশনা ‘উন্নয়নের ১১ বছর’।
দেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২.৮ বছর। নারীর ৭৩ এবং পুরুষের ৭০। পাঁচ বছরের বয়সী শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৩৪.২ জন। গত ১০ বছরে ৭৪ ভাগ কমেছে। নবজাতক মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ১৯ জন। প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণের হার ৬৪%। আমরা একে শতভাগে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ১৬৮.৫। ১৬২৬৩ নম্বর ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান চালু হয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রান্তে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যাচ্ছে। যে কোন ব্যক্তি এই নম্বরে ফোন করে তার প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। ২০১৭ সালে ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার ব্যক্তি ফোন করে সেবা নিয়েছেন। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের মাধ্যমে ৮৬ হাজার প্রেসক্রিপশন প্রদান করা হয়েছে। সারা দেশে ১৩৪৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%-এ হ্রাস পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ৬৩.৭%-এ উন্নীত মোট প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২.৩-এ হ্রাস পেয়েছে। কয়েক দফায় গত ১০ বছরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ৫শত অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়েছে। দেশের সকল স্থানে গর্ভবতী মায়েদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বিনামূল্যে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র ১৪৫টি দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানী হচ্ছে। 
শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ৩ হাজার ১৯৬ কোটি ১২ লক্ষ টাকার ঔষধ রপ্তানি হয়েছে। সরকার ২০০৯-২০১৮ মেয়াদে  মোট ১৮৬৬৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার নিয়োগ। ২০১৭ সালে ৩৫তম বিসিএস-এ নিয়োগ পেয়েছে ৪৪২জন চিকিৎসক। ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছে ২২০ চিকিৎসক। দেশের ইতিহাসে ইতিপূর্বে একত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৩২৩ জন চিকিৎসক যোগদেন ২০১৪ সালে।  প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ২০১৬ সালে পিএসসি’র মাধ্যমে ৯ হাজার ৪৭৮ জন নার্স নিয়োগ হয়েছে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্সদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২য় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। গত নয় বছরে চিকিৎসক নার্স ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শূণ্য পদে মোট ৪১ হাজার ৩২৪ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শুন্যপদে আরও ৪০ হাজার জনবল নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস কার্যক্রম ৪২৫ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ বেসিক জরুরি প্রসূতি সেবাকার্যক্রম চালু আছে। ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৫৯টি জেলা হাসপাতাল ও ২৭টি সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমন্বিত জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী মায়েদের প্রসূতি সেবাসহ যেকোন জটিলতার সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে ৬৭১ জন চিকিৎসককে অবস-গাইনী এবং এ্যানেসথেসিয়া বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
হতদরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ প্রসব সেবা নিশ্চিত কল্পে মাতৃস্বাস্থ্য ডিম্যান্ড সাইড ভাউচার স্কীম (ডিএসএফ) কার্যক্রম স¤প্রসারণ করে ৫৫টি উপজেলায় উন্নীত করা হয়েছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ১০৩-এ উন্নীত হবে। ২০০৯-২০১৭ সময়কালে ১০ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৭৫ জন দরিদ্র গর্ভবতী মা এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে গর্ভবতী মায়েদের প্রসবপূর্ব প্রসবকালীণ ও প্রসব-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১২৪৮০ জন নারীকে কমিউনিটি স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট (সিএসবিএ) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র/স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে গর্ভবতী মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা এবং প্রসবপূর্ব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ৬ মাসের মিডওয়াইফারী প্রশিক্ষণ এবং ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা মিডওয়াইফারী কোর্স চালু করা হয়েছে। ১২০০ জন মিডওয়াইফকে কোর্স সমাপ্তি শেষে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ৬৬০ জন পদায়নের অপেক্ষায় আছে।
শিশু মৃত্যু হার হ্রাস এবং টিকাদান কর্মসূচি ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালের মধ্যে অনুর্ধ্ব ৫ শিশু মৃত্যুর হার শতকরা ৭৪ ভাগ কমেছে। এমডিজি ২০১৫ লক্ষ্যমাত্রা ছিল শতকরা ৬৬ ভাগ কমানো। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী অনুর্ধ্ব ৫ শিশুমৃত্যুর হার এখন প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৩৪.২ এবং নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতিহার জীবিত জন্মে ১৯। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই হারকে যথাক্রমে ২৫ এবং ১২-তে নামিয়ে আনতে হবে। স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-তে এখন ১১টি টিকা অন্তর্ভুক্ত আছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ হাম-রুবেলা টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ৯ কোটি ৩০ লক্ষ শিশুকে এসময় টিকা দেওয়া হয়। জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধে ইপিআই কর্মসূচীতে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভেকসিন সংযোজনের জন্য গাজিপুরে এপ্রিল ২০১৬-তে সূচিত  ডেমোনেস্ট্রশন কর্মসূচি সফলভাবে ২০১৭ সালের শেষভাগে সম্পন্ন হয়েছে। জাপানীজ এনকেফালাইটিস রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারাদেশে সার্ভেলেন্স কার্যক্রম শুরুর জন্য জন ২০১৭-তে বিভিন্ন পর্য়ায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। টিকাবীজের গুণগত মান  যথাযথভাবে  সংরক্ষণ  করে  মানসম্পন্ন  টিকা  প্রদান  করার  জন্য ১৫টি জেলায়  ইপিআই  স্টোর  নির্মাণ করা হয়।

সকল উপজেলায় ইনটিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ চাইল্ডহুড ইলনেস (আইএমসিআই) কর্মসূচি স¤প্রসারণ করা হয়েছে। ৪৮৭টি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্ণারের মাধ্যমে ৫ বৎসরের কম বয়সী অসুস্থ শিশুদের মানসম্মত সেবা প্রদানকরা হচ্ছে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য ২০০৯ সালে এবং ২০১২ সালে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন (এঅঠও) শ্রেষ্ঠ অ্যাওয়ার্ড প্রদান। 
 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা