• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বরই পাতা মেশানো পানিতে মৃতদের গোসল দেয়ার কারণ কী?

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কেফায়া। অনেকে গোসল দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। তবে মানুষ মারা গেলে তাকে সঠিকভাবে গোসল দেয়া উত্তম। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কুল বা বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়া। কিন্তু মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল দেয়ার কারণ কী?

মানুষ মারা গেলে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়। কিন্তু কেন বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়, এ বিষয়টি অনেকেই জানে না। মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দেয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
> হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের সময় তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে যায় (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কেয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে ওঠবে।’ (বুখারি)

শুধু হজে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির ব্যাপারেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘোষণা দেননি বরং তিনি তাঁর মেয়ে হজরত জায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর তাকেও বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
> হজরত ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উম্মে আতিয়্যা আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ে জায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের কাছে আসেন এবং বলেন, ‘তোমরা তাকে তিন, পাঁচ প্রয়োজন মনে করলে তারচেয়ে বেশি বার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও।
শেষবার কর্পূর বা কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা (গোসল) শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা (গোসল) শেষ করে তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানা আমাদের দিয়ে বললেন, এটি তাঁর গায়ে জড়িয়ে দাও।’ (বুখারি)

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃতব্যক্তির গোসলের পানিতে বড়ই বা কুলপাতা দেয়া ইসলামি শরিয়ত সম্মত একটা রীতি। কেননা বরই পাতা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব কার্যকরী। যদি বরই পাতা না পাওয়া যায় তবে সাবান বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই যথেষ্ট। আর বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল করানো হলে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত আদায় হয়।

অনেকে আবার এ রীতিকে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলে থাকেন। তবে গোসলের পানিতে বরই পাতা দেয়া ওয়াজিব নয় বরং আলেমগণ হাদিসের এ নির্দেশনাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল দেয়ার কারণ
বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে প্রমাণিত যে, বরই পাতায় বেশ কিছু এন্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। যা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে বা পানিতে দিয়ে হালকা গরম করলে বরই পাতা থেকে এক ধরনের আঁঠালো নির্যাস পানির সঙ্গে মিশে যায়। আর এ নির্যাসগুলো মানুষের শরীরকে জীবানুমুক্ত করার কার্যকরী এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। সহজে এ শরীরে যেমন পোকা-মাকড় আক্রমণ করতে পারে না আবার এ দেহে সহজে পচন ধরে না। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এ কারণেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানোর কথা বলেছেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত মানুষকে বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়া। এতে মৃতের লাশ যেমন থাকবে জীবানুমুক্ত পরিচ্ছন্ন। আবার হাদিসের নির্দেশনার ওপরও হবে যথাযথ আমল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। মানুষের মৃত্যুর পর বরই পাতা মেশনো হালকা গরম পানি দিয়ে উত্তম পদ্ধতিতে গোসল দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা