• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটে সরকারি মৎস্য খামারে গলদার রেণু উৎপাদন

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২০  

গলদার রেনু উৎপাদনকারী সকল বাণিজ্যিক হ্যাচারি যখন বন্ধ তখন বাগেরহাট সরকারী মৎস্য বীজ খামারে গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা আসছে। সীমিত জনবল ও সামান্য বিনিয়োগে গলদার রেনু উৎপাদনে সফলতা পাওয়া খামার প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পরে গলদা রেনু উৎপাদনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে চিংড়ি চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে বিনিয়োগ ও জনবল বাড়ালে এই খামার থেকে প্রতিবছর রেনু পোনা উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে। যা জেলার চিংড়ি চাষিদের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার বাগেরহাট শহরতলীর গোবরদিয়া নামক স্থানে ৮ দশমিক ৪ একর জমির উপর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৪ বছর অর্থ্যাৎ ২০১৮ সাল  পর্যন্ত শুধু মাত্র সাদা মাছের রেনু ও চারা পোনা উৎপাদনে সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। একজন করে টেকনিশিয়ান, হ্যাচারি এ্যাটেন্ডেন্ট, ক্ষেত্রসহকারী, অপিস সহকারী ও দুইজন নাইট গার্ড নিয়ে গলদা রেনু উৎপাদনের প্রস্তুতি নেয় খামার ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুণ্ডু।

২০১৯ সালে প্রথম বারের মতো ১ লক্ষ গলদা রেনু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শরু করে তারা। প্রথম বছরই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পোনা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরে ২ লক্ষ ৫০ হাজার চিংড়ি রেনু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। আগামী ৭ দিন পর উৎপাদিত রেনু পোনা বিক্রি করা হবে বলে জানান মৎস্য বিভাগ। 

সরকারি হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন প্রক্রিয়া : সাতক্ষীরা থেকে ১০০ পিপিটি গুণ সম্পন্ন এক টন ব্রাইন (সমুদ্র বা নদীর চরে লবনের জন্য করা গর্ত থেকে লবন সংগ্রহের পরে ওই গর্তে জমে থাকা এক ধরণের পানি) সংগ্রহ করি। পরে ব্রাইনকে জীবাণুমুক্ত করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১২ পিপিটিতে আনা হয়। এরপরে প্রাকৃতিক উৎস থেকে ডিমওয়ালা মা গলদা সংগ্রহ করা হয়। ফরমালিন দিয়ে মা মাছকে জীবানুমুক্ত করে মাদার ট্যাংকিতে রাখা হয়। সেখানে ডিমওয়ালা গলদাকে উন্নত মানের চিকন আতপ চাল খাওয়ানো হয়। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মা মাছ গুলো মাদার ট্যাংকিতে লার্ভা (ডিম) ছেড়ে দেয়। মাদার ট্যাংকি থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে লার্ভা ট্যাংকিতে রাখা হয়। সেখানে লার্ভাগুলোকে আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত আর্টিমিয়া (সমুদ্রের জীবন্ত প্রাণি) নামের একটি খাবার খাওয়ানো হয়। যার প্রতি কেজি খাবারের মূল্য ৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক তিন দিন পরপর লার্ভা থাকা ট্যাংকি ও ট্যাংকির পানি পরিবর্তণ করা হয়। ১০দিন পরে আর্টিমিয়ার সাথে নিজস্ব তৈরি কাস্টার্ড (চিংড়ি মাছ, গুড়োদুধ, কর্ণ ফ্লোয়ার ও বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার) খাওয়ানো হয়।২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এই লার্ভা চিংড়ির পিএল (রেনু) হয়ে যায়।মাদার ট্যাংকিতে মা মাছ রাখার পর থেকে পিএল হওয়া এবং চাষীদের সরবরাহ করা পর্যন্ত সার্বক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।প্রতিবছর মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট নিয়ে রেনু উৎপাদন করে সরকারি খামার কর্তৃপক্ষ।

মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুণ্ডু জানান, যখন একের পর এক বিভিন্ন গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন আমরা উদ্যোগ নেই গলদা চিংড়ি রেনু উৎপাদনে। ২০১৯ সালে মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট নিয়ে উৎপাদনের চেষ্টা করি। প্রথম বছরেই আমরা সফল হই। এক লক্ষ রেনুর লক্ষ্যমাত্রার জায়গায় ২ লক্ষ মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হই। এ বছর পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদী থেকে ১০৫টি মা মাছ সংগ্রহ করি। মাছগুলো প্রায় ৬ লক্ষাধিক লার্ভা দিয়েছে। যা কয়েকদিনের মধ্যেই পিএল (রেনু) এ রূপান্তরিত হয়। আশা করি এ দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ রেনু হবে । 

তিনি আরও বলেন, ৫৫ বছর আগের জনবল কাঠামো দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান চলছে। জনবল ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ২ থেকে ৩ কোটি গলদা চিংড়ির রেনুর চাহিদা থাকা স্বত্বেও বাগেরহাট জেলার সকল গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি মৎস্য বীজ খামার দুই বছর গলদা চিংড়ি রেনু উৎপাদন করছে। এটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। চিংড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ভাবে আরও বেশি পোনা উৎপাদন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পোনা উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা সংগ্রহের অনুমতির দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, আমরা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে পরপর দুই বছর গলদা রেনু উৎপাদনে সফল হয়েছি। সাত দিন পর আমরা পিয়েল (রেনু) বিক্রি শুরু করবো। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতের মধ্যেও আমাদের খামারে উৎপাদন থেমে নেই। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো যদি আমাদের এই প্রযুক্তি নিতে চায়, আমরা তাদেরকে দিব। 

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এফ এম শফিকুজ্জোহা বলেন, খামার বাড়ি যে রেনু উৎপাদন হয়েছে, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। অল্পদিনের মধ্যে আমরা গলদা রেনু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করব।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা