• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বিদায় ২০১৮, শুভাগমন হোক ২০১৯ সালের

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮  

দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে ২০১৮ সাল। আজ ৩১ ডিসেম্বর। রাত শেষে উদিত হবে ২০১৯ সালের নতুন সূর্য। বিদায়ী বছরটা সবারই হাসি-আনন্দ, দুঃখ-দুর্দশা মিলেমিশে কেটে গেছে। কবির ভাষায়, ‘রূপ রস ও গন্ধময়,/পৃথিবী হতে বিদায় লয়,/পুরাতন বর্ষ শেষ হয়।’ পুরাতনকে হাসি মুখেই বিদায় দিতে প্রস্তুত আমরা।

আজ আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেবে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর। ২০১৮ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০১৯।

আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিস্টীয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

২০১৮ সালের সর্বশেষ দিন আজ। যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় বছরটি নানাভাবে মূল্যায়িত হবে। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৮ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের খেলা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

বিদায়ী বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ইতিমধ্যেই জাতীয় জীবনে ঘটে গেছে। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে।

২০১৮ সালে বাঙালির জাতীয় জীবনে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটেছে ১২ মে বাংলাদেশ মান সময় ভোর ২টা ১৪ তে। (১১ মে ২০১৮ ইউটিসি) এ সময় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

অন্যদিকে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে এ বছর। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। 

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে প্রিয় স্বদেশ। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার প্রত্যাশায় এগিয়ে যাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শপথ নেবে দেশের প্রত্যেক নাগরিক। নাগরিকের যাবতীয় অধিকার পূরণে সচেষ্ট থাকবে নব নির্বাচিত সরকার।

বিগত বছরের মতোই ক্রীড়াঙ্গনে আসুক সফলতা। ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্যান্য খেলাধুলাও পৌঁছে যাক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। ক্রিকেটের সফলতা অটুট থাকুক। ফুটবল জেগে উঠুক নিজস্ব শক্তিতে। হিসেবের খাতায় যুক্ত হোক নতুন নতুন পদক।

বিনোদন জগতের অস্থিরতা কেটে যাক অস্তমান সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে। তারকা জীবন আলোকিত হোক নতুন সূর্যের আলোয়। বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নিক বাংলাদেশের বিনোদন। বিনোদনের সবগুলো মাধ্যম শিক্ষণীয় হয়ে উঠুক প্রত্যেকের জন্য। নতুন ধারায় জাগিয়ে তুলুক সবার শুভবোধ।

তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে কার্যকরী যুবসমাজ উপহার দিয়ে নতুন বছরকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে এগিয়ে আসবে সবাই। বেকারত্ব দূর করতে যাবতীয় বৈষম্যের কাঁটাতার উপড়ে ফেলে যুবসমাজের যৌক্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাহলেই যুবসমাজ দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।

আগামী দিনগুলো শান্ত-সৌম্য-সুস্থির বাংলাদেশ চাই আমরা। মানুষ হবে মানুষের জন্য। দেশের সব ক্ষেত্রে সফলতা আসুক। প্রবাস জীবন বয়ে আনুক সমৃদ্ধি। প্রবাসযোদ্ধারা বয়ে আনুক দেশের সুনাম। বৈদেশিক কর্মসংস্থান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে আশা করি।

সর্বোপরি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসুক উন্নয়নের স্রোতধারায়। ভালো থাকুক প্রিয় দেশ, দেশের মাটি ও আপামর জনগণ। হাসি-আনন্দে কাটুক সবার জীবন। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সফলতার দিকে এগিয়ে যাক। বিদায় ২০১৮, শুভাগমন হোক ২০১৯ সালের।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা