• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বিশ্বকাপের শেষ স্টেশনে পৌঁছানোর যাত্রা শুরু আজ বাংলাদেশের

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২ জুন ২০১৯  

বিশ্বকাপ মানে বাঙালির স্বপ্নের দিগন্ত নানা রঙের ছটা। আবেগের জোয়ারে ভাসতে থাকা বাঙালি নিজকে আবিষ্কার করে কাপের খুব কাছাকাছি। যদিও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সেই ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে বাংলাদেশ। যেখানে বিশ বছর আগে বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের। এবার সেই ইংল্যান্ড থেকে কোন স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসবে বাংলাদেশ?

ক্রিকেট পন্ডিত বা জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাসী হলে হয়তো আগাম একটা উত্তর আপনি খুঁজে নিতে পারেন। কিন্তু খেলাটা ক্রিকেট। যা এখন অনেক বেশি বিজ্ঞান নির্ভর। ল্যাপটপের ভেতরেই এখন এক একটা ম্যাচের 'জিন' সেভ করে রাখা হয়। ম্যাচের জয়-পরাজয়ের কাঁটাছেড়া করে ম্যাচের ডিএনএ খুঁজে বের করে নেয়া হয়। তাই আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করার ঝুঁকি এখন ক্রিকেট বুকি থেকে মূর্খ কেউই করতে চাইবেন না। তারপরও এবার ক্রিকেট গ্রহে বাংলাদেশকে নিয়ে এক জ্যেতিষী একটা আগাম বাণী দিয়েছেন। ভদ্রলোক নিউজিল্যান্ডের। তিনি ম্যাককালাম। তার নিজের দেশ একবার ফাইনাল খেললেও কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ভদ্রলোকের ভবিষ্যদ্বাণী, ‘বাংলাদেশ একটা ম্যাচ জিততে পারে এবারের বিশ্বকাপে।'

 ‘রানাতুঙ্গা পেয়েছিলেন জয়াসুরিয়ার মত এক বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। মাশরাফির হাতে আছে বিশ্বসেরা এক বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। রানাতুঙ্গার ছিলেন রুমেশ কালু ভিতারানা। ম্যাশের আছে সৌম্য, লিটনের মত হিটার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অরবিন্দ ডি-সিলভার চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবেন কী তামিম কিংকা মুশফিক? মনে হয় না।’ 

হতেই পারে। তবে সেটা যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হয়, তাহলে ব্র্যাডন ম্যাককালামের হাতেই তুলে দেয়া উচিত ' চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন' এর ট্রফিটা। তাতে অন্তত নিউজিল্যান্ডবাসী খুশি হতে পারবেন, বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও বিশ্বকাপ নিয়ে একটা ট্রফি তাদের দেশের এক সাবেক ক্রিকেটারের হাতে উঠেছে। তাতে অন্তত তাদের এক ধরনের শাপমুক্তি হবে।

তবে বিশ্বকাপে শাপমুক্তি! কথাটা উঠলেই সবার আগে একটা নামই চলে আসে। সাউথ আফ্রিকা। বিশ্বকাপ শব্দটাই যেন দলটার জন্য অভিশপ্ত এক শব্দ!’৯২ এর পর থেকে এ পযর্ন্ত প্রতিটি বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবেই আসে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ। কিন্তু হতাশা ছাড়া অন্য কিছু সংগে নিয়ে ফিরতে পারে না তারা বিশ্বকাপ থেকে। ফেরা দূরে থাক। নিজের দেশে যেভাবে তারা ছিটকে গিয়েছিল তারা বিশ্বকাপে ২০০৩ এ সেটা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়!

এবারও ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শুরু করেছে তারা হার দিয়ে। স্বাগতিকদের কাছে যেভাবে হেরেছে তারা, তাতে ঘুরে ফিরে সেই পুরনো শব্দটাই উচ্চারিত হতে শুরু করেছে,‘চোকার'! বড় কোন টুর্নামেন্ট এলেই ভেঙে পড়ার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি সাউথ আফ্রিকার। অথচ কত প্রতিভাবান এবং তারকা ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে সাউথ আফ্রিকা! বিশ্বকাপ জেতার যেরকম ব্যালান্সড দল দরকার হয় তার সবই ছিল তাদের। কিন্তু ছিল না শুধু ভাগ্য। এবার ভাগ্য তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবে কী না সেটা বলার সময় আসেনি। ১৪ জুলাই যদি ফাফ ডুপ্লেসি যদি লর্ডসের ব্যালকনিতে কাপ উঁচিয়ে ধরেন তা হলে সেটা হবে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট ইতিহাসের শাপমুক্তির মুহূর্ত।

কিন্তু তার আগে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে সাউথ আফ্রিকানদের। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে যেভাবে ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইন, সেখান থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর কাজটা সহজ হবে না। ইংলিশদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আজ সাউথ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের। যে দলটার মধ্যে '৯৬ এর বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কার ছায়া দেখছেন অনেকে।

দেখবেন না কেন? শ্রীলংকার ছিল অর্জুনা রানাতুঙ্গার মত একজন ফাদার ফিগার অধিনায়ক হিসেবে। বাংলাদেশ দলে আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজার মত এক লড়াকু ক্রিকেটার। যার জীবনটা ক্রিকেটে সমর্পিত। নেতৃত্বটা মনে হয় জন্মগত। দলকে উজ্জীবিত করার মত অসাধারণ কিছু অনুঘটক আছে তার মধ্যে। এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। তিনি নিজে এবং তার টিমমেটরা চান বিশ্বকাপটা মাশরাফির জন্য স্মরণীয় করে রাখতে।

রানাতুঙ্গা পেয়েছিলেন জয়াসুরিয়ার মত এক বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। মাশরাফির হাতে আছে বিশ্বসেরা এক বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। রানাতুঙ্গার ছিলেন রুমেশ কালু ভিতারানা। ম্যাশের আছে সৌম্য, লিটনের মত হিটার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অরবিন্দ ডি-সিলভার চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবেন কী তামিম কিংকা মুশফিক? মনে হয় না।

মাহমুদ উল্লাহ থাকলেন ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব নিয়ে। আর সাব্বির রহমান অবশ্য গুরুসিংহের চেয়ে আগ্রাসী মেজাজে এগিয়ে থাকবেন। ব্যাটিং গভীরতার দিকে তাকালে মেহেদী মিরাজ, সাইফ উদ্দিন নামের দুই তরুণ দারুণ ভরসা জোগাচ্ছে দলটাকে। বোলিং এ আছে বৈচিত্র্য। আছে পেস আগ্রাসন এবং স্পিনের ম্যাজিক। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে গড়া এই দলটা ইংল্যান্ডে অঘটন ঘটিয়ে কাপ ফেরাতে পারে উপমহাদেশে।

তবে কাপ বাংলাদেশের জন্য দূরর্বতী এক স্বপ্নের নাম। ১৪ জুলাই লর্ডস যদি হয় সেই স্বপ্নের স্টেশন। তাহলে বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছানোর যাত্রা শুরু করছে আজ। তবে ওভাল নামের স্টেশনে 'বাংলাদেশ এক্সপ্রেস'-কে দ্রুত ক্রস করে যেতে হবে সাউথ আফ্রিকা নামের ট্রেনকে। যার গায়ে একটা স্টিকার লাগানো আছে 'অভিশপ্ত এক্সপ্রেস'!

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা