• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

মাবরুর হজ অর্জনের জন্য যেসব বিষয়ে দৃষ্টিপাত জরুরি

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২০  

হজ পালনকারীদের জন্য  সর্বোচ্চ লক্ষ্য বস্তু হলো মাবরুর হজ বা কবুল হজ। আর জান্নাতই হলো মাবরুর হজের প্রতিদান। 

হজ হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ রুকন। হজের আভিধানিক অর্থ দৃঢ় ইচ্ছা বা সংকল্প করা। সামর্থ্যের অধিকারী, প্রাপ্ত বয়স্ক মুসললিম নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পালন কর..’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৬)।

হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে এবং এতে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ হতে সেই দিনের ন্যায় (পাপমুক্ত) হয়ে ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’ (বুখারি ও মুসলিম)। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাবরুর হজের (গৃহীত) প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’(বুখারি ও মুসলিম)। 

উম্মুল মুমেনিন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত- তিনি বললেন হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! ‘জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করব না? রাসূল (সা.) বললেন, না বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরুর।’ (বুখারি)।

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার থেকে হজের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন গ্রহণ কর।’(মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ)।

(ক) নিয়ত পরিশুদ্ধ করা: সব কাজ আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং সব বিষয়ে তাঁর ওপর ভরসা করা ও শতভাগ আনুগত্য করা। 

(খ) কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি পরিশুদ্ধ করা: ছোট-বড় সব কাজ মেধা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে রাসূল (সা.) এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পাদন করা। 

(গ) চরিত্র ও আচার ব্যবহার পরিশুদ্ধ করা। 

(ঘ) আর্থিক বিষয়াদি পরিশুদ্ধ করা। 

মাবরুর হজ অর্জনের জন্য আরো যেসব বিষয়ে একজন হাজিকে দৃষ্টিপাত করতেই হবে, তা হলো-

(১) হজের আহকাম এবং উত্তম পাথেয়: আল্লাহ বলেন, ‘হজের মাসগুলো সুনির্দিষ্ট। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোর মধ্যে হজের সংকল্প করে, তবে সে হজের মধ্যে অশ্লীল আচরণ, অন্যায়-আচরণ, কলহ-বিবাদ করতে পারবে না। তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু কর, আল্লাহ তা জানেন; আর তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করো; নিশ্চিত উত্কৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া এবং হে জ্ঞানবানরা! তোমরা আমাকে ভয় কর’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৭)। 

(২) তওবা করা: আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তওবা কবুল করেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে ও অতি সত্বর তওবা করে। সুতরাং আল্লাহ তাদেরকেই ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৭)। 

(৩) গীবত থেকে বিরত থাকা: মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অনেক ধারণা পোষণ থেকে বিরত থাক! আর তোমরা পরস্পরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? এটাতো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা কর! আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’ (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১২)। 

(৪) অহংকার না করা: আল্লাহ বলেন, ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারকারীকে পছন্দ করেন না! তুমি পদক্ষেপ কর সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু কর; নিশ্চয়ই সুরের মধ্যে গর্ধবের সুরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সূরা: লোকমান, আয়াত: ১৮-১৯)। 

(৫) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতায় থাকা এবং অপব্যয় না করা। 

(৬) পর্দা করা: আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটা তাদের জন্য পবিত্রতম। মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ব্যতীত অলংকার বা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না/চাদর) দ্বারা আবৃত রাখে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে না হাঁটে...’। (সূরা: নূর আয়াত: ৩০-৩১) 

(৭) ধৈর্যধারণ করা: আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যর প্রতিযোগিতা কর’(সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)।‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন’(সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৬)। 

(৮) হিংসা পরিহার করা: রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাক; কারণ হিংসা নেক আমলসমূহ এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’ (আবু দাউদ)। 

(৯) মানুষের হক এবং আমানত: আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন যে, তোমরা গচ্ছিত (আমানত) বুঝিয়ে দাও তার অধিকারীকে...” (সূরা: নিসা, আয়াত: ৫৮)। 

(১০) কোরআন তেলাওয়াত করা, বুঝা এবং আমল করা এবং প্রচার করা। 

(১১) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য করা। 

(১২) হারাম এলাকার পবিত্রতা এবং মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান নিয়ে যাওয়া। 

(১৩) হজ সফর সঙ্গী বাছাই করা এবং সুন্দর আখলাক গঠন করা।

হজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনে মাজার এক হাদিসে বিবৃত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা আদায়কারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। গোনাহ মাফ করাতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করেন।’ 
মুসনাদে আহমদের এক হাদিসে বিবৃত হয়েছে, ‘রাসূল (সা.) বলেন, যখন কোনো হাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে তো তাকে সালাম দেবে, মোসাফাহা করবে এবং তার কাছে তোমার গোনাহ মাফের জন্য দোয়ার দরখাস্ত করবে। কেননা, সে ক্ষমা প্রাপ্ত।’ তবে এসব ফজিলত তাদের জন্য যাদের হজ ‘মাবরুর’ হিসেবে আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

মাবরুর হজ বলতে বুঝানো হয়েছে, যে হজ ইখলাসের সঙ্গে, সমস্ত রকমের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থেকে আদায় করা হয়। এক হাদিসে এসেছে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘একবার ওমরা আদায় করার পর পুনরায় ওমরা আদায় করার দ্বারা দুই ওমরার মাঝের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আর মাবরুর হজের প্রতিদান হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার জান্নাত।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা এবারের করোনা পরিস্হিতিতে যাদের যাদের হজ নসিব করেছেন,  সেই সব হজ পালনকারীদেরকে হজে মাবরুর দান করুন। আমিন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা