• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

মেট্রোরেলের কারণে বদলে যাচ্ছে ঢাকার চলার পথ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

সাতসকালে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে বাংলামোটরে অফিসে যেতে হয় আবুল হাসানকে। পেশায় তিনি একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাস। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য মিরপুর ১ নম্বর থেকে ফার্মগেট হয়ে বাংলামোটর বাসস্টপেজে নামতে হতো তাঁকে। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক আগে হঠাৎ করেই এই রুটের বাসগুলোর গতিপথ বদলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে হাসানকে এখন নেমে যেতে হচ্ছে শুক্রাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে প্রায় আধা ঘণ্টার পথ হেঁটে অফিসে যাচ্ছেন তিনি।

গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে রাজধানীতে চলাচলকারী শতাধিক সড়কপথের বাসের গতিপথ এভাবেই বদলে গেছে। তাই আবুল হাসানের মতো অগণিত মানুষের চলার পথ এলোমেলো হয়ে গেছে। পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নির্ধারিত স্থানে গণপরিবহনের দেখা মিলছে না।

এ ব্যাপারে আবুল হাসান বলেন, ‘এই দুর্ভোগ কত দিন সইতে হবে?’
মেট্রোরেল প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হয়ে যাওয়ায় বাসের চলার পথ পরিবর্তন করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। কত দিন এভাবে গণপরিবহন চলবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।

যেভাবে বাস চলছে
গত ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে ট্রাফিক বিভাগের নতুন নিয়মে বাস চলছে। মিরপুর রোড থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে আসা বাসগুলোকে ফার্মগেটের দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সড়কপথের বাসগুলো বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁওয়ে দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সড়কে চলাচলকারী কোনো কোনো বাস সরাসরি সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে শাহবাগ দিয়ে মতিঝিল যাচ্ছে। কেবল ক্যান্টনমেন্ট রুটের বাস ফার্মগেট হয়ে মতিঝিলের দিকে যেতে পারছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বাসের পথ বদলানো হবে।

পথ বদলে বিপত্তি
বাসের মতো গণপরিবহনের চলার পথ বদলে দেওয়ায় বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী ও বাসচালকদের। দুর্ভোগ বেড়েছে ফার্মগেট, খেজুরবাগান, তেজগাঁও, বাংলামোটরসহ আশপাশের এলাকাবাসী ও কর্মজীবী মানুষের। এ নিয়ে অসন্তোষ ট্রাফিক বিভাগের মধ্যেও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসযাত্রীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আমাদের দেখেও না দেখার ভান করতে হচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই।’

যে কারণে চলার পথ বদল
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৩৭৭টি পিয়ারের ওপর ৩৭৬টি স্প্যান বসে বিস্তৃত হবে ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল প্রকল্প। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ (সিপি)-৩, ৪, ৫, ৬—এই চারটি প্যাকেজে এর কাজ পুরোদমে চলছে। এর মধ্য প্রথম ভাগে প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে রয়েছে আগারগাঁও পর্যন্ত। প্রকল্পের এই অংশের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে পারবেন বলে আশা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। আর পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে।

২০১৮ সালের শেষ দিকে সিপি ৫ ও ৬-এর কাজ শুরু হয়েছে। সিপি ৫-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার রুট হবে। এই রুটে তিনটি স্টেশন থাকবে। এই অংশে থাকবে ১০০টি পিয়ার। এসব পিয়ার নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে আগারগাঁও থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কের অনেক অংশে বিভাজক তুলে ফেলা হয়েছে। বসানো হয়েছে কংক্রিটের বেষ্টনী। এ কারণে আট লেনের সড়ক চার লেন হয়ে গেছে। এই চার লেনের সড়ক দিয়ে প্রায় দুই বছর যান চলাচল করবে।

একইভাবে সার্ক ফোয়ারা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সড়কে সিপি ৬-এর কাজও শুরু হয়েছে।

তবে এর ঝাপটা এসেছে পড়েছে সড়কপথে। প্রকল্পের কাজের জন্য সরু হয়ে গেছে সড়ক। আট লেনের প্রধান সড়ক কমে হয়ে গেছে মাত্র চার লেনে। কোথাও কোথাও এর চেয়েও সরু হয়ে গেছে বা যেতে পারে রাজপথ।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগারগাঁও-ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কটি প্রস্থে প্রায় ২২ মিটার। এর মধ্যে সড়কের দুই পাশের মধ্যবর্তী ১১ মিটার অংশে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলবে। তাই একপাশের মাত্র সাড়ে পাঁচ মিটারের মধ্যে যানবাহন চলাচল করবে। এই অংশ দিয়ে মাত্র একটি বাস অথবা প্রাইভেট কারের সঙ্গে খুব বড়জোর একটি মোটরসাইকেল পাশাপাশি একসঙ্গে চলতে পারবে। এ কারণে সামনে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে যানজট আরও বৃদ্ধি আশঙ্কা রয়েছে। তাই যান চলাচলে বিকল্প ব্যবস্থা না নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

পরিস্থিতির সমাধানে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ১৫ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবে যা রয়েছে:

রাজধানী ঢাকায় প্রধান তিনটি সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বিমানবন্দর-ফার্মগেট-শাহবাগ, জিরোপয়েন্ট-মতিঝিল সড়ক। দ্বিতীয়টি হলো পল্টন-বাড্ডা-বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হয়ে বিমানবন্দর। আর তৃতীয় সড়কটি হলো গুলিস্তান-মিরপুর সড়ক।

এই তিনটি সড়কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিমানবন্দর-মতিঝিল সড়কটি। এই সড়ক ‘ভিআইপি সড়ক’ হিসেবে পরিচিত। এই ভিআইপি সড়কই রাজধানী ঢাকাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। ভিআইপি সড়কের কোনো অংশে যানজট সৃষ্টি হলে এর প্রভাব পড়ে পুরো রাজধানীতে। এ ছাড়া ভিআইপি সড়ক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা চলাচল করেন। এর পাশাপাশি এই সড়কে ১১১টি রুটের বাস যাত্রী পরিবহন করছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) হিসেবে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজধানীতে ঢাকায় বিআরটিএর নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে ১৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০টি। এর মধ্য প্রাইভেট কার রয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৪১টি।

ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের কারণে বাসের চলার পথ পরিবর্তন করায় বর্তমানে সার্ক ফোয়ারা অতিক্রম করছে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৮০০ প্রাইভেট কার। তাই যানজট কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা, যাঁদের প্রধান বাহন বাসের মতো গণপরিবহন।

এ কারণে ১৫টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মফিজউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে মাঠপর্যায়ে সমন্বয় করা, যেসব এলাকায় সড়ক বেশি সরু হয়েছে সেখানে ফুটপাত কেটে ছোট করা, বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে ফেলা, পরিবেশদূষণ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা, মেট্রোরেলের ভারী কাজগুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় করানো। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট বা মোড়গুলোতে নজরদারি করা। এর পাশাপাশি বড় কোনো কাজের আগে গণমাধ্যমের সহায়তায় নগরবাসীকে অবহিত করা।
মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পের জন্য সড়কের ১১ মিটার জায়গা প্রয়োজন হবে। এই জায়গার মধ্যে গার্ডার বসানো হবে। পুরো বিষয় নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। সমস্যা হলো, এই সড়কের দুপাশে অনেক ভবনে নিচে কার পার্কিং নেই। এ কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এসব ভবনের তালিকা তৈরি করে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি।’
যানজট কমাতে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে ব্যস্ত সময়ে প্রাইভেট কার বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনা করছে ট্রাফিক বিভাগ।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যস্ত সময় হিসেবে সকাল আটটা থেকে সকাল সাড়ে দশটা এবং বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সপ্তাহে রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন মোট সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত প্রাইভেট কার চলাচল বন্ধ রাখা হবে। প্রথম দিকে রাজধানী ‘গ’ সিরিজের প্রাইভেট কারের বন্ধ রাখার চিন্তা চলবে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে পরবর্তী সময়ে ‘ক’ ও ‘খ’ সিরিজের প্রাইভেট কারগুলো বন্ধ রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, রোগী বহনকারী ও ওষুধ পরিবহনের মতো জরুরি সেবার গাড়িগুলো এর আওতার বাইরে রাখা হবে।

বিকল্প হিসেবে ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালের পাশ দিয়ে প্রাইভেট কারগুলোকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ের দিকে পাঠানো হবে। এর অংশ হিসেবে আল রাজী হাসপাতালের সামনের সড়কের বিভাজক তুলে প্রশস্ত করা হবে। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এই সড়কে রিকশামুক্ত রাখা হবে। এ ছাড়া তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনে রেলক্রসিংয়ে বাঁক তুলে সড়কটি সোজা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, যাঁরা গুলশান বা মগবাজার দিয়ে প্রাইভেট কারে কারওয়ান বাজার এলাকার দিকে আসবেন, বিকল্প হিসেবে তাঁদের এফডিসি সড়ক দিয়ে হোটেল সোনারগাঁও মোড়ের কাছাকাছি নেমে যেতে হবে। মিরপুর বা ধানমন্ডি থেকে আসা প্রাইভেট কারের যাত্রীদের বসুন্ধরা মোড়ের কাছাকাছি নেমে যেতে হবে।

ফার্মগেট-শাহবাগ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে মোটরসাইকেলকে প্রাধান্য দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
এমন তথ্য দিয়ে ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ২২ মিটারের সড়ক ১১ মিটারে নেমে আসছে। তাই সরু সড়কে মোটরসাইকেল ও বাস চলাচল করলে সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে। রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ এই দুটি যানবাহনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তাই এগুলোর প্রাধান্য দেওয়া হলে ভোগান্তি অনেকটাই কমতে পারে।
কিন্তু ফার্মগেটে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, কারওয়ান বাজারে ট্রাকের পণ্য পরিবহন এবং ফার্মগেট এলাকায় তিনটি পদচারী-সেতু তুলে দেওয়ার বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর বিকল্প ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া যায়নি।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেজুরবাগান মোড় থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল সড়কটি কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। বিকল্প হিসেবে তেজগাঁও সড়কটি ওয়ানওয়ের পরিবর্তে যানবাহনগুলো আসা-যাওয়া করতে দেওয়া হবে। ফার্মগেটে তিনটি পদচারী-সেতু তুলে দেওয়া হবে। এর পরিবর্তে জেব্রাক্রসিং ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আনন্দ হলের পাশের সড়কর পদচারী-সেতু তৈরি করে দিতে পারে। তবে হলিক্রসের শিক্ষার্থীদের চলাচল, কারওয়ান বাজারের পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর কীভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় আসা-যাওয়া করবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।

১০ বছর ধরে পরিবহন ব্যবসা করছেন এম এ হাসান। সাভার-ঢাকাসহ রাজধানীর তিনটি সড়কপথে তাঁর বাস চলাচল করে। কিন্তু হঠাৎ করে বাসের চলার পথ বদলে ফেলায় যাত্রী হারাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক বা আলোচনা করা হয়নি। তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করেছে। আমরাও সেগুলো মেনে চলছি। তবে এর ফলে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে, ট্রিপ কমে গেছে, ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, বাস চলাচলের পথ বদল না করে প্রাইভেট কারগুলোকে বিকল্প পথে চলাচল করানো হলে নগরবাসীর সুফল মিলত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকার সড়কে ব্যস্ততম সময়ে কেবল প্রাইভেট কার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করলেই চলবে না, গণপরিবহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে।

এআরআইয়ের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ভিআইপি সড়কে যেখানে মেট্রোরেলের কাজ চলছে, সেখানে অফিস টাইমে প্রাইভেট কার বন্ধ রেখে গণপরিবহন চলাচল করতে দেওয়া উচিত। এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে। তবে গণপরিবহন যেন সময়মতো পাওয়া যায়, সেদিকের প্রতিও লক্ষ রাখা উচিত।

দুর্ভোগ কমতে লাগবে দুই বছর 
২০২০ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। তবে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২১ সালের শেষ দিকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আগারগাঁও-সার্ক ফোয়ারা অংশের কাজ সম্পন্ন হতে পারে।

তাই কমপক্ষে দুই বছর রাজধানীর সরু সড়কে যানবাহন ও জনতার চলাচল করে হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের চিফ প্লানিং ইঞ্জিনিয়ার (সিপি-৫) মো. সরফরাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নকশা দেওয়ার পর আমরা নির্মাণকাজ শুরু করি। এর আগে ট্রাফিক বিভাগ, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য যতটুকু জায়গায় ছাড়া প্রয়োজন, তার চেয়ে কম জায়গায় কাজ করা হচ্ছে। তবে ঢাকা শহরে সড়কের আয়তনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। বড় প্রকল্পের কাজের সময় সমস্যা কিছুটা হতেই পারে। কিন্তু নিয়ম মেনে চললে দুর্ভোগ কম হবে বলে মনে করেন তিনি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা