• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

‘রোজা শুধুই তার জন্য, তিনিই এর প্রতিদান দেবেন’

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১  

সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। প্রত্যেক মুসলনামের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। মহিমান্বিত এই মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন মুমিন বান্দা। ইবাদত, সংযম এবং সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে কাটাবে গোটা মুসলিম উম্মাহ। 

আত্মশুদ্ধি, সংযমের প্রশিক্ষণ নেবে উপবাসের মধ্য দিয়ে। ইফতার সাহরিতে ছড়িয়ে পড়বে ইবাদতের আনন্দ। মুসলিম সমাজে এ রোজার রাখার তাৎপর্য অনেক। রোজাদারের জন্য রয়েছে অফুরন্ত ফজিলত। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম, তা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম -২৭৬০)

এ হাদিসটি দ্বারাই বোঝা যায় রোজার কী ফজিলত রয়েছে। সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) যখন বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই।’ (নাসায়ি-২৫৩৪)

রোজাদার বিনা হিসেবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মের প্রতিদান বিনা হিসেবে দেয়া হয় না। বরং রমজানে প্রতিটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রতিদান দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম-১৫৫১)

মানুষ এ দুনিয়ার জীবনে ছোট বড় অনেক অপরাধ করে থাকে। পরকালে প্রতিটি অপরাধের হিসেব আল্লাহ নেবেন। তবে অনেক অপরাধ অনেক আমলের বিনিময়ে তিনি ক্ষমাও করে দেবেন। এমনই একটি আমল রোজা। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা হলো ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমদ-৯২১৪) 

বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (৭০ বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ (মুসলিম-২৭৬৯)

রোজার মাধ্যমে যেহেতু বান্দার অসামান্য ত্যাগ প্রকাশ পায় তাই এর বিনিময়টাও অত্যধিক। রোজাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকে আম্বরের ঘ্রাণ থেকেও উত্তম। বান্দা রোজা রাখার কারণে তিনি বান্দার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন। আর ফলাফল বরাবর জান্নাত। 

হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন, যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কেননা, এর সমকক্ষ আর কোনো ইবাদত নেই।’ (নাসায়ি-২২২০) 

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি-১৭৯৭)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, ‘এরপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ-৬৬২৬)

এভাবেই কোরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে রোজার ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। তাই কোনো একটি রোজাও মুমিন বান্দাদের ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। ইদানীংকালে অনেক মুসলিম সন্তানদের রোজার রাখার প্রতি অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যহানীর ভয়েও অনেকে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকেন। এসবই ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা। 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর নিয়ম পালনে বান্দার কোনো ক্ষতি নেই। বরং ইহকাল ও পরকালে রয়েছে অশেষ ফজিলত ও মর্যাদা।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা