• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

সব দায় আমিরের ওপরই চাপালেন মিসবাহ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২১  

গত ডিসেম্বরে মানসিক অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমির। সরাসরি না বললেও, তিনি এর পেছনে দায়ী করেছেন দলের পেস বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিসকে। তবে পাকিস্তানের হেড কোচ মিসবাহ উল হকের মতে, অবসর নেয়ার মতো পরিস্থিতিটা আমির নিজেই তৈরি করেছেন।

মিসবাহ মনে করেন, মানসিক অত্যাচার কিংবা আর সইতে না পারার যে অবস্থা, সেটা আলোচনার মধ্যে কখনওই ছিল না। কেননা পারফরম্যান্সজনিত কারণে দলে ‘অটো চয়েজ’ ছিলেন না আমির এবং তাকে বলা হয়েছিল, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ফর্মের প্রমাণ দিয়ে আবার জাতীয় দলে ফিরতে। তা না করে উল্টো অবসরই নিয়ে ফেলেছেন আমির।

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সবশেষ নিউজিল্যান্ড সফরের স্কোয়াডে নেয়া হয়নি দলের অন্যতম সিনিয়র পেসার আমিরকে। ম্যানেজম্যান্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গত দুই বছরে আশানুরূপ বোলিং করতে পারেননি তিনি। এ সময়ের মধ্যে নয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ওভারপ্রতি ৮ রান খরচায় আমিরের শিকার ছিল মাত্র ৭ উইকেট।

বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গতবছরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ম্যাচে মাত্র ৪.১ ওভার বোলিং করতে পেরেছিলেন আমির, উইকেট পাননি একটিও। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ফিল্ডিংয়েও ছিলেন না তৎপর এবং শেষমেশ খেলতে পারেননি শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে সাত ম্যাচে ৩৮.৩৩ গড়ে মাত্র ৬ উইকেট নিয়েছেন আমির।

যার ফলে আমিরকে বাদ রেখে তরুণ পেসারদের ওপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচকরা। দলের হেড কোচ মিসবাহর মতে, আমিরকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল নির্বাচক প্যানেলে থাকা সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমির এর দায়টা পুরোপুরি চাপান মিসবাহ ও ওয়াকারের ওপর। তার মতে, এ দুজনের কারণেই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে দল থেকে।

এ অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা জানিয়ে মিসবাহ বলেছেন, ‘আমিরের বাদ পড়ার ক্ষেত্রে ওয়াকার ইউনিসকে জড়িয়ে অনেক কথা শোনা গেছে। যেখানে সত্যের ছিটেফোঁটাও নেই। সেখানে নির্বাচক হিসেবে ছিলেন ছয় অ্যাসোসিয়েশনের কোচ, আমি ছিলাম প্রধান নির্বাচক, এমনকি অধিনায়কও ছিল। তাই কারও একার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কেউই আমিরকে দলের নেয়ার পক্ষে ছিল না। আমি জানি না কী কারণে সে (আমির) এসব বানিয়েছে, যা কি না কখনও আলোচনায়ই ছিল না। তার জন্য বিষয়টা খুব সহজ ছিল, (ঘরোয়া ক্রিকেট) মাঠে নেমে নিজের ফর্মের প্রমাণ দিয়ে দলে ফেরা। এর বাইরে বাকি সবকিছুই অপ্রাসঙ্গিক।

এসময় আমিরের মাঠের পারফরম্যান্স ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা না দেয়ার দিকেও প্রশ্ন তোলেন মিসবাহ। তার মতে, অন্যান্য জুনিয়র পেসাররা আরও ভালো করায়, আমিরকে দলে রাখার কোনো কারণ ছিল না। মাঠের ভালো করতে না পারায় দল থেকে বাদ পড়া কিংবা পরে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়া- সবকিছুর দায় আমিরকেই নিতে হবে বলে মনে করেন মিসবাহ।

তার ভাষ্য, ‘আমিরের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমি সবসময় সকল সিনিয়র বা জুনিয়র ক্রিকেটারকে সম্মান করেছি। সে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর আমিই দলের অধিনায়ক ছিলাম এবং সবকিছু ভুলে স্বাগত জানিয়েছিলাম, পাকিস্তানের হয়ে খেলতে সাহস জুগিয়েছিলাম।’

‘আমার মনে, ২০২০ সালের ইংল্যান্ড সফরে তাকে দলে পেতে আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু সে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শুরু যায়নি। পরে ব্যক্তিগত সমস্যা মিটিয়ে আমাকে জানায় যে, সে খেলতে পারবে। তখন আমি এবং ওয়াকার ভাই-ই তাকে দলে ফেরাই। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে বাড়তি সম্মানও দেই। এরপর সে ইনজুরিতে পড়ে, যা পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলে।

‘গতবছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমরা তাকে সরাসরিই বলেহি যে, এ সিরিজে মোহাম্মদ হাসনাইন, হারিস রউফ, মুসা খানদের মতো তরুণ বোলারদের খেলাবো। তারপর আমরা তাকে (আমির) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে দেখলাম। যেখানে তার দলের (নর্দার্ন) অন্যান্য বোলাররা তার চেয়ে ভাল করছিল। সে কয়েকটা ম্যাচ খারাপ করে এবং দলে জায়গা ফিরে পেতেও লড়াই করতে হচ্ছিল।’

‘তাই তার জন্য খুবই সহজ একটি পরিকল্পনা ছিল। ইংল্যান্ডে আমরা তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা তাকে বলেছি যে, তুমি আমাদের সিনিয়র বোলার। যেহেতু তুমি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছ, আমরা আশা করব সর্বোচ্চটা দেবে মাঠে। চার ওভারে নিজের পুরোটা ঢেলে দিতে হবে, দলকে এগিয়ে নিতে হবে, এটাই তোমার দায়িত্ব। কিন্তু এরপর তা হলো না। গড়ে ৮৭-৮৮ মাইল/ঘণ্টা বেগে বোলিংয়ের সামর্থ্য থাকার পরেও, দেখা গেলো ৮১ মাইলে বোলিং করছে।’

‘এমন হলে দলে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা শাহিন আফ্রিদি, হাসনাইন, হারিস রউফরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছিল মাঠে এবং প্রমাণ করছিল তারা আমিরের চেয়ে ভাল। তাই তাকে এ প্রতিযোগিতায় জিতেই দলে ফিরতে হতো। সিনিয়র বোলার হলেও, ফর্ম না থাকলে তাকে দলে নেয়া সম্ভব নয়। এখানে শুধু পারফরম্যান্সেরই বিষয় ছিল। অন্য কিছু নয়। এখানে ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ের জায়গা নেই।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা