• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

সুন্দরবনের যেখানে গেলেই দেখা মেলে হরিণের!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৯  

সুন্দরবন থেকে ফিরে: সবুজের রাজ্যে সূর্য এরই মধ্যে কোমলতা-স্নিগ্ধতা ঝেড়ে কর্কশ-উষ্ণ হতে শুরু করেছে। শরতের হালকা কুয়াশা গায়ে মেখে ভদ্রা নদীর পাড়ে একদল মায়া হরিণ বিচরণ করছে। হয়তো বা সকালের খাবার খেতে নয়তো বা সূর্যের নরম আলো গায়ে মাখতে।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশনে যাওয়ার পথে ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকালে টানা টানা চোখের মায়াবী চাহনির এক ঝাঁক হরিণের দেখা মেলে। ভদ্রা নদীর পশ্চিম পাড় দিয়ে লঞ্চে যাওয়ার সময় উচ্ছল এবং প্রিয় দর্শন এই হরিণে চোখ আটকে যায়। ক্রমান্বয়ে নদীর পাড়ে যেতে না যেতেই হরিণ মানুষের সারা পেয়ে সরু সরু পায়ে ক্ষীপ্রগতিতে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে ক্যামেরাবন্দি হয়ে পড়ে অপূর্ব সুন্দর হরিণের দল।বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনে প্রায় ২ লক্ষাধিক হরিণ রয়েছে। এ বনে চিত্রা ও মায়া দু’ধরনের হরিণ রয়েছে। বনের সর্বত্রই এর বাস। তবে বেশি দেখা যায় মায়া হরিণদের। সাধারণত বনের কটকা, করমজল, দুবলারচর, হিরণপয়েন্ট, কচিখালী, সুপতি, ঢাংমারী এলাকায় হরিণের বেশি বিচরণ।

কথায় আছে ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ অর্থাৎ হরিণের নিজের শরীরের মাংসই যেন তার নিজের শত্রু। প্রাচীন এই কবি-কথা প্রবাদে পরিণত হলেও তা আজ বাস্তব সত্য। হরিণের মাংসের প্রতি মুখিয়ে থাকেন এক দল মানুষ। হরিণ খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন সংলগ্ন জনবসতিতে ডুকে পড়লেই তাদের শিকার করে কিছু শিকারী।

বন রক্ষকরা বলছেন, সুন্দরবনের হরিণ মানুষের মনকে এক পলকে কেড়ে নেয়। হরিণেরা নিশাচর বা দিবাচর। ঘাস, লতাপাতা, ওড়া, কেওড়া, গোল, ধুন্দল, গেউয়া গাছের ফল খুব পছন্দ হরিণের। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। এরা যাওয়ার পথে পায়ের চিহ্ন রেখে যায়। অত্যন্ত আরামপ্রিয় এবং সৌখিন। হরিণ অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন এবং সজাগ। বনের হরিণ বাঘের অন্যতম প্রধান শিকার। তাই বাঘের আক্রমণের পূর্বাভাস পেলেই তারা ক্ষিপ্র গতিতে পালিয়ে যায়। এমনকি মানুষের উপস্থিতি টের পেলেও এরা বনের ভেতর চলে যায়।তারা আরও বলেন, বাঘ হরিণের চিরশত্রু হলেও ব্যতিক্রম বানরের সঙ্গে সম্পর্ক। বনের বানরেরা কেওড়া গাছে উঠে নিজেরা যেমন পাতা ও ফল খায়, গাছের নিচে অপেক্ষমান হরিণের জন্য অনুরূপভাবে গাছের ফল বা পাতা নিচে ফেলে দেয়। হরিণের সংগে বানরের সম্পর্ক চমৎকার । কোনো বিপদের সংকেত পেলে বানর ডাক দিয়ে হরিণকে সতর্ক করে দেয়।

জানা গেছে, দূর থেকে মায়া হরিণের ডাক কুকুরের ডাকের মতো শোনায়। ভয় পেলে ভাঙা ভাঙা স্বরে চেঁচায়। হরিণী প্রজনন মৌসুমে ডাকে তীক্ষ্ণ মিউ মিউ স্বরে এবং হরিণ ঘণ্টাধ্বনির শব্দে। এক বছরের মধ্যেই হরিণী প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। গর্ভকাল প্রায় ৭ মাস। সাধারণত ১ থেকে ২টি বাচ্চা প্রসব করে। প্রাপ্তবয়স্ক চিত্রা হরিণের শিং তিন শাখাবিশিষ্ট। বৃক্ষঘন এলাকায় বসবাস এদের পছন্দ। দু’তিনটি পুরুষ হরিণসহ এরা ১০ থেকে ৩০টি একত্রে দলবদ্ধ থাকে। অবশ্য সুন্দরবনে একসঙ্গে কয়েকশ চিত্রাহরিণের পালও দেখা যায়। এদের প্রজননের র্নিদিষ্ট কোনো ঋতু নেই। চিত্রাহরিণের গর্ভাধারণকাল ৭ মাস। প্রতিবারে একটি বাচ্চা প্রসব করে।পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জের স্মার্ট প্যাট্রোল টিমের লিডার সুলতান মাহমুদ টিটু বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনেই হরিণের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বসতি। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই হরিণ বনের মধ্যে চলে যায়। নদীর ধারে এদের দলবদ্ধ হয়ে বেশি ঘুরতে দেখা যায়। ভীতু প্রকৃতির হলেও হরিণ খুবই সতর্ক প্রাণী। ফলে সুযোগ বুঝেই শিকার করতে হয় বাঘকে। একবার বাঘের উপস্থিতি টের পেলে এরা তীব্র বেগে দৌঁড়ে পালায়।

তিনি আরও বলেন, কিছু লোকের চাহিদা মেটাতে অর্থলোভী হরিণ পাচারকারী চক্র এক সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার করতো। কিন্তু সার্বক্ষণিক স্মার্ট প্যাট্রোল টিমসহ বনরক্ষীদের সতর্কতার কারণে এখন সেই সুযোগ আর নেই।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা