• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

হজে মাবরুরের প্রতিদান জান্নাত

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২০  

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার ওমরাহ করার পর আরেকবার ওমরাহ পালনে দুই ওমরার মধ্যবর্তী সব পাপ মোচন হয়। আর পূণ্যময় হজের একমাত্র পুরুস্কার হলো জান্নাত। (বুখারি: ২/৬২৯, হা: ১৭৭৩, মুসলিম-২/৯৮৩, হা: ৪৩৭/১৩৪৯)।

আবু হুরায়রা (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী: 

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আবু হুরায়রা (রা.) এর নাম ছিলো আবদ শামস। (সহিহ বুখারি: আত তারিখুল কাবীর-পৃ: ১৩২)।

জন্মসূত্রে তিনি ইয়ামানের বাহতানী গোত্রের দাওসী  বংশের লোক। তিনি বংশীয়ভাবে উঁচু এবং অভিজাত ছিলেন। (আল মুস্তাদরাক-৩/৫০৬)।

বিড়াল ছানা পুশতেন বলে মহানবী (সা.) তাকে আবু হুরায়রাহ নামে ডাকেন বিধায় এই উপনামে তিনি খ্যাত হন। তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধি ও খায়বার যুদ্ধের মাঝামাঝিতে ইসলাম কবুল করেন। তিনি চার বছরের অধিককাল মহানবী (সা.) এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এবং তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন। তিনি আসহাবে সুফফার বাসিন্দা ছিলেন। মহানবী (সা.) এর দোয়ার বদৌলতে সাহাবীদের মধ্যে আবূ হুরায়রাহ (রা.) ছিলেন সর্বাধিক হাদিস হিফযকারী। (ইবনু সা’দ: তা‘বাকাত-৪/৩৩২)।

তিনি খাইবার যুদ্ধ, হুনায়ন যুদ্ধ, তাবুক অভিযান, মুতা যুদ্ধ সহ আমৃত্যু ইসলামের প্রতিটি মহান কাজে শরীক ছিলেন। (আল ইসাবাঃ২/৩১১)।

হাদিসের মূল বক্তব্য: হজ এবং ‘ওমরাহ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের বড় মাধ্যম। ‘ওমরাহ যেমন একটি মহান‘ইবাদত তার খালেস নিয়তে নেক ‘আমল সমৃদ্ধ হজ হলো হজে মাবরুর যার মহাপুরস্কার হলো মুমিন জীবনের চির কাঙ্খিত ঠিকানা জান্নাত। হজ এবং ‘ওমরাহ উভয়ের মাধ্যমে গুনাহ বিমোচন করে নিষ্পাপ হওয়া সম্ভব। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করলো এবং তাতে অশ্লীন ও পাপাচারমূলক কাজ করলো না, সে এমনভাবে ফিরলো যেন তার মা তাকে সেদিন প্রসব করলো।’ (বুখারি- হা: ১৫২১; মুসলিম- হা: ৩২৯২,৪৩৮/১৩৫০)।

হাদিসের ব্যাখ্যা:

এক ওমরাহ পালনের পর আরেক ওমরাহ পালনে মধ্যবর্তী সব পাপ মোচন হয়ে যায়।’

‘ওমরাহ করা আল্লাহ তায়ালার এক মহান ইবাদত। এর মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়, মহান আল্লাহর কাছে তার মর্যাদাকে সমুন্নত করতে পারে এবং তার পাপরাশিকে মোচন করতে সক্ষম হয়। 
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনন বলেন,

وَأَتِمُّواْ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ

‘তোমরা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পূর্ণ করো।’ (সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ১৯৬)।

হাদিসে বর্ণিত গুনাহ মোচন দ্বারা সগীরা গুনাহসমূহ উদ্দেশ্য; কবিরা গুনাহসমূহ নয়। তবে কতিপয় আলেমের মতে সগীরা ও কবীরা সব গুনাহ-ই উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী বি শাহরি সহিহ বুখারি-৩/৭২৬)।

হজ এবং ওমরাহ দ্বারা পাপ মোচন বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য হাদিস বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বারবার হজ এবং ওমরাহ করো, হজ এবং ওমরাহ দারিদ্র এবং পাপ এমনভাবে মুছে ফেলে যেমনিভাবে কর্মকার ও স্বর্ণকারের আগুন লোহা ও স্বর্ণ-রুপার ময়লা মুছে ফেলে। আর পুণ্যময় হজের একমাত্র সওয়াব হলো জান্নাত।’ (আত তিরমিযী- ৩/১৭৫, হা:৮১০, হাসান সহিহ; সুনান ইবনে মাজাহ-২/৯৬৪, সহিহ ইবনে খুযাইমাহ-৪/১৩০)।

বর্ণিত হাদিস হতে স্পষ্ট হয়,বেশি বেশি ওমরাহ করা উত্তম। অধিক পরিমাণ ওমরাহ করা নবী করিম (সা.) সাহাবীরা এবং সব নেক কর্শশীলদের পছন্দনীয় আমল। বছরের সব সময়ই ওমরাহ করা যায়, তবে রমজান মাসের উমরাহ মু মিন জীবনের চরম প্রাপ্তির সুযোগ। এই মর্মে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন,

‘রমজান মাসে ওমরাহ আমার সঙ্গে হজ করার সমান।’ (সহিহ বুখারি- হা: ১৭৮২; সহিহ মুসলিম- হা: ১৬৫৬)।

এমনিভাবে মহানবী (সা.) এর কথা ও কাজ থেকে ওমরাহ প্রতি উৎসাহ ও অনুরাগ সৃষ্টি প্রতীয়মান হয়।

‘আর পুণ্যময় হজের একমাত্র পুরুস্কার হলো জান্নাত।’

হজের মাবরুর হলো, যে হজ কেবল মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে তাঁর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য লাভের জন্যই সম্পাদন করা হয়, আর তাতে মানুষকে দেখানো বা শুনানোর কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। (শরহু রিয়াযিস স্বলিহিন, মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন- পৃ: ৯৩৩)।

সহিহ বুখারির সর্ভশ্রেষ্ঠ ভাষ্যগ্রন্থ ফতহুল বারীতে হজে মাবরুর পরিচিতি প্রসঙ্গে যা উল্লেখিত হয়েছে তার সারাংশ হলো, ‘হজে মাবরুর হলো আল্লাহ তায়াল্লার কাছে গৃহিত হজ। যে হজে কোনোরুপ পাপের মিশ্রণ ঘটেনি। যে হজে হজের সমুদয় নিয়ম বিধান পূর্ণরুপে প্রতিপালিত হয়।’ (ফাতহুল বারী বি শারহিল বুখাররি: ইমাম হাফিয ইবনু  হাজার আসকালানী)।

হজে মাবরুরের পরিচয় বর্ণনায় আল্লামা সালিহ আল উসাইমিন আরো বলেন, যে হজে নবী (সা.)  এর নিয়ম বৈশিষ্ট্য অনুসৃত হয় এবং যে হজে হালাল সম্পদ ব্যয়ে সম্পন্ন হয়। ( শরহু রিয়াযিস স্বলিহীন: মুহাম্মাদ সালিহ আল উসাইমিন-পৃ: ৯৩৩)।

হজে মাবরুরের পরিচয় বর্ণনায় নবী করিম (সা.) হতে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদিসটি নিম্নরুপ-

‘পুণ্যময় হজের একমাত্র পুরুস্কার হলো জান্নাত। বলা হলো, হে মহান আল্লাহর রাসূল! হজের পুণ্য কি? নবী (সা.) বলেন, খাদ্য খাওয়ানো এবং সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো।’ (ফাতহুল বারী-৩/৭২৬)।

হজে পুর্ণ সফরে অশ্লীন কাজ পরিহার করা অশোভন আচরণ বর্জন করা, সর্বপ্রকার অহমিকা ত্যাগ করা এবং মহান আল্লাহর নাফরমানীমূলক সদুময় কাজ বর্জন করা প্রত্যেক হজ গমনকারীর করণীয়। প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহর আনুগত্য পুণ্যকর্ম, মহান আল্লাহর স্বরণ আর যাবতীয় ইবাদতমূলক কাজে লেগে থাকাতার একান্ত দায়িত্ব। বড় থেকে ছোট সর্বপ্রকার শিরক থেকে আত্নরক্ষা করা এবং যাবতীয় বিদাতি কর্মকান্ড পরিহার করা হজের সুফল পাওয়ার জন্য অগ্রাধিকারমূলক শর্ত।

হজের পুণ্যশীলতার বিষয়ে মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘হজের পুণ্যকর্ম হলো খাদ্য খাওয়ানোর এবং সুন্দর কথা বলা।’ (সহিহুত তারগীব- আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী, ২/১)।

তাকওয়াহীন লোক দেখানো হজ, মহান আল্লাহর জিকির বিবর্জিত আর গল্প-গুজবে মক্ত থেকে কাটানো হজ সফর, মহান আল্লাহর কাছে ইসতিগফার তথা ক্ষমা চেয়ে কান্নাকটি বিহীন আমল প্রকৃতপক্ষে হজ মাবরুর হতে পারে না।  বিধায় এসব থেকে হজে গমনকারী ঈমানদার নারী-পুরুষকে অবশ্যই আত্নরক্ষা করতে হবে।

হাদিসের শিক্ষা:

> ‘ওমরাহ এক মহান ইবাদত। পুনঃ পুনঃ ওমরাহ করার জন্য সামর্থ্যবানদেরর আগ্রহী হওয়া উচিত।

> হজে মাবরুর হলো প্রকৃত হজ, যার বিনিময় একমাত্র জান্নাত।

> হজকে হজে মাবরুরে পরিণিত করতে হালাল রিজিকলব্ধ সম্পদ দিয়ে হজ করতে হবে, নিয়তকে খাঁটি করতে হবে, শিরক, বিদাত, অশ্লীলতা ও পাপাচার ছাড়তে হবে।

> মহানবী (সা.) এর প্রদর্শিত নিয়মে হজ করতে হবে এবং মৃত্যু অবধি আল্লাহ তাযালা এবং রাসূল (সা.) এর আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করতে হবে- তবেই সেই প্রতিশ্রুতি জান্নাত লাভ করা সম্ভব।

উপসংহারে বলা যায়, হজে বায়তুল্লাহ‘ ইবাদতে দ্বীনে ইসলামের একটি গুরুত্বর্ণ স্বম্ভ। এতে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং সামর্থ্যবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সম্পাদন করা উচিত। মহান আল্লাহর আমাদের সবাইকে জে বাইতুল্লাহ সম্পাদন করার তাওফীক দান করুন। আমি।ন।

সংগ্রহে: প্রিয়ম হোসেন

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা