• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০১৯  

দেশি বিদেশি ভক্ত ও ধর্মানুরাগীদের পদ চারণায় মুখরিত বাগেরহাটের হাকিমপুরের শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ। রবিবার মহাঅষ্টমি পূজার দিন সকাল থেকে এই মণ্ডপে ভিড় শুরু হয়। দুপুরের পর ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকে। আর এসব ভক্ত দর্শনার্থীদের সামাল দিতে রিতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তব্যরত র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও নিজস্ব নিরাপত্তা দলের সদস্যদের। ৬৪১টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও শিকদার বাড়ির চিত্র ছিল ভিন্ন। এখানে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। এবছর এই মণ্ডপে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে গত নয় বছর ধরে অনেক প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে হলেও এই ধরনের আয়োজনে দুই বাংলায় বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ি এখন সবার কাছে সুপরিচিত। দুর্গাপূজা আসলে এই গ্রামের কথা এখন আর কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয় না।

২০১০ সালে হাকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাড়িতে প্রথমবারের মতো দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। ওই সময় ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে তিনি সবার নজরে আসেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই মণ্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছরের আগের বছর ছিল ৬৫১টি প্রতিমা। গত বছর ছিল ৭০১টি। আর এবার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করেন পূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন সিকদার এবং বাগেরহাট পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।

গত বছর এখানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। এবছর মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ পুকুরের মাঝখানে শ্রীকৃষ্ণের অষ্টম সঙ্গীকে নিয়ে নৌকাবিলাস। তাছাড়া প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৃষ্টি রহস্য।

বরিশাল থেকে আসা দর্শনার্থী সুমন মণ্ডল জানান,  ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে এখানে সৃষ্টির রহস্যসহ অনেক কিছু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মের অনেক অজানা কাহিনী জানতে পারছি। আমরা সত্যি অভিভূত। এখানে এসে ভিড়ের মাঝেও অনেক তৃপ্তি পেলাম। 

খুলনার ডুমারিয়া থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা কলেজ ছাত্রী মাধবী সরকার বলেন, ‘বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির নাম এখন আর কারও অজানা নয়। এখানে এসে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। সত্যি খুব ভালো লাগছে।’

পূজায় আসা বাগেরহাট শ্রমিক লীগের সভাপতি রেজাউর রহমান মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক খান আবুকর সিদ্দিক বলেন, ‘বাগেরহাটের এ পূজামণ্ডপ হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি সবার মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।’ এ ধরণের আয়োজন করার জন্য আয়োজক লিটন শিকদারকে ধন্যবাদ জানান তারা।

আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০১০ সালে প্রথমে ১৫১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করে দূর্গাপূজা শুরু করি। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের পরিদর্শন বইয়ে দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবছর এই মণ্ডপের প্রতিমার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এবছর ৮০১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬৪১টি মন্ডপে দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। তারা যাতে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা পালন করতে পারে এর জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের ওপর নজর রাখাসহ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা হচ্ছে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে। এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা