• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে বাগেরহাটের জয়গাছি খাল : চলছে মাছ চাষ

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২২  

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি খাল এখন নিশ্চিহ্ন প্রায়। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালের উপর পাকা স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের ফলে খালটির চিহ্ন পর্যন্ত বোঝা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধানী জমি ও খাল এখন একাকার হয়ে গেছে। এক সময় খরস্রোতা খালটি এখন মৃত প্রায়। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় স্থানীয় সমতল ভূমির বৃষ্টির পানিও এই খাল থেকে নিষ্কাশিত হতে পারে না। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হচ্ছে ওই এলাকা। অতি দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় খালটি দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। 
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে উঠে আসা খালের একটি শাখা জয়গাছি খাল। পুরাতন বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছন থেকে উঠে, বর্তমান বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছন দিয়ে রঘুনাথপুর মোড় হয়ে কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়নের ধলনগর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা খালটি গড়ে ২০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া ছিল। খালে স্রোতও ছিল, খাল থেকে অন্তত দশটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হতো। এই খালের পানি ওঠা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খালের মুখে (বিদ্যালয়ের পাশে) একটি স্লুইজ গেটও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিও এখন অকেজো। বৈটপুর-দেপাড়া রাস্তা দিয়ে পুরাতন বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য করা কংক্রিটের রাস্তায় খালটির একটি অংশ আটকা পড়েছে। রাস্তার উত্তর পাশে খাল আটকে বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী, স্থানীয় এনামুল কবির, ছত্তারসহ অন্তত ১০-১৫ জন মৎস্য ঘের করেন। খালের মধ্যে অন্তত ১০-১৫টি বাঁধ ও নেট পাটা রয়েছে। পরবর্তী দখল হয়েছে রঘুনাথপুর মোড়ে। খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য রাস্তার নিচে দেওয়া কালভার্টের মুখ আটকে করা হয়েছে ভবন। এখনও চলছে ভবন নির্মান। রঘুনাথপুর মোড়ে শঙ্কর দেবনাথ, আশিষ হালদার, সোহবান ডাকুয়াসহ কয়েকজন এই মোড়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। যার ফলে খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। খাল বাঁচাতে অতি দ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় মোঃ ইউনুস বলেন, জয়গাছি খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকার পানি নামতো এক সময়। খালটির জোয়ারের সময়ের পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কৃষি কাজ করতো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর দখল করে মাছ চাষ করার ফলে খালটি এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, কোনটা খাল আর কোনটা মাছের ঘের সেটাই খুঁজে পাওয়া যায়না। 

জয়গাছি গ্রামের আলমগীর মোল­া বলেন, হাইস্কুলের যাওয়ার রাস্তা নির্মানের সময় খালটির একপাশ আটকে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী স্যারসহ অনেকে এখানে ঘের করেন। যার ফলে এই খাল আর আমাদের কোন কাজে লাগে না। জয়গাছি মাঠ সংলগ্ন প্রায় একশ’ পরিবারের ঘর-বাড়ি সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যারা খাল দখল করে মাছ চাষ করছে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে তারাও। 

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান শিকদার বলেন, এই খালে এক সময় স্রোত ছিল, টাবুরে নৌকা চলেছে। এখন আর খালে পানি নেই, যে যার মত দখল করেছে। কেউ ভবন করেছে, কেউ মাছ চাষ করছে। এখন আর খাল থেকে নৌকাও চলে না, আর এলাকার পানিও নামে না। এই খালই এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়েছে। এই খাল খনন ও দখল মুক্ত না হলে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।

স্থানীয় গৌতম মিত্র নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, সরকার যেখানে নদী খাল রক্ষার জন্য এত চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি দীর্ঘদিন দখল হয়ে আছে। এটা কি দেখার কেউ নেই। আমরা চাই অতি দ্রুত সরকার এই খালটি দখল মুক্ত করুক।

বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মলি­ক বলেন, খালটির এক পাশ দিয়ে পুরাতন একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কোন কালভার্ট বা পানি সরার কোন ব্যবস্থা নাই। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে। আমিও খালের বেশকিছু অংশ নিয়ে ঘের করছি। তবে সরকার যদি খাল খনন বা দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমি খাল আটকে ঘের করা বন্ধ করে দিবো। জুলফিকার আলী আরও বলেন, আমি নিজেও তো জলাবদ্ধার শিকার হচ্ছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার বাড়ী-ঘর সব পানিতে তলীয় যাচ্ছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বলেন, জয়গাছি খাল দখলের বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। দ্রুতই খালটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, জয়গাছি খালটি দখলের বিষয়ে স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খালটি দখল মুক্ত করা হবে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা