• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

মাহবুবা নাজনীন ইরানীর ছাদ বাগান, অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২  

আমি বেড়ে উঠেছি গ্রামে। গ্রামের মাঝে সবুজ প্রকৃতিতে শৈশবের দূরন্তপনার সময়গুলো কেটেছে অনায়াশে। ছোট বেলায় দেখেছি মা-বাবা বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন রকম শাক-সবজি গাছ লাগিয়েছেন। চারাগুলোর আস্তে আস্তেপাতা বাড়তে থাকে। ডালপালা জন্মে, ফুল হয়, ফল হয়। এভাবে বিভিন্ন ফুলের সৌরভে বাড়ির আঙ্গিনা মেতে ওঠে। নিজ হাতে ফুল তোলা, ফল পাড়ার আনন্দটাই যেন অন্য রকম। আর সেই সবজি, ফলগুলো যখন পাড়াপড়শিদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয় তখন তার আনন্দটাই যেন অন্য রকম। ফলটি পাড়ার উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা নানী, দাদী বা চাচীরা বিশেষ নিয়মে বুঝেন। এটি তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই আনন্দ অনুভূতির মাঝে গ্রামের বাচ্চারা বেড়ে ওঠে। বর্তমানে শহরে ছেলে মেয়েরা এ শিক্ষা পায়না বললেই চলে। ফলে শহরে বেড়ে ওঠা শিশুদের ক্ষেত্রে এই আনন্দ অনুভূতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। 


বাচ্চারা মনমরা হয়ে ঘরের কোণে সময় কাটাচ্ছে। বর্তমান বাচ্চারা যে সব খাচ্ছে সেই সব ফল গাছগুলি দেখতে কেমন এটি তারা জানে না। তারা শুধু ভালো রেজাল্ট করার জন্য পাঠ্যপুস্তকের পড়াগুলো টপটপ করে মুখস্ত করে। বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। 
সবুজের সমারোহে মানুষের মন উদার হয়। প্রকৃতি মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। আজকের শিশুরা যদি ধান গাছ না চেনে, আম, জাম, সুপারী, নারকেল, কাঁঠাল, তরমুজ এসব গাছ না চেনে তাহলে শুধু বই মুখস্ত করে প্রকৃতপক্ষে সব কিছু জানা যায় না। সবুজ প্রকৃতি থেকে দূরে থেকে তারা সময় কাটায় মোবাইলে গেম খেলে কিংবা টেলিভিশন দেখে, পাবজি খেলে। এভাবে তারা মোবাইলে আসক্তি হচ্ছে। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সামাজিকতা থাকে না। আর এ জন্য প্রয়োজন সবুজ প্রকৃতিকে ভালোবাসা। গাছ লাগানো। গাছ লাগানো এক অদ্ভূত আনন্দ এনে দেয়। সোনার বাংলার সবুজ গাছপালা যখন বাতাসে দুলতে থাকে তখন মানসিক চাপে ক্লান্ত ব্যক্তির মনেও আনন্দের হাসি রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 


বর্তমানে শহরের বাড়ি ঘরগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছে তার ফলে দেখা যায় গাছ লাগানোর জন্য আঙ্গিনা থাকে না। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে বাড়িগুলো। পরিকল্পিত বাড়ি ঘরগুলো কিছু জায়গা ছেড়ে বাড়ি করা হয় ফলে গাছগুলো লাগানোর জায়গা থাকে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাড়িগুলোর সেই সুযোগ থাকে না। জনবহুল ঢাকা শহরে জনসংখ্যার বিপরীতে সবুজায়িত এলাকা রয়েছে খুবই কম। ঢাকায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার অন্তত অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের সুযোগ রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের ছাদ, বারান্দা, ক্যান্টিন, ক্লাসরুমের কর্ণার বা চলাচলের প্যাসেজে গাছ লাগানো সম্ভব। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংক সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, রোড সাইড, প্লান্টেশনকেও এ তালিকায় আনা সম্ভব। বর্তমানে ছাদ বাগান এখন অর্থনৈতিক এক সম্ভাবনার খাত হিসেবেই চিন্তা ভাবনা করছেন অনেকে। 


এখন পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন অনেকে। মাত্র ৪/৫ কাঠা জমির ওপর একটি বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করা হলে বছরে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আপনি যদি নিঃসঙ্গ থাকেন অথবা চাকুরী হতে অবসর নিয়েছেন। তাহলে এই ছাদ বাগানটাই আপনার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এতে আপনি সময়টাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে সবাই ব্যস্ত, তাই নিজেকে নিঃসঙ্গ না রেখে ছাদ বাগান করুন। তবে অপরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করলে ছাদের ক্ষতি হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে ছাদে যেন পানি জমে না থাকে। গাছ শুধু লাগালেই হয় না। যতœ করতে হয়। তবেই না ফুলে-ফলে-পল্লবে ভরে ওঠে উদ্ভিদগুলো। তখন খুব ভালোভাবে বোঝা যায় যে, গাছেরও প্রাণ আছে। বাগানের কাজের জন্য কে কতটা সময় দেয় বা ভালোবাসে তা যে কোন বাগান দেখলেই নিঃসন্দেহে বোঝা যায়। 


ছাদ বাগান করা যাদের শখ। তাঁরা টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, পেঁয়াজ কলি, মরিচ, রান্নার প্রয়োজনীয় ভেষজ পাতা বাড়ির বারান্দা বা রান্না ঘরের রেলিং-এর টবে লাগিয়ে ফেলেন অনেক যত্নে। ছাদে সবজি চাষ তুলনামূলক সহজ এবং আনুসাঙ্গিক খরচও অনেক কম। বাড়ির পরিত্যক্ত বালতি, পানির পট, জিও ব্যাগ, কন্টেইনার ও অন্যান্য ফেলে দেওয়া জিনিসগুলো হতে পারে আপনার ছাদ বাগানের হাতিয়ার। রান্না ঘরের সবজির খোসা, ডিমের খোসা ও চাল ধোয়ার পানি আপনার ছাদ বাগানের গাছগুলোর বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে।
আপনার সকাল ও বিকালের অবসরের সময়টুকুতে গাছগুলোর যতœ নিতে পারেন এতে আপনার বাড়তি আনন্দের যোগ হবে। সময়টাও কাটবে বেশ। পাবেন প্রকৃতির দেয়া অক্সিজেনের উৎস। অক্সিজেন ব্যায়ামটাও ছাদে বসে করতে পারেন। ছাদে ফুল-ফলের গাছের পাশাপাশি সারা বছর বিভিন্ন রকম সবজি লাগাতে পারেন। এতে আপনি পাবেন বিষমুক্ত সবজি আর পাবেন সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন। ছাদে ড্রাগন গাছ লাগাতে পারেন যাতে তেমন বাড়তি যতেœর প্রয়োজন হয় না। আর পানি ও তেমন দেওয়া লাগে না। 
করোনার এই সংকটময় মূহুর্তে আপনার শারীরিক সুস্থতার জন্য ছাদ বাগান হতে পারে মানসিক আনন্দের উৎস। আসুন আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি। গাছ লাগাই, গাছের যতœ নিই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করি। ধন্যবাদ।

 

মাহবুবা নাজনীন ইরানী
প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ
পাইকগাছা সরকারি কলেজ
পাইকগাছা, খুলনা।

 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা