• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

তিস্তা প্রকল্পের সেচে তিন জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১১ মে ২০১৯  

নীলফামারীতে বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও দেশের সর্ববৃহৎ ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের আওতায় রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার কৃষি অঞ্চলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।নীলফামারী জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুর অঞ্চলের তিন জেলা প্রায় ২০ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনে যাচ্ছে।

কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াই কাজ কেবল শুরু করেছেন। এবার আগাম বৃষ্টি বা নদীতে ভারতীয় ঢল না আসায় কোনও ঝামেলা ছাড়াই ধান ঘরে তোলা যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। সেচ ক্যানেল তীরবর্তী ও হরিশ্চন্দ্র পাঠ এলাকার কৃষক বিমল চন্দ্র রায় জানান, সপ্তাহখানিক পরেই পুরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। তবে আগামজাতের বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে।

তিস্তা ব্যারেজের সেচ কমান্ড এলাকায় নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর, পাবর্তীপুর ও খানসামা উপজেলাসহ ১২টি উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার প্রস্ততি থাকলেও পরবর্তীতে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয়। ডালিয়া ডিভিশনের সেচ (পানি) সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, এতে কৃষকরা ৫৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয় করতে পেরেছেন।

সূত্র জানায়, এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলের তিন জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৪০ হাজার হেক্টর। এতে পানির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কিউসেক। যার গড় ফলনে চালের উৎপাদন হবে ২০ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন চাল।

ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন এক পরিসংখ্যান জানিয়ে বলেন, ‘বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করতে সেচ খরচ হয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আবার ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে এক হেক্টর জমিতে বোরো চাষে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। অপরদিকে, তিস্তা ব্যারাজের আওতায় (কমান্ড এলাকায়) এক হেক্টর জমিতে কৃষকের খরচ হয় মাত্র ১২০০ টাকা। এদিকে, বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত পাম্পের সেচে এক হেক্টরে কৃষক ধান ফলায় গড়ে ৫ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। সেচ ক্যানেলে কৃষক প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন করছে ৬ মেট্রিক টন। এতে ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে তিস্তার সেচে ধান উৎপাদন হবে ১১৯ কোটি টাকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোরো ধানের সময় উজান হতে চাহিদামতো পানি যদি পাওয়া যেত তাহলে আমরা প্রথম পর্যায়েই ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারতাম। উজানের পানি স্বল্পতার কারণে আমরা ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পেরেছি। এটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।’

তিস্তার প্রধান সেচ খালের ধারে অনেক কৃষক সেখানে ধান মাড়াই করছেন। ওই এলাকার কৃষক আজিজার রহমান জানান, বিআর-২৮ বিঘাপ্রতি কেউ ২৫ মণ কেউবা ২৮ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা পর্যাপ্ত সেচের পানি পাওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন।

জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাড়ী হাগুড়া ডাঙ্গার কৃষক হামের উল্ল্যা বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে ক্যানেলের পানি দিয়ে আবাদ করি। এতে আমার চার হাজার ৫০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কারণ বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র বা ডিজেলচালিত পাম্পের মালিক বিঘাপ্রতি খরচ নেয় দুই হাজার চারশ’ টাকা। আমার দুই বিঘা জমিতে খরচ হতো চার হাজার আটশ’ টাকা। সেখানে ক্যানেলের সেচে আমাকে দিতে হয়েছে দুই বিঘায় দেড়শ’ করে তিনশ’ টাকা।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, ‘শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এতে সেচ কমান্ড এলাকায় কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-২৮ মণ করে ধান উৎপাদন করে ঘরে তুলছেন। এ ছাড়াও এতে কৃষকরা ৫৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয় করতে পেরেছেন।’

উল্লেখ্য, নীলফামারীতে কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু জমির বোরো ধান বিনষ্ট হয়। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থা হলেও খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়ভাবে এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা