• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত পেতে নানা জটিলতা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

বাগেরহাটের  অসচ্ছল ও গরীব নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচীর সহায়তায় সরকারের ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীরা তাদের সঞ্চয়ের অর্থ সঠিক ভাবে ফেরত পাচ্ছেন না। এবিষয়ে সরকারের নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। অসচ্ছল ও গরীব এসব নারীরা তাদের জমানো অর্থ ফেরত পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পাচ্ছেন না। ফলে সরকারের মহৎ এই কর্মসূচীর উপর সাধারন মানুষের নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, অসচ্ছল ও গরীব নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকারের ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীরা দুই বছর মেয়াদে ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। এসময় তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমানের অর্থ সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। যা তাদের মেয়াদ শেষের পর পরই ব্যাংক মুনাফাসহ ফেরত দেয়া হয়।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস সুত্রে জানাগেছে, ২০১৭-১৮ চক্রে ( জানুয়ারী-১৭ থেকে ডিসেম্বর-১৮) শরণখোলা উপজেলায় ২৮০৫ জন অসচ্ছল ও গরীব নারীকে ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী তারা প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় রাখেন। যে অর্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যৌথ হিসাবে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এই অর্থ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাগ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে উপকারভোগীর মাস্টারোলে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায়, গত ২০১৭-১৮ চক্রের ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য গত বছরের (২০১৮) অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা আসে। সেখানে এবছরের জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখের ভিতর ওই অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
কিন্তু সরেজমিনে শরণখোলার ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তার এখনও ওই অর্থ ফেরত পাননি। তারা গত তিনমাস কোন চালও পাননি বলে জানান।
গোলবুনিয়া গ্রামের দিমুজুর আলামিন হাওলাদরের স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও বাবুল মুন্সির স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, তারা এবছর চাল নেয়ার সময় সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। কিন্তু তা আজও ফেরত পাননি।
এমনি এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ চক্রের ( জানুয়ারী-১৫ থেকে ডিসেম্বর-১৬)  ভিজিডি কর্মসূচীর অনেক উপকারভোগী এখনও তাদের জমাকৃত সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত পাননি। আর কিভাবে বা কার কাছে গেলে পাবেন তাও তারা জানেন না।
শরণখোলা উপজেলার গোলবুনিয়া গ্রামের দিনমুজুর জব্বার তালুদারের স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, তিনি ২০১৫-১৬ চক্রের ভিজিডি কর্মসূচীর চাল পেতেন। এই সময় তিনি প্রতিমাসে ৪০ টাকা হিসেবে সঞ্চয় করেছেন কিন্তু সেই অর্থ এখনও ফেরত পাননি। বিভিন্ন লোকের সাথে যোগাযোগ করে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান।
অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করা গোলবুনিয়া গ্রামের মৃত মজিদ তালুকদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, জমানো টাকা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন লোকের কাছে গিয়েও কোন ফল পাননি।
একই অভিযোগ করেন, কামাল শিকদারের স্ত্রী জয়নাব বেগম, পশ্চিম রাজৈর গ্রামের রফিকুল তালুকদারের স্ত্রী শাহনাজ বেগমসহ অনেকে। তারা টাকা পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান।
এবিষয়ে শরণখোলা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোসাঃ রহিমা আক্তার হাসি জানান, অসহায় নারীরা ভিজিডি কর্মসূচীর জমানো টাকা দীর্ঘদিন পরও ফেরত পান না বলে তার কলে অনেক নারী অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি সমাধান করা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা মহিলা বিসয়ক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই জানান, সময়মত সরকারী বরাদ্ধের চাল না পাওয়ার ফলে চাল বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। একারণেই সরকারী নির্দেশনা থাকার পরও ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীদের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া ২০১৫-১৬ চক্রের উপকার ভোগীদের সঞ্চয়ের অর্থ এতদিন ফেরত না পাওয়ার কথা নয়। সেই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, ওই অর্থ কেন ফেরত দেওয়া হয়নি তা খোজ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।


 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা