• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে অসমাপ্ত সেতুর পিলারের কারণে

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পোষণ করছিল আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু সাতক্ষীরা সদর হয়ে কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সে সময় সেতু নির্মাণের জন্য কলকাতা স্টেট ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকাও জমা রাখা হয়। কিন্তু সে সময় কিছু লোকের বিরোধিতা ও দেশ স্বাধীনের আগে তারা ভারতে চলে যাওয়ায় সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন হয়নি।

দুই পাড়ে দুই উপজেলা। এক পাড়ে তালা অন্য পাড়ে পাইকগাছা। মাঝখানে বহমান কপোতাক্ষ নদ। দুই জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কপোতাক্ষ নদের কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতু নির্মাণের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের পাশাপাশি পাউবোর খাম-খেয়ালীপনায় মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায় সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতু নির্মাণ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার। কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত কানাইদিয়া-কপিলমুনি অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলারের কারণে খননকৃত নদ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দু’জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ঐ সময় সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক অ্যাসোসিয়েট। কার্যাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা উত্তোলন করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ঐ সময় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রতার কারণে সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

তবে সেতু নির্মাণ বন্ধ হলে নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পিলার। আর এই আংশিক কাজ শেষ হওয়া পিলারে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পলি জমে কপোতাক্ষের নাব্যতা হ্রাস পায়। মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদকে পুনর্জীবিত করতে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ নদ খননের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কপোতাক্ষ খননের সময় অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার অপসারণ না করেই খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়। পিলারগুলোর কারণে একদিকে যেমন জোয়ার ভাটায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদ অন্যদিকে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সর্বশেষ এ বছর পলি মৌসুমের অনেক আগেই কপোতক্ষে পলির আগমন ঘটেছে এবং পিলারের কারণে কপোতাক্ষের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কপোতাক্ষ হারাবে তার নাব্যতা এবং আবারও জলাবদ্ধতার স্বীকার হবে ৫০ লাখের ঊর্ধ্বে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ।

এ বিষয়ে তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, তালার কানাইদিয়া ও পাইকগাছার কপিলমুনি সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করলেও মামলাসহ নানা জটিলতা অসমাপ্ত অবস্থায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অসমাপ্ত পিলারে কারণে নদের জোয়ার ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হতে থাকে। বর্তমান সরকারের আমলে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার পরেও অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পিলার নদের বক্ষে থাকায় সরকারের ২৬২ কোটি টাকা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অচিরেই পিলারগুলি অপসারণ করা না হলে কপোতাক্ষ হারাবে তার নাব্যতা।

এ বিষয়ে তালা উপজেলা কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদকে নতুন করে বাঁচাতে দুই পাড়ের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রমের ফলে সরকার প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ করে। কিন্তু নদের বুকে অসমাপ্ত কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতুর ১৮টি পিলারের কারণে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে কপোতাক্ষের বুক থেকে পিলারগুলি অপসারণ করা না হলে জলাবদ্ধতার শিকার হবে নদের দুই পাড়ের মানুষ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবির হোসেন বলেন, মামলাসহ নানা জটিলতার কারণে কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতু নির্মাণ প্রকল্প শুরুর আগেই শেষ হয়েছিল। এখন সেতুটি নির্মাণ করতে হলে নতুনভাবে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সেতুর অসমাপ্ত পিলার কপোতাক্ষ নদের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে কপোতাক্ষ খননের সময় অসমাপ্ত পিলারগুলো অপসারণ করলে সব থেকে ভালো হতো। কিন্তু সে সময় পিলারগুলো কেন অপসারণ করা হলো না তা বুঝতে পারলাম না।

পানি উন্নায়ন বোর্ড (যশোর জোন) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহিদুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি সম্পার্কে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা