• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

পারমাণবিক ইস্যু আলোচনা ছিল কি?

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০১৯  

জ্যারেড কুশনার ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার কয়েক দিন আগে মধ্যপ্রাচ্য সফরে বের হয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৈঠকে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যকার সহযোগিতা, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমি হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছি যে তাঁরা সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য মার্কিন সাহায্য নিয়ে কি কোনো আলোচনা করেছেন?

গত দুই বছরে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো বিচার-বিবেচনা না করে হঠকারী যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বাজে হচ্ছে সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক চুল্লি বিক্রি করার পরিকল্পনা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে বিপারমাণবিকীকরণ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখন তিনি সৌদি আরবকে পারমাণবিকীকরণে সাহায্য করছেন। এই ঘৃণ্য নীতির পেছনে অবশ্যই তাঁর বড় কোনো স্বার্থ আছে, যার সঙ্গে জ্যারেড কুশনারের স্বার্থও জড়িত।

কুশনারের পরিবারের গৃহনির্মাণ ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠার জোগাড় হয়, যখন তিনি অতিরিক্ত মূল্যে ম্যানহাটানে অবস্থিত ৬৬৬ ফিফথ অ্যাভিনিউ ভবনটি কেনেন। তবে গত আগস্টে ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নামের একটি কোম্পানি তাঁকে উদ্ধার করে। কোম্পানিটি ১১০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ভবনটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়।

ব্রুকফিল্ড ওয়েস্টিং হাউস ইলেকট্রিকও কিনেছে, যে কোম্পানি কিনা সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক চুল্লি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। আর এখানেই হচ্ছে কুশনারের স্বার্থ। ব্রুকফিল্ড অ্যাসেটের সুনজরে থাকার জন্য তিনি সৌদি আরবকে দিয়ে পারমাণবিক চুল্লি কেনাতে চাইছেন। চলতি সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের একটি কমিটির ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের একটি গ্রুপ একটি মার্কিন কোম্পানির জন্য খুব তাড়াহুড়ো করেই সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক চুল্লি বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরের দুই মাসেই এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তরে আইন লঙ্ঘন হবে বলে হুঁশিয়ার করা হলেও কিছু কর্মকর্তা দমে যেতে চাননি। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন ছিলেন এবং তাঁরা প্রাথমিকভাবে সৌদি আরবে ৪০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা পেশ করেন।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি ট্রাম্প এই প্রকল্পের সমর্থকদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন। এগুলো বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সৌদি আরব বলছে, বিদ্যুতের জন্য তারা পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। তবে সৌদি আরব তাদের নিজস্ব পরমাণু জ্বালানি তৈরির ওপরও জোর দিচ্ছে। কেননা, এতে বিদেশ থেকে আনার চেয়ে খরচ কম পড়বে। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র সম্পর্কে ট্রাম্প সতর্ক থাকতে পারেন, কিন্তু সৌদি আরবের ক্ষেত্রে তাঁর মনোভাব মনে হচ্ছে: টাকা তো বানাতে হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ নিয়ে আপত্তি জানালে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা যুক্তি দেন যে যদি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক চুল্লি বিক্রি না করে, তবে রাশিয়া বা ফ্রান্সের মতো অন্যান্য দেশ তা করবে।

ট্রাম্প হয়তো মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সৌদি আরবকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে তাদের সাহায্য না করে, তাহলে অন্য কেউ সেটা করবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরবের সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। সৌদিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে এবং নির্জলা সত্য এই যে এই সম্পর্ক ধরে রাখার সব কার্ড যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, সৌদি আরবের হাতে নয়। কিন্তু কেন যুক্তরাষ্ট্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে রাখতে চাইছে? তিনি ইতিমধ্যেই একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলের সবচেয়ে বিতর্কিত নেতার তকমা পেয়েছেন। কারণ, তিনি ইয়েমেন আক্রমণ করেছেন, লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণ করেছেন, কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি সৌদি নারী অধিকারকর্মীদের কারাবন্দী করেছেন এবং তাঁদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।

যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠকে জ্যারেড কুশনার পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছিলেন কি না, হোয়াইট হাউস সে ব্যাপারে কিছু বলেনি, কিন্তু ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট সিনেটর জেফ মার্কলি বলেছেন, ‘এ নিয়ে কোনো আলোচনা না হলে আমি বিস্মিত হব।’ কেউ জানে না যুবরাজ মোহাম্মদ তাঁর বাবার উত্তরসূরি অর্থাৎ সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশা হবেন কি না। রাজপরিবারের মধ্যেই তাঁর বিরোধী লোকজন রয়েছেন। এখন ট্রাম্প ও কুশনারের সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন চেষ্টা মোহাম্মদ সালমানের বাদশা না হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা