• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

প্রার্থনা ও নিরাময়ের সম্পর্ক

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১১ মে ২০১৯  

আমরা ডাক্তারগণ, শতাব্দী ধরে চলে আসা রোগ নিরাময়ের একটি বিশ্বাসের উপর ঈমান এনেছি। আর তা হচ্ছে রোগ নিরাময় হয় একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায় এবং আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি।   

আমরা যদি একই ধরণের রোগাক্রান্ত দুই ব্যক্তিকে একই রকম ঔষধ দেই বা অন্য কোন ভাবে একই পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে দুই রোগীর একই অপারেশন করি তাহলে হয়ত দেখা যাবে যে, তাদের একজন বেঁচে থাকবেন এবং অপরজন বাঁচবেন না। এটা ভাগ্যের চেয়ে আরও বেশি কিছু।  

সক্রেটিসের ভাষায়,

"আমি ক্ষত সারাতে চেষ্টা করি এবং ঈশ্বর এটি সারিয়ে তুলেন"

এটি হযরত ইবরাহীম (আ:) - এর মতে যা কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছেঃ

"... এবং আমি যখন অসুস্থ, তখন তিনিই আমাকে সুস্থ করেন" (কুর’আন ২৬:৮০)

আল্লাহ্ নিজেই এই বলে প্রত্যায়ন করেন যে,

"যদি আল্লাহ্ তোমাদের জন্য দুঃখ দেন তবে অন্য কেউ তা সরিয়ে নিতে পারবে না" (কুর’আন  ৬:১৭)।

কুর’আন  থেকে নিরাময়

কুর’আন ঔষধের কোন পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে পথনির্দেশের নিয়মাবলী যা অনুসরণ করা হলে  সুস্বাস্থ্য এবং নিরাময়কে উন্নত করা যাবে। এই কারণেই কুর’আনে এটিকে শিফা বা নিরাময়দানকারী কিতাব বলা হয়েছে।

"হে মানবজাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে একটি নির্দেশ এসেছে এবং হৃদয়ের জন্য নিরাময় স্বরূপ এবং যারা হেদায়েত ও রহমতে বিশ্বাস করে" (কুর’আন ১০:২৫)

"আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে রয়েছে নিরাময় ও মুমিনদের প্রতি রহমত" (কুর’আন ১৭:৮২)

কুর’আনের মাধ্যমে নিরাময় তিন ভাবে লাভ করা যায়ঃ

এক. বিধানগত প্রভাব

 আল্লাহ যে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাই নন বরং তিনি পালনকর্তা ও অভিভাবক এই বিশ্বাস (ইমান) রাখা। এতে আরো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাধ্যতামূলক প্রার্থনার চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা, রোজা,  দাতব্য এবং হজ্ব।

দুই. স্বাস্থ্য নির্দেশিকা:
মধুর ব্যাবহার, জলপাই, ফল, পাতলা মাংস, অত্যধিক খাওয়া এড়ানো, মদপানে নিষেধাজ্ঞা, শুকুরের মাংস, সমকামীতা, অবাধ যৌনতা এবং মাসিকের সময় যৌনতাসহ নবী  মুহাম্মদের (সাঃ) ঐতিহ্য ও কুরআনের নির্দেশিত স্বাস্থ্য-বিষয়াদি।

তিন. কুর’আনের সরাসরি নিরাময় প্রভাব:
অসুস্থতার (রুকাশিয়া) ক্ষেত্রে কুর’আন তেলাওয়াতের একটি সরাসরি প্রভাব দেখা যায়। এটি সম্ভবত শব্দের প্রতিধ্বনির চিকিৎসা সুবিধার মত।  

শব্দের প্রতিধ্বনি হল এমন একটি শক্তিশালী বল যা পাহাড়কে বিস্ফোরণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এখন প্রতিধ্বনিত ক্ষুদ্রায়তন সংস্করণটি কিডনি পাথরের (লিথোথ্রিপ্সি), পলিস্টোনস, এবং পরজীবী ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্টাইটিস (এসবিই) এর এমনকি গাছ পালা ভাঙার ঔষধে ব্যবহৃত হয়।  

ডা. আহমেদ কাদি এবং তার সহযোগীরা একটি গবেষণায় দেখেছেন, কুর’আন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আরবীয় মুসলিম, অনারবী মুসলিম এমনকি অমুসলিমদের মাঝে রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ও পেশী রিলাক্সেশন জনিত বিষয়ে এটি কতটুকু ভূমিকা রাখে? এর জন্য উনারা আলিফ লাম মিম এই তিনটি বর্ণের প্রতিধ্বনি নির্ধারণ করেন? (সূরা আল-বাকারার প্রথম তিনটি শব্দ- কুরআনের ২য় সুরায়) হার্টে এবং ইয়া-সিন (সুরা-৩৬) মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির মধ্যেও রয়েছে।

এভাবে নবী মুহাম্মদ সর্বদাই কুর’আন (কুর’আন-পঠন) নিরবে পড়ার পরিবর্তে উচ্চস্বরে পড়ার উপর জোর দিয়ে  বলেছেন, "নীরব পাঠক এবং একজন আবৃত্তিকারীর সাথে তুলনা হলো সুগন্ধি বোতলের মত, যখন এটি বন্ধ হয়ে যায় এবং যখন এটি খোলা হয়।"

প্রার্থনা ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে মেডিটেশনের ব্যাবহার
"(হে মুহাম্মাদ) যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তাদের বলুন) আমি তাদের নিকটবর্তী: যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, কাজেই তাদের উচিৎ আমার উপর ইমান আনা এবং আমার পথে চলা।" (কুর’আন ২: ১৮৬)

"আপনার পালনকর্তা বলেন: "আমাকে ডাক এবং আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব" (কুর’আন ৪০: ৬০)

"যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি পায়, কারণ আল্লাহর স্মরণে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।" (কুর’আন ১৩:২৮)

"আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব; আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাক এবং আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না" (কুর’আন ২:১৫২)

"তোমাদের পালনকর্তাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর প্রশংসা কর।" (কুর’আন ৩:৪১)

"তাদের মত করে যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায়।" (কুর’আন  ৩:১৯১)

"আর যে সকল পুরুষ আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যে সকল নারী আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।" (কুর’আন ৩৩:৩৫)

"হে বিশ্বাসীগণ! সকালে ও সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাঁর প্রশংসা কর" (কুর’আন  ৩৩:৪১-৪২)

নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর কথা

নবী মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর স্মরণে অন্যান্য নবীর মতোই সর্বাধিক সময় অতিবাহিত করেছেন। তিনি বলেন:

"সবকিছুর আস্তরণ মুছে ফেলার জন্য পোলিশ রয়েছে এবং হৃদয়ে্র আস্তরণ মুছার জন্য পোলিশ হল আল্লাহর যিকির (স্মরণ) "

তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ধার্মিক এবং সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ কারা হবেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন "যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করেন"

এটি একটি কুদসি হাদিস (নবী মুহাম্মদ এর কাছে অবতীর্ণ)। বর্ণনা করা হয় যে

"আল্লাহ বলেছেন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যা ভাবে আমি তার জন্য সেরকমই ভাবি। যখন সে আমাকে ডাকে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে আমার কথা উল্লেখ করে তবে আমি তার কথা উল্লেখ করি। যদি সে একটি সমাবেশে (মজলিসে) আমার সম্পর্কে উল্লেখ করে, আমি তাঁর তুলনায় উত্তম একটি সমাবেশে তার কথা উল্লেখ করি। যদি সে এক হাত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হয়, তবে আমি তার নিকটবর্তী হই এক বাহু দৈর্ঘ্য পরিমাণ, যদি সে আমার কাছে হেটে আসে, তবে আমি দৌড়ে তার নিকটবর্তী হই।"

এভাবে গভীর মনোযোগ সব সুফি শায়েখদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়। শেখ আল-মুরসির মতে, "জিকর" শব্দে আল্লাহ খুশি হন, খারাপ শক্তি পরাজিত ও দুরীভূত হয়, জীবিকা বৃদ্ধি পায়, ব্যক্তিকে আরো মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে, হৃদয় পরিষ্কার হয়, ত্রুটিগুলি দূর হয় এবং মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা এবং ভণ্ডামি থেকে জিহ্বার রক্ষা হয় যখন আল্লাহর স্মরণে রত থাকা হয়।

প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্য তালাশ করা
ইমাম গাজালীর মতে, অসুস্থতা বিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং মানুষের সাথে আল্লাহর নৈকট্য বাড়ায়। এই সম্পর্কে বলা হয় - “হে ইমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর, আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন। (কোর’আন  ২:১৫৩)

নবী মুহাম্মদ সাঃ যখন অসুস্থদের কাছে গিয়েছিলেন তখন তিনি তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং নিম্নলিখিত দোয়া করেছিলেন:

"হে আল্লাহ আমার কষ্ট দূর করুন, হে মানবজাতির প্রভু, নিরাময় দান করুন, আপনি তো নিরাময়দানকারী। সকল রোগের

সর্বোত্তম নিরাময়ের জন্য আপনি ছাড়া আর কোন নিরাময়কারী নেই"

তিনি নিজের স্বাস্থ্যের জন্য নিম্নলিখিত প্রার্থনাও করতেন:

"হে আল্লাহ আমার শরীর নিরাময় করুন, আমার হৃদয় নিরাময় করুন ও যে কোন রোগ থেকে আমার দৃষ্টিশক্তি নিরাময় করুন" (৩ বার বলেছিলেন )।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা