• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

সালাতুদ দুহা বা চাশতের নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২৩  

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ফরজ নামাজের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নামাজ আদায়কে সুন্নত ও নফল বলেছেন এবং তা আদায়ে পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন- ইশরাক, চাশত বা দুহা এসবগুলোই নফল নামাজের ভিন্ন ভিন্ন নাম। আর নফল ইবাদত হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

নবীজি (সা.) উম্মতকে ইশরাক ও চাশতের নামাজ আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন। চাশতের নামাজকে সালাতুদ দুহাও বলা হয়। ইশরাকের পরপরই চাশত বা দুহার সময় শুরু হয়। এসব নামাজের ওয়াক্ত হলো সূর্য উদিত হওয়ার ১৫ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত।

ইশরাক নামাজের সময়

সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) সূর্যোদয়ের পর এই দুরাকাত নামাজ নিজে পড়তেন, অন্যদেরও পড়তে উৎসাহিত করতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে’। (তিরমিজি: ৫৮৬)

উল্লেখ্য, ইশরাকের উত্তম সময় হলো, বেলা ওঠার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে।

চাশতের নামাজের সময়

চাশত বা দুহার নামাজ আদায় করতে হয় সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে। ‘দুহা’ শব্দের অর্থ ‘প্রভাত সূর্যের ঔজ্জ্বল্য’, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। সুতরাং দুহা বা চাশতের নামাজ সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কেননা, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, صلاة الأوابين حين ترمض الفصال ‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়’। (সহিহ মুসলিম: ৭৪৮)

চাশতের নামাজের নিয়ম

চাশতের নামাজের নিয়ম সাধারণ নফল নামাজের মতো। সূর্য এক-চতুর্থাংশ উপরে উঠলে, গ্রীষ্মকালে ৯টা-১০টা, আর শীতকালে ১০টা-১১টার সময় সাধারণত তা আদায় করা হয়। কোনো সুন্নত নামাজে যেমন দুই রাকাত পড়ে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে থাকেন, এখানেও তেমনই। ইশরাক নামাজের নিয়ম চাশতের নামাজের মতোই।

চাশতের নামাজ কত রাকাত

চাশতের নামাজ দুই বা চার রাকাত। চার রাকাত পড়াই উত্তম। আরো বেশিও পড়া যায়। কেননা এটি নফল নামাজ। নফল নামাজ বেশি পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং সওয়াব রয়েছে। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের আগে রাসূল (সা.) আলী (রা.) এর বোন উম্মে হানি (রা.) এর ঘরে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সেজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়েছিলেন। (বুখারি: ২০৭)

হাদিসে এসব নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়ার কথা রয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, صلاة الليل والنهار مثنى مثنى ‘দিন ও রাতের নফল নামাজ দুই দুই রাকাত করে’। (তিরমিজি: ৫৯৭; আবু দাউদ: ১২৯৫)

চাশতের নামাজের ফজিলত

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয়তম (রাসূল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ বা চাশতের নামাজ পড়া ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা’। (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কার শক্তি আছে এই কাজ করার’? তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজ এর জন্য যথেষ্ট’। (আবু দাউদ: ৫২২২)

উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, চাশতের নামাজ ৩৬০ সদকার সমতুল্য।

উল্লেখ্য, চাশত বা দুহা পৃথকভাবে আদায় করার অবকাশ থাকলেও অনেকেই চাশত বা দুহার নামাজকেই ইশরাকের নামাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিদিনের সুন্নত ও নফলের ওপর অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা