• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

কাঠে আগুন ধরলেও ধাতুতে কেন আগুন ধরে না?

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৩  

ক্যাম্প ফায়ারের সামনে বসে কল্পনার সাগরে ভেসে যাচ্ছেন,  ধোঁয়াটে গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে আর নির্বাক তাকিয়ে দেখছেন স্যুপের পাত্রটি আগুনের শিখায় কেমন তপ্ত হয়ে উঠছে। আগুনের ঝিকিমিকি কমলা শিখায় দিকে তাকাচ্ছেন, তখন হঠাৎ মাথায় এলো, কি ব্যাপার! কাঠের টুকরো গুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে কিন্তু ধাতব পাত্রটিতে আগুন ধরছে না কেন?

Also read :মৌমাছি যেভাবে গনিতের ব্যবহার করে

হ্যাঁ, বিজ্ঞান বুঝতে গেলে এমন রোমাঞ্চকর সময়েও নির্বোধের মত প্রশ্ন করতে হয়। সে যাই হোক, ফেরা যাক আমাদের প্রশ্নে। সত্যিই তো, কাঠ বা বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থে আগুন ধরলেও ধাতুতে কেন ধরে না? চলুন, খুঁজে নেওয়া যাক প্রশ্নের উত্তরটি।

আসলে কেন কোন বস্তুতে আগুন ধরে তার মূল কারণটি নিহিত আছে বস্তুটির রাসায়নিক বন্ধন এবং সেই রাসায়নিক বন্ধন ভাংতে বা পরিবর্তন করতে যে পরিমাণ শক্তি লাগে তার মাঝে।

কিন্তু প্রথমেই আমাদের আগুন জ্বলার তিনটি মৌলিক প্রভাবক বিবেচনা করতে হবে- অক্সিজেন, তাপ এবং জ্বালানী।অক্সিজেন একটি গ্যাস যা বাতাসের একটি উল্ল্যেখযোগ্য উপাদান। আবার, দুটি বস্তুর ঘর্ষণে তাপ তৈরি হতে পারে এবং জ্বালানি হল এমন জিনিস যাকে পোড়ানো যায়।সাধারণত, এটি জৈব উপাদান দিয়ে তৈরি যে কোনও কিছু হতে পারে। "জৈব" বলতে এমন অণুগুলিকে বোঝায় যারা প্রাথমিকভাবে কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে তৈরি এবং কখনও কখনও এদের সাথে অক্সিজেন বা অন্যান্য পরমাণু যেমন ফসফরাস বা নাইট্রোজেন থাকতে করে৷

Also read :প্যারাডক্স কি? ২০ টি বিখ্যাত প্যারাডক্স এর উদাহরণ

মূলত, কোন কিছু পোড়ানো বা দহন হল একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যা অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাসায়নিক বন্ধনযুক্ত একটি অস্থিতিশীল সিস্টেম থেকে শক্তি নির্গত করে।  সবকিছুই আরও স্থিতিশীল হতে চায়, বিশেষ করে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন এবং কিছু অন্যান্য উপাদান ধারণ করে এমন জৈব অণু।  কাঠ এবং কাগজের মতো উপাদান সেলুলোজ দিয়ে তৈরি যাতে কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মধ্যে বন্ধনের সমন্বয়ে গঠিত অণু থাকে। এই বন্ধনগুলো দুর্বল, ফলে যখন এই বস্তুগুলো জ্বলে তখন এই বন্ধনগুলো ভেংগে গিয়ে এরা প্রচুর শক্তি নির্গত করে। 

যখন কাঠের তৈরি কোনো বস্তু আগুন ধরে, তখন কাঠের সেলুলোজ পুড়ে গিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, যারা কি না উভয়ই শক্তিশালী বন্ধন সহ খুব স্থিতিশীল অণু।  এই রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা নির্গত শক্তি গ্যাসের পরমাণুর ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করে, যা দৃশ্যমান আলো নির্গত করে। আর এই নির্গত আলো আমাদের কাছে আগুনের শিখা হিসেবে দেখা দেয়।

জ্বলন্ত কাঠের টুকরা আর স্যুপের গরম পাত্রে ফিরে যাওয়া যাক। এক্ষেত্রে এক টুকরো কাঠ এবং একটি ধাতব পাত্রের মধ্যে মূল পার্থক্য হল আগুন প্রয়োগ করার সময় উপাদানটি কতটা ভালভাবে আগুনের প্রচন্ড তাপশক্তি সামলাতে পারে। প্রতিটি বস্তুতে অনু সমূহের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন থাকে। ধাতুতে এই বন্ধন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ এদের সহজে ভাঙ্গা যাবে না এবং ভাংগতে গেলে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে আগুন থেকে আগত শক্তি ধাতব পাত্রটিতে লাগলেও তা পাত্রের ধাতব অনুগুলোর বন্ধন ভাংতে পারে না। ধাতব পাত্রটি আগুন থেকে আগত শক্তি শোষণ করতে থাকে এবং পার্শ্ববর্তী অণুগুলোর মাঝে তা ছড়িয়ে পড়ে।

Also read :আমরা হাই তুলি কেন | হাই তোলার উপকারিতা

অন্যদিকে, কাঠের টুকরাতে সেই শক্তিশালী বন্ধনের অভাব রয়েছে, তাই এটি শিখা থেকে শক্তি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ অল্প শক্তি শোষণেই এর রাসায়নিক বন্ধন গুলো ভেংগে যেতে থাকে। শক্তি শোষণের পরিবর্তে, কাঠ আগুনে পুড়ে শক্তি ছেড়ে দেয়।  কিন্তু পাত্রের ধাতুটির সেই শক্তি শোষণ করার এবং এটিকে ছড়িয়ে দেওয়া বা বিকিরণ করার ক্ষমতা রয়েছে, যার কারণে পাত্রটি স্পর্শ করলে গরম অনুভব হবে।

তাপ আরও ভাল শোষণ করতে পারলে কাঠকেও আগুন ধরা থেকে আটকানো সম্ভব। যেমন যদি পানি ভর্তি কাগজের একটি কাপ আগুনের শিখায় রাখা হয়, তাহলে কাপটি জ্বলবে না।  কারণ কাপের জল তাপ শোষণ করতে পারে, এতে শিখার তাপ থেকে নির্গত শক্তি কাগজটিতে আগুন ধরাবে না।

তবে কিছু ধাতু পুড়তে পারে। পটাসিয়াম এবং টাইটানিয়াম সহ এই ধরনের "দাহ্য ধাতু" আতশবাজি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। আতশবাজিতে থাকা ধাতুগুলি পাউডার আকারে থাকে, যা তাপ এবং অক্সিজেনের সাথে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া করতে পারে। যখন এই ধাতুগুলি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করার জন্য পর্যাপ্ত তাপের সংস্পর্শে আসে, তখন নির্গত শক্তির পরিমাণ তাদের বিভিন্ন রঙের শিখায় পুড়িয়ে দেয়।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা