• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ক্রিকেটাররা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২০  

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকাই লকডাউন করা হয়েছে। মানুষকে ঘরবন্দি থাকতে প্রচার অব্যাহত রেখেছে সরকার। এর পরও জনস্রোত থামছে না। তাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। জাতীয় দলের তিন ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব, নাজমুল হোসেন অপু ও রনি তালুকদার নারায়ণগঞ্জের ছেলে। পরিবার নিয়ে নিজেদের জেলায় থাকেন তারা। এই ক্রিকেটাররা জানালেন, ভীতি আর উদ্বেগ নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। গতকাল ফোনে তারা জানান, করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার কঠিন এক চ্যালেঞ্জ দেখছেন তারা।

অপুর বাড়ি নদীর ওপারে ফরাজীকান্দা এলাকায়। চাচাতো ভাই আরেক ক্রিকেটার তাইবুর পারভেজকে নিয়ে নিজেদের এলাকা সুরক্ষিত রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন তারা। বাঁহাতি এ স্পিনার জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাহায্যে ২০ দিন ধরে ফরাজীকান্দায় লোকজনের চলাচল সীমিত রেখেছেন। যে কারণে নিজেদের এলাকাকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসমুক্ত মনে করছেন অপু, 'এলাকার ছেলেপেলে নিয়ে লোকজনের চলাচল সীমিত করে দিয়েছিলাম। যাতে বাইরের লোকজন এলাকায় না আসতে পারে। মসজিদে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রেখেছি, কেউ বাইরে থেকে এলে তাকে স্প্রে করে ঢুকতে দেওয়া হতো। রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি ২০ দিন আগে। সে কারণে আমাদের এলাকা এখন পর্যন্ত ভালো আছে। তবুও ভয়ে, কখন কী হয়ে যায়। জানি না সবাই মিলে এই কঠিন সময় পার করতে পারব কিনা।'
অপুরা শুধু করোনাভাইরাস ঠেকাতেই ব্যস্ত নেই। এলাকার মানুষের পাশেও আছেন তারা, 'যথাসম্ভব এলাকার মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। নারায়ণগঞ্জ পুরোটাই বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা এই জেলায় বেশি। নারায়ণগঞ্জে রনি আছে, শাহাদাত আছে। ওরা বাড়িতে নিরাপদেই আছে। আমি আর তৈবুর পারভেজ পাশাপাশি থাকি। ও আমার চাচাতো ভাই। আমরা দু'জন উদ্যোগ নিয়ে মাস্ক বানিয়ে সবাইকে দিচ্ছি, যাতে কেউ বলতে না পারে ওগুলো নেই।'
রনি তালুকদার থাকেন জেলা শহরে। তার আশপাশেই চিহ্নিত হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। সবচেয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ক্রিকেটার এখন তিনি। নিজেদের নিরাপদ রাখতে বাড়ি থেকে বের হওয়া এবং প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছেন টপঅর্ডার এ ব্যাটসম্যান। রনি নিজের মুখেই পরিস্থিতির বর্ণনা দিলেন, 'নারায়ণগঞ্জ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। লকডাউনের ভেতরে আছি। সামনে কী হবে কেউ জানে না। খুব ভয়ের মধ্যে দিন যাপন করছি। আমাদের আশপাশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভয় হচ্ছে। বাড়ির দরজা বন্ধ, কেউ ঢুকতে পারবে না, বেরোতেও পারবে না।'
পেসার শাহাদাত হোসেনের বাড়ি একটু গ্রামের দিকে হলেও নিজেদের নিরাপদ দাবি করতে পারছেন না। ঘরবন্দি থাকলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তারও কম নয়, 'বাড়ি থেকে বের হই না। পরিবার নিয়ে এখন পর্যন্ত ভালো আছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না। জানি না আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পারব কিনা। আমাদের নারায়ণগঞ্জের মানুষের খুব খারাপ অবস্থা। বেঁচে থাকতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে এই জেলার মানুষকে। দোয়া করবেন যেন পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকি। আর মরে গেলে তো খবর পাবেনই।'
কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে এই তিন ক্রিকেটারই জানালেন, শিল্পনগরী হওয়াতেই নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। পরিযায়ী শ্রমিকের মাধ্যমে সেটা হয়েছে বলেই ধারণা তাদের। অপুর মতে, 'বাইরে থেকে প্রতিদিন শ্রমিক আসে এবং কাজ করে বাড়ি ফেরে। মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুর ও আশপাশের আরও কয়েকটি জেলার লোকজন অস্থায়ী শ্রমজীবী (পরিযায়ী শ্রমিক)। তারা লঞ্চে করে আসে এবং ফিরে যায়। এটাই কাল হয়েছে।'
এই কঠিন সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে শ্রমিকদের পালিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় বিপদ দেখছেন তারা। রনি যেমন বললেন, 'লোকজন যে যেভাবে পারছে পালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতজনকে ঠেকাবে। এই লোকগুলো সারাদেশে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।' দেশের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত মানুষকে এলাকা না ছাড়ার অনুরোধ দেশের তিন ক্রিকেটারের।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা