• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২০  

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধের অন্যতম উপায় তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জোরদার করতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর ফারস হোটেলে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলোচনা সভায় এ দাবি জানান বক্তারা। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাবো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আলোচনা সভাটির আয়োজন করে।

সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগের পিছনে দায়ী হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগ। আর এসব মৃত্যুর ২২ ভাগই অকালমৃত্যু। অসংক্রামক রোগের পিছনে অন্যতম কারণ তামাক ব্যবহার।

অধ্যাপক সোহেল রেজা আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। পাশাপাশি এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতায় ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার মাধ্যমে এই অকালমৃত্যু ও আর্থিক ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সভায় বিদ্যমান তমাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল কুদ্দুস।

তিনি বলেন, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে গণপরিবহন ও রেস্তোরাঁগুলোয় ক্ষেত্রবিশেষে ধূমপানের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে করোনাকালে তা জনসাধারণকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে।

রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সাথে অনেকাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমান আইনে দোকানে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়নি। এই সুযোগে প্যাকেট সাজিয়ে রেখে তা বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য খোলা বিক্রি নিষিদ্ধ নয়। এর ফলে শিশু-কিশোররা চাইলেই তামাকদ্রব্যে আসক্ত হতে পারে। তাছাড়া বিদ্যমান আইনে তামাক কোম্পানির সিএসআর নিষিদ্ধ না হওয়ায় এর সুযোগে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে কোম্পানিগুলো।

তিনি জানান, কিশোর-তরুণদের জন্য নতুন হুমকি ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। আবার সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের ৫০ শতাংশ জুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করা হলেও, মোড়কের আকার নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ক্ষুদ্র আকারের মোড়কে সচিত্র সতর্কবার্তা সেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। এসব দিক বিবেচনায় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটিকে সংশোধন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা উচিৎ।

এ সময় সভায় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা আইনটি সংশোধনের পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যতদ্রুত সম্ভব আইনটি সংশোধন করা দরকার। এজন্য গণমাধ্যমকর্মীরা সহায়ক ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে একাত্তর টিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক মনির হোসেন লিটন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিবেদক নুরুল ইসলাম হাসিব, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, দৈনিক নয়া দিগন্তের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হামিম-উল-কবির, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের গ্রান্টস ম্যানেজার আব্দুস সালাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পরামর্শক শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা